টুঙ্গিপাড়া: ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল

টুঙ্গিপাড়া: ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল
প্রকাশ : ১২ মে ২০১৬, ১২:২৪:৫১
টুঙ্গিপাড়া: ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল
ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন
প্রিন্ট অ-অ+
“বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর অনেক দিন চলে গিয়েছিল, দেশের ভিতরে কোথায় প্রকাশ্যে কেউ তাঁর নাম শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সঙ্গে উচ্চারণ করতে পাছিলাম না। এ ব্যাপারে সামরিক শাসকদের কোনো বিধিনিষেধ আরোপিত না থাকলেও তাদের আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেওয়া অলিখিত বিধিনিষেধ দেশের মানুষের মধ্যে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছিল।” 
 
কবিবর নির্মলেন্দু গুণের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর আদর্শিক পরিবর্তনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর নামনিশানা মুছে ফেলার সম্পূর্ণ কার্যক্রমই গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু একবার যখন শুরু হলো তখন ‘বুকের মধ্যে চেপে-বসা একটি পাথর অপসারিত হয়’। ‘বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু চর্চা’ এর হিসেবে বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে শুরু করে তাঁকে নিয়ে লেখা গ্রন্থের সংখ্যা এক হাজারের ওপরে। বিভিন্ন আঙ্গিকে, বিভিন্ন ভাবে গল্প, উপন্যাস প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া, নাটক, কথিকা, চলচ্চিত্র, জীবনী, আত্মজীবনী, স্মৃতিচারণ, ইতিহাস গ্রন্থ, স্মারক গ্রন্থ প্রভৃতি প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে ৩১ টি প্রবন্ধ, ৪ টি গল্প, ৩৫ টি কবিতা, ১ টি কথিকা, ১টি প্রচারপত্র, জীবন পরিচয়, ২৮ টি আলোকচিত্র (বঙ্গবন্ধু) এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনার বিবরণ রয়েছে ‘টুঙ্গিপাড়া’ গ্রন্থটিতে। বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থানকে প্রতীকী হিসেবে নামকরণের জন্য গ্রহণ করলেও মূলত এটি বঙ্গবন্ধু স্মারক গ্রন্থ।
 
গ্রন্থের পুস্তানিতে ছাপা হয়েছে ১৩ জুন ১৯৬৯ সালে ‘হাচু মণি’ সম্বোধনে জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা বঙ্গবন্ধুর ১৭ লাইনের একটি হাতে লেখা চিঠি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী এবং এর পরে রয়েছে সম্পাদকীয় কৈফিয়ত ও একটি বিস্তারিত সূচিপত্র। তবে মূল গ্রন্থটি শুরু হয়েছে ‘শেখ মুজিব, আমার পিতা’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক ইতিহাস বর্ণনার মধ্য দিয়ে। টুঙ্গিপাড়ার ভূগোল, প্রকৃতি, পূর্বপুরুষদের পরিচয় তুলে ধরে তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার বর্ণনা দিয়েছেন নিজস্ব ভঙ্গিমায়। খেলাধুলা ও নানা দুরন্তপনার মধ্যে কিশোর মুজিবের হৃদয়ের কোমল দিকটি তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘ছোট্ট শালিক পাখির ছানা, ময়না পাখির ছানা ধরে তাদের কথা বলা ও শিস দেওয়া শেখাতেন।’ ধানমণ্ডি ৩২ নং বাড়িতে পায়রার ঘর এখনো বঙ্গবন্ধুর পশুপাখির প্রতি ভালোবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।  
 
জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া বক্তৃতায় বাঙালি জাতি ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কয়েকটি স্পষ্ট উচ্চারণ দেখতে পাওয়া যায়। “বাংলাদেশের মানুষ একটা জাতি, কারণ তারা একটা জাতি হতে চায়, অন্য কিছু নয়।... এই জাতিকে তৈরি করেছে তার অনমনীয় গর্ব, সুখে-দুঃখে আট কোটি মানুষের সঙ্গে একই পরিচয় বহন করা, অন্য কিছু নয়, শুধু বাঙালি হওয়ার জেদ।” আর বাঙালি জাতির এই পরিচিতির কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি দেখেছেন বঙ্গবন্ধুকে। তবে উপমহাদেশের অপর দুই প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং এম কে গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান পর্যালোচনায় বলেন, “...উভয়েরই ছিল কোটি কোটি ভক্ত। এই সব জনতার কেউই গান্ধী বা জিন্নাহকে তাদের নিজেদের একজন বলে ভাবতে পারত না। এটাই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জিন্নাহ বা গান্ধীর পার্থক্য। বঙ্গবন্ধু জাতি আর তার নিজের মধ্যে একটা অবিভাজ্য মেলবন্ধন গড়ে তুলেছিলেন।” ‘বাঙালি জাতি: বঙ্গবন্ধু’ প্রবন্ধে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের এই কথাগুলি সংকলিত হয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া: ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল
অমলেন্দু দে ‘বঙ্গবন্ধু’ প্রবন্ধে ইতিহাস বলার ঢঙে বাঙালির জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের ধাপগুলি এবং এতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা বর্ণনা করেছেন। তিনি আমাদেরকে বাঙালি সংস্কৃতির সূত্র খোঁজ করার নির্দেশ করেছেন ১৯৫১ সালে চট্টগ্রামে পূর্ব পাকিস্তান সংস্কৃতি সম্মেলনে যে রূপরেখা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে। এতে বলা হয়েছে, “আউল, বাউল, জারি, কীর্তন, ইত্যাদি লোক-সংস্কৃতির যে ধারাটি সমগ্র বাঙালি জাতিকে সজীব ও সমৃদ্ধ করে, সেই প্রবাহটি যেভাবে আরও পরিপুষ্ট হয় নজরুল ও রবীন্দ্রনাথের অবদানে, তাই হলো প্রকৃত অর্থে বাঙালি সংস্কৃতির মূলধারা।”
 
বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার সেটির প্রকাশ দেখা যায় অমলেন্দু দে’র বর্ণনায়- ১৯৬১ সালে আওয়ামী লীগ ও কমিউনিস্ট পার্টির এক গোপন সভায় মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রস্তাব করতে চেয়েছিলেন। ’৭৫ পরবর্তী যে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের’ কথা বলে একটি গোষ্ঠী উচ্চকিত হয়েছে অমলেন্দু দে তাকে গণতন্ত্র না বলে ‘বন্দুকের গণতন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন।
 
ইতিহাসবিদ জাতীয় অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ ‘বঙ্গবন্ধু ও আমরা ১৫ আগস্টের ভাবনা’ প্রবন্ধে গবেষকের দৃষ্টিকোণ থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি এক্ষেত্রে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন- আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তারা চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। এটি কোন আদর্শের কথা নয়। এটি একটি বাস্তব কথা। বাঙালি জাতীয়বাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সংযোগ সূত্র অনুসন্ধানে তিনি বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো, তিনি আমাদের বাঙালি জাতিসত্তাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।... এই ভূখণ্ড যেটি পাকিস্তান সৃষ্টির পর ‘পূর্ব বাংলা’ এবং ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামে পরিচিত ছিল, সেটিকে ‘বাংলাদেশ’ বলে ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব- মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই জাঁদরেল পাকিস্তানি সমরনায়কের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে।” এভাবে বাংলাদেশ নামকরণ, জয় বাংলা ধ্বনি, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গান প্রভৃতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাঙালির এক স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি করে দেন। আর এর চূড়ান্ত পরিণতিতে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এবং সর্বশেষ স্বাধীনতার ঘোষণা ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন...’ এসব কিছুর ব্যাখ্যা আমরা পাই অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহ্মদের প্রবন্ধে। এখানে আরও ইঙ্গিত করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে যে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলেন সেই বাংলাদেশে পঁচাত্তর পরবর্তী কিভাবে ধর্মসহ সকল ক্ষেত্রে বিভেদের রাজনীতি শুরু হয়ে সংবিধানসহ সবকিছুতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। অধ্যাপক আহ্মদ এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য জাতিকে আবারও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্যবদ্ধের যে চেতনা অর্জন করেছিল বাঙালি সেটিকে উজ্জীবিত করার কথা বলেছেন।
 
শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ‘বঙ্গবন্ধু: মৃত্যুদিনের ভাবনা’ এই দীর্ঘ প্রবন্ধে রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু- এ দুটি পর্যায়ে বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক অগ্রজ একে ফজলুল হক, তমিজুদ্দীন, আবুল হাশিম, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, আতাউর রহমান খান প্রত্যেককে তিনি খুব কাছে থেকে অবলোকন করেছেন। সিদ্দিকীর মতে, ষাটের দশকেই (১৯৬৩) সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু হলো এবং প্রায় অনিবার্যভাবেই তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করলেন শেখ মুজিব। সম্পূর্ণ দক্ষতা এবং যোগ্যতার সঙ্গেই তিনি আওয়ামী লীগকে পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত করে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এতটা সংগঠিত করেন যে এ দলের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। আর রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণে তিনি একজন গবেষকের ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। রাজনৈতিক বিরোধীরা যে বিষয়গুলি পুনঃপুন উপস্থাপন করে যেমন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর শারীরিক অনুপস্থিতির কারণে তাঁর ভূমিকাকে খাটো করে দেখা, সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে রূদ্ধ করা, তাঁর শাসনামলে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিস্তার প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও ব্যাখ্যা করেছেন। তবে এক্ষেত্রে সিদ্দিকীর সাহসী উচ্চারণ- প্রতিকূল অবস্থার চাপে তিনি একদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন, তাঁর উদ্দেশ্যেও মধ্যে কোন দোষ ছিল না, এই যুক্তিতে আমি বাকশাল-ব্যবস্থার প্রতি এমনকি শর্তাধীন সমর্থনও জানাব না।
 
প্রাবন্ধিক, সমালোচক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ‘শেখ মুজিবের অঙ্গীকার’ প্রবন্ধে স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুর কার্যক্রমের সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। জনগণের আপনজন শেখ মুজিব কিভাবে জনগণ থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিলেন, কারা এই দেয়াল তৈরি করছিল, সপরিবারে জীবনদান যে এরই অংশ সেগুলি তিনি খুব স্পষ্ট করে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর রাষ্ট্র তার আগের চরিত্র ফিরে পেতে শুরু করল। বলা বাহুল্য, এ চরিত্র মিত্রের নয়, শত্রুরই। কিন্তু তিনি চিনতে ভুল করলেন। শত্রুকে শত্রু বলে চিনলেন না।” আজ অনেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর খুনিরাও মুক্তিযোদ্ধা ছিল। কিন্তু তাদের জন্য চৌধুরীর সোজা-সরল বক্তব্য, “যুদ্ধে যোগ দিলেই মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে মুক্তির আদর্শে বিশ্বাসী হতে হয়। মুক্তিযুদ্ধে সবাই যে চেতনার কারণে গেছে তা নয়, কেউ কেউ গেছে প্রাণ বাঁচাবার তাগিদে, কেউ গেছে মতলবে। তারাই মুক্তিযোদ্ধা যাদের মধ্যে ওই যুদ্ধের চেতনা ছিল।”
টুঙ্গিপাড়া: ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ‘বঙ্গবন্ধুকে অবলোকন’ প্রবন্ধে ইসলামিয়া কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক ভবতোষ দত্তের জবানীতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা দেখেছেন, “...কলেজ ইউনিয়ন নির্বাচনে দুটো দল হতো- একটা বাংলাভাষীর দল আর অন্যটা উর্দুভাষীর দল। উর্দুভাষীরা নিজেদের একটু বেশি কুলীন মনে করতেন। কিন্তু বাংলাভাষীদের সংখ্যা ছিল বেশি। এই বাংলাভাষী দলের নেতা ছিল একটি কৃশকায় ছেলে- নাম শেখ মুজিবুর রহমান।”
 
‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা’ প্রবন্ধে যতীন সরকার বলেছেন, মুজিবের ছিল খাঁটি, নির্ভেজাল, নিরঙ্কুশ ও আপসহীন স্বদেশপ্রেম। এই স্বদেশপ্রেম থেকেই তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটেছে। তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা তথা মুজিববাদ সম্পর্কে যতীন সরকার বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করেন- “...প্রগতিশীল বন্ধুবান্ধব বলেন শ্রেণীসংগ্রামের কথা। কিন্তু আমি বলি জাতীয়তাবাদের কথা। জিন্নাবাদ এদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িকতাবাদের বিষবাষ্প। তার জবাবে আমি বলি যার যার ধর্ম তার তার- এরই ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের কথা। শোষণহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সমাজতন্ত্র চাই। কিন্তু রক্তপাত ঘটিয়ে নয়- গণতান্ত্রিক পন্থায়... আমি মনে করি বাংলাদেশকেও অগ্রসর হতে হবে জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র এই চারটি মূল সূত্র ধরে, বাংলাদেশের নিজস্ব পথ ধরে।”
 
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ‘শেখ মুজিব কেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্রষ্টা এবং বাঙালি জাতির জনক’ প্রবন্ধে এ প্রশ্নের জবাব অনুসন্ধান করেছেন তত্ত্ব ও প্রায়োগিক উভয় দিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে। তিনি হেগেলের তত্ত্বের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, “শেখ মুজিব তার যুগের ইচ্ছা ও এষণাকে বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন। তাই তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও বাঙালি জাতির জনক।”
 
আলী যাকের ‘জয়তু বঙ্গবন্ধু’ রচনায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর ঘটনাবলী তুলে ধরেছেন। রশীদ হায়দার টুঙ্গিপাড়াকে পবিত্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন ‘আবার বাঙালির তীর্থভূমিতে’ নিবন্ধে। সেলিনা হোসেন বঙ্গবন্ধুর টুকরো কিছু স্মৃতির চিত্রায়ন করেছেন তাঁর অসাধারণ কথাশিল্পের মাধ্যমে ‘টুঙ্গিপাড়ায় আশ্চর্য বিকেল’ রচনাটিতে। 
 
মুহম্মদ জাফর ইকবাল বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন ‘একটি অসাধারণ আত্মজীবনী’ নিবন্ধে। তবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জাফর ইকবালের একান্ত ব্যক্তিগত একটি স্মৃতিচারণ পাঠকের হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়- “প্রথমবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমি স্ত্রীকে বলেছিলাম, চলো আমরা একটি টেলিভিশন কিনে আনি, এখন নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধুকে টেলিভিশনে দেখাবে। শুধু তাঁকে দেখার জন্য আমরা একটা টেলিভিশন কিনে এনেছিলাম।” এর সঙ্গে যদি আমাদের স্মরণে থাকে সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সেই সাক্ষাৎকার যেখানে ফ্রস্ট প্রশ্ন করেছিলেন, “আপনি যখন দেখলেন পাকিস্তান কারাগারে আপনার কবর খোঁড়া হচ্ছে তখন আপনার কার কথা মনে হয়েছে? বঙ্গবন্ধুর শান্ত উত্তর- ‘আমি প্রথমে আমার দেশের কথা ভেবেছিলাম। আমার প্রিয়জনদের চেয়েও আমার ভালবাসা দেশের জন্য বেশি। আপনি তো দেখেছেন, দেশের মানুষ আমাকে কত গভীরভাবে ভালবাসে।’
 
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ‘শেখ মুজিব: বাঙালির উপনিবেশমুক্তির রূপকার’-এ ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর দুটি ভাষণ সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠে এবং ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্লেষণ করেছেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহিত উল আলম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: একটি পুনর্মূল্যায়ন’ প্রবন্ধে পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড এবং পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের শাসকচক্র সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু সাহসী উচ্চারণ করেছেন। দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, সামরিক চক্র, স্বাধীনতা বিরোধীদের সহায়তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোণঠাসা করা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধ্বংস এবং পাকিস্তানের হুবহু অনুকরণ করে সেই আদর্শ প্রচলন করা প্রভৃতি সাবলীলভাবে বর্ণনা করেছেন।
 
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মলেন্দু গুণের কবিতার আলোচনা করেছেন প্রফেসর এ এম এম শামসুর রহমান। গুণ নিজেও আলোচনা করেছেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁকে নিয়ে রচিত প্রথম কবিতার। মো. নজরুল ইসলাম ‘বঙ্গবন্ধুর আর্থসামাজিক উন্নয়ন দর্শন’, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ‘মুজিব: বাংলার আগামী’, জাকির তালুকদার ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি প্রশ্ন এবং নিজেরই খোঁজা উত্তর’, রশিদুন্ নবী ‘মুক্তির ডাক: নজরুল ও বঙ্গবন্ধু’, সাহাবউদ্দিন বাদল ‘৭ই মার্চের ভাষণ: বিষয় বিশ্লেষণ’, রায়হানা আক্তার ‘বঙ্গবন্ধু অ্যা ট্রাজিক হিরো’, উম্মে ফারহানা ‘শেখের বাড়ি’, রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র ‘ফিরে দেখা: ১৯৪৮-১৯৭১’, আলিফ লায়লা ‘একাত্তরের ৭ মার্চ ও বাংলাদেশ’, মাসুম হাওলাদার ‘বঙ্গবন্ধু: শৈশবভাবনা ও একান্ত আত্ম-উপলব্ধি’, সঞ্জয় কুমার মুখার্জী ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’, মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম ‘বঙ্গবন্ধু-গবেষণা’, সুশান্ত সরকার ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ভাবনা’, শেখ মেহেদী হাসান ‘বঙ্গবন্ধু, বেঙ্গলিনেস অ্যান্ড বেঙ্গলি আইডেন্টিটি’, সিদ্ধার্থ দে ‘হৃদয়ে তাঁর প্রতিচ্ছবি’ প্রবন্ধগুলি বিষয়ভিত্তিক বঙ্গবন্ধুকে জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
 
গ্রন্থটিতে ছোটগল্প আছে ৪টি। আবুল ফজলের ‘ইতিহাসের কণ্ঠস্বর’ বঙ্গবন্ধুর হত্যা-দাফন কেন্দ্রিক তথ্যভিত্তিক ঐতিহাসিক ছোটগল্প। হুমায়ুন আজাদ বঙ্গবন্ধুর জীবনকে ইঙ্গিত করে যাদুকরের চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে রচনা করেছেন ‘যাদুকরের মৃত্যু’ গল্পটি। ‘নেতা যে রাতে নিহত হলেন’ গল্পটি ইমদাদুল হক মিলনের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে উপজীব্য করে রচিত ছোটগল্প। আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির লিখেছেন ‘মরণচাঁদ: প্যারাডাইস রিগেইনড’ গল্পটি।
 
টুঙ্গিপাড়া গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিংবা বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত ৩৩ জন কবির ৩৫ টি কবিতা (অন্নদাশঙ্কর রায়ের ২ টি এবং নির্মলেন্দু গুণের ২ টি) সংকলিত হয়েছে। অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘জয় মুজিবুর রহমান’ কবিতাটি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতাগুলির মধ্যে ক্লাসিক কবিতায় পরিণত হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তাঁর রচিত কবিতা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে’ এ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে যেটি আসলে স্মরণের পরিবর্তে তিনি ক্ষোভ উৎগীরণ করেছেন দেশবাসী সকলের প্রতি। তিনি বলেন,
জাতির জনক যিনি অতর্কিতে তাঁরেই নিধন।
নিধন সবংশে হলে সেই পাপ আরো গুরুতর,
সারা দেশ ভাগী হয় পিতৃঘাতী সে ঘোর পাপের
যদি দেয় সাধুবাদ, যদি করে অপরাধ ক্ষমা।
কর্মফল দিনে দিনে বর্ষে বর্ষে হয় এর জমা
একদা বর্ষণ বজ্ররূপে যে অভিশাপের।
 
কবি জসীম উদ্দীন উপমহাদেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু’ কবিতায়,
এই বাংলায় শুনেছি আমরা সকল করিয়া ত্যাগ
সন্ন্যাসী বেশে দেশ-বন্ধুর শান্ত মধুর ডাক।
শুনেছি আমরা গান্ধীর বাণী জীবন করিয়া দান।
মিলাতে পারেনি প্রেম-বন্ধনে হিন্দু-মুসলমান।
তারা যা পারেনি তুমি তা করেছ, ধর্মে ধর্মে আর
জাতিতে জাতিতে ভুলিয়াছে ভেদ সন্তান বাংলার।
 
‘বাংলাদেশে নিষিদ্ধ বঙ্গবন্ধু’ এমন বিষাক্ত পরিবেশে বাঙালির হাজার বছরের লালিত ‘বিদ্রোহী’ ঐতিহ্যের চিত্রণ ঘটান নির্মলেন্দু গুণ তাঁর ‘আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি’ কবিতার মাধ্যমে। মূলত এ কবিতার মাধ্যমেই শুরু হয় দ্বিতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু চর্চা। কবিতায় তিনি যতই বলেন, ‘আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি, আমি আমার ভালবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।’ কিন্তু ‘আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি। আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।’- এ উচ্চারণের মাধ্যমে তিনি বঙ্গবন্ধু-উত্তর বাংলাদেশে নীরবে বঙ্গবন্ধু-বিপ্লব ঘটিয়েছেন। 
 
এভাবে স্বনামখ্যাত কবি আবুল হোসেন, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, সৈয়দ শামসুল হক, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, বেলাল চৌধুরী, শহীদ কাদরী, রফিক আজাদ, আসাদ চৌধুরী, রবিউল হুসাইন, মহাদেব সাহার কবিতা রয়েছে। স্থান পেয়েছে হাবিবুল্লাহ সিরাজী, অসীম সাহা, কামাল চৌধুরী, মুহম্মদ সামাদ, আসাদ মান্নান, শামসুল ফয়েজ, খালেদ হোসাইন, শামীমুল হক শামীম, মাহবুব বোরহান, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, মাসুম মোকাররম, দ্রাবিড় সৈকত, ভুবন সরকার, সৈয়দ মামুন রেজা, আল্ জাবির, মোঃ মাসুদ চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম এবং ফারজানা স্বর্ণপ্রভার কবিতা।
 
টুঙ্গিপাড়া গ্রন্থে সংকলিত একমাত্র কথিকা ‘মুজিবের শেষ দিন’ লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা। স্থান পেয়েছে ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষ করে জাতীয় ছাত্রলীগের ১২ আগস্ট ১৯৭৫ সালের প্রচারপত্র,
“জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন উপলক্ষে আমাদের শপথ
অর্জিত শিক্ষা দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত করব
স্বাগত বঙ্গবন্ধু, জয়তু বঙ্গবন্ধু”।
 
‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবন পরিচয়’ নামে ১৯২০-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জীবনকাল ঘটনাপঞ্জি আকারে তুলে ধরা হয়েছে। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর বংশলতিকা। বাল্যকাল, রাজনীতি, বন্দী, পরিবারজীবন সব মিলিয়ে ৩৮ টি আলোকচিত্র সংযোজিত হয়েছে গ্রন্থের ‘আলোকচিত্র (বঙ্গবন্ধু)’ অংশে। একেবারে শেষে ‘শেষের সুর’ ভাগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা ‘ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড’ শিরোনামে সংকলিত হয়েছে।
 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের প্রায় সকল দিকই উঠে এসেছে ‘টুঙ্গিপাড়া’ গ্রন্থে। বিষয়ের ভিন্নতা বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে। মাত্র ৩৩৫ পৃষ্ঠায় এক মলাটের ভিতরে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরা প্রায় অসম্ভব। সেই অসাধ্য সাধনে সফলতা দাবি করতে পারেন সম্পাদক এবং প্রকাশক তথা বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের সম্পাদনার ক্ষেত্রে কয়েকটি দিক পরিকল্পনায় থাকলে গ্রন্থের পাঠক এবং যারা আরো বেশি জানতে চান তাঁদের কিছুটা সহায়ক হতো। যেমন, যে কোন সম্পাদিত বা সংকলন গ্রন্থের ভূমিকা বা সম্পাদকের বক্তব্য সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রন্থের লেখক ও লেখাগুলি সম্পর্কে ধারণা, পেছনের কথা সম্পর্কে ধারণা এখানেও রয়েছে তবে সেটি বইটি সম্পর্কে ধারণা পেতে সহায়তা করে না। সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো লেখাগুলি কবে, কখন, কোথায় প্রকাশিত হয়েছে, কোথায় থেকে সংকলন করা হয়েছে একটি দু’টি ছাড়া সেগুলির উল্লেখ না থাকা। এমনকি কপিরাইট আইনও একে সমর্থন করে না। লেখকের অনুমতি নিলেও স্বীকৃতি থাকা প্রয়োজন। কোনো কোনো লেখক প্রয়াত হয়েছেন। কোনটি এই গ্রন্থের উদ্দেশ্যে লেখা তাও স্পষ্ট হতো এর থেকে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী বছরগুলিতে লেখা এবং ১৯৯৬ পরবর্তী সময়ে লেখার মধ্যে মৌলগত পার্থক্য রয়েছে। বঙ্গবন্ধু চর্চা ও অধ্যয়নের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত হতে চায় তাদের কাছে স্পষ্ট করার প্রয়োজনীয়তা সম্পাদকের উপলব্ধিতে থাকা দরকার। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশিত সংকলন ‘জনকের মুখ’ গ্রন্থের পুস্তক আলোচনায়ও সম্পাদিত ও সংকলিত গ্রন্থের এ দুর্বলতার দিকটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া কোনো কোনো লেখার শেষে লেখকের এক বাক্যে পরিচিতি রয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নেই। একই গ্রন্থের সম্পাদকীয় নীতি একই ধরনের হলে পাঠককে অস্বস্তিতে পড়তে হয় না। দুয়েকটি জায়গায় বানান ভুলের জন্য অর্থের ভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে ছোটখাটো বিষয়গুলি একদিকে রেখে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় চমৎকার প্রচ্ছদ, কাভার, উন্নত কাগজ, ঝকঝকে ছাপা বইকে আকর্ষণীয় করেছে।
 
প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা ও গবেষণায় বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতি আমাদের দুর্বল দিক। এটি নিঃসন্দেহে জাতি হিসেবে পিছিয়ে পড়ার লক্ষণ। ‘বঙ্গবন্ধু-গবেষণা’ প্রবন্ধের সঙ্গে একই কণ্ঠে আমরাও বলি, “বঙ্গবন্ধু-গবেষণাকে নিতে হবে বাঙালির আত্মপরিচয়ের একটা প্রধান ইস্যু হিসেবে। কেননা তাঁর কীর্তির মধ্যে ছিল একটা সেক্যুলার জাতি গঠনের সংকল্প। বাঙালি জাতি আর বাঙালির জন্যে একটি সুন্দর রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা ছিল সেই সংকল্পের সর্বপ্রধান লক্ষ্য।... প্রত্যেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বাংলা একাডেমির মতো উচ্চতর গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু-গবেষণা সেল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাঁকে রাজনৈতিক ইস্যু করে নয়, বাঙালির অস্তিত্ব, বাঙালির কৃতিত্ব এবং বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ লক্ষ্য করেই এটা জাতীয় কর্তব্যের মধ্যে নিতে হবে।” পরিশেষে ‘টুঙ্গিপাড়া’ বইটির মতো মননশীল সংকলন গ্রন্থ এ ধরনের কাজে নিয়ত উৎসাহ যোগায়। 
 
বিবার্তা/জিয়া
 
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com