সার্ব কবি দ্রগান দ্রাগোইলভিচের কবিতা

সার্ব কবি দ্রগান দ্রাগোইলভিচের কবিতা
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০১৬, ১১:৪৬:১০
সার্ব কবি দ্রগান দ্রাগোইলভিচের কবিতা
মুহাম্মদ সামাদ
প্রিন্ট অ-অ+
দ্রগান দ্রাগোইলভিচ একালের সার্বিয়ার জনপ্রিয় কবি ও কথাকার, যার বইয়ের একাধিক সংস্করণ রয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা বিশের অধিক। বর্তমান সময়ের যুদ্ধবিরোধী কবিতার মধ্যে দ্রগানের মৃতের স্বদেশ (Deaths Homeland) খুব মর্মষ্পর্শী, উচ্চপ্রশংসিত ও ব্যাপক পঠিত কাব্যগ্রন্থ। 
 
অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, চীন, গ্রিস, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ পৃথিবীর পনেরটি দেশে তার কবিতা অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে। দেশে ও বিদেশে বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন দ্রগান। তিনি ইউরোপীয় কবিতা একাডেমি ও সার্বিয়ান পেন-এর সক্রিয় সদস্য; ইংরেজি থেকে সার্বিয়ান ভাষায় কবিতা অনুবাদ করেন। 
 
প্রায় পাঁচ বছর অস্ট্রেলিয়ায় সার্বিয়ার রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করায় দ্রগান দ্রাগোইলভিচ নিজ দেশে ‘রাষ্ট্রদূত কবি’ হিসেবে অভিহিত। কবিতাগুলো ইংরেজি অনুবাদের ভিত্তিতে বাংলায় তর্জমা করেছেন মুহাম্মদ সামাদ।
 
সোনার শস্যকণা
 
সময় আহার করে কাঠের চামচে।
আহার করে সে খুব দ্রুততার সাথে,
মনে হয় এক বছরের অতৃপ্তি
কপালে খোদাই করেছে বলিরেখা।
 
এঁটো ও অজীর্ণ হৃদপিণ্ডে ছুঁড়ে দিয়ে
এটা খায় ঘূর্ণিত ঘড়ির কাঁটা
আর ভুখা সূর্যোদয়।
 
মিষ্টি হেসে, একটা হাতায় ভরে
কিছু খাদ্য তুলে নিয়ে ঢেলে দেয়
আর চালুনি গলিয়ে ধুয়ে যায়
সোনার শস্যকণা বা কিছুই না।
 
যখন পুরনো প্রেম পায় নতুন যৌবন
ঘড়ি দেখতে দেখতে দৃষ্টি ডুবে যায় নিরাশায়
ধূসর জমিতে থাকে প্রতীক্ষায়
অনেক আগের ঋতু।
 
পাথরের সড়ক নম্বর:৬
 
বাড়ি ও সমাধিসৌধ নির্মাণের পাথর এখানে;
এখানে একটি ছেনী, একজন রাজমিস্ত্রী,
ভিত্তি স্থাপনের জন্যে একজন মূল কারুশিল্পী আছেন এখানে।
এখানে, মিলনকেন্দ্রে কারিগর, শিক্ষানবীশ ও একজন ছাত্র
পাথর কাটার কারখানা নির্মাণ করে।
খনি খুলে দেওয়া হয়েছে; কেউ মনে করতে পারে না–
আজ হলিক্রস বা অন্য কোনো সন্তের স্মরণ দিন কি না;
এটি সুন্দর পাথর, এরকম প্রচুর পাথর আছে,
আমাদের আর মায়েদের জন্যে তা যথেষ্ট।
 
এখানে পালিশ-করা পাথরে অক্ষর ঝকঝক করে
মৃত্যুদিনের এখনো এক মাস বাকি,
এবং একটা ছবি মিছেমিছি পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে
ছবির মানুষটির কোনোকিছু বলার সময় নেই।
 
আমাদের পাথরের বাড়িতে আমরা দৌড়ে যাই, খোঁজ করি
কিন্তু আমাদের নাম এখানে অজানা,
মাস দিন আর হাসিখুশিতে রঙিন বাড়িটিকে
তলেতলে পাহারায় রাখা;
পাথরের সিড়ি বেয়ে উপরে–
অচেনা কেউ উঠে আসে।
 
পাথরের স্বচ্ছ মুখের ওপর ধাপে ধাপে
পদচিহ্নগুলো আমাদের কেউ চিনতে পারে না।
 
শিশুদের দিকে অনন্তের ঢেউ
 
ক্যাঁচক্যাঁচ করে সময়ের চাকা
উঠে পড় আর চোখ খোলা রাখ জানালায়
একটি আয়না হাতে
অবিনশ্বরতা আমাদের বাড়ি অতিক্রম করে যায়
অনন্তের জালে বন্দি
তোমার হৃদস্পন্দন প্রতিধ্বনিত হয়।
 
উঠে পড় আর চোখ খোলা রাখ জানালায়
কুয়াশার মুখোমুখি
দেওয়াল বেয়ে শিশুরা ওপরে ওঠে
সেখানে ছায়ায় চাঁদ চুপিচুপি কাঁদে
উঠে পড়, দেখ, সবকিছু
অবশ্যই ঠিকঠাক আছে।
 
শিশুদের দিকে অনন্তের ঢেউ
তাদের আদর কর ও নীরব থাক।
স্মরণ করতে দাও তাদের নিজের স্বপ্নগুলো–
তুমি যা থেকে বঞ্চিত ছিলে।
 
ভাগ্যের বোন
 
তুমি জানালার পাশে
যখন দাঁড়াও–
চোখ রাখ নক্ষত্রের দিকে।
যে জন হিল্লোলিত হয় সে তোমারই
নিয়তির বোন,
তাকে অন্তর দেখাও,
সাধ শৈশবের স্বপ্ন
যা তোমার আশার ছলনা;
সাধ তাকে জীবনের সব কিছু
যা আর পাবে না তুমি;
 
তাকে খুশি হয়ে বাড়ি যেতে দাও
ছোট নীল ফুলের পাতায় জমে থাকা
ভোরের শিশিরে পূত তোমার আত্মাকে
কৃপা পেতে দাও;
পাহাড়ের উপরে,
যেখানে এই মন কিম্বা অশ্রুকণা
পৌঁছুতে পারে না।
সেই আগুনকে আমি মরে যেতে দেব না
 
দরিদ্রজনেরা সূর্যকে কবর দেয় বিরান ভূমিতে।
আমাদের হাত সেঁকব কোথায়?
 
আমার আত্মার সাথে, কথার ওপর ভর করে তোমার সামনে
আমি মেলে ধরি সম্ভাবনা, যা তুমি ভাবতেও পার না।
 
বরফ-শীতল বায়ু ঘাই মারে।
মুখ ফেরাও আমার দিকে।
 
এক মৃত চাঁদ ঘিরে উষ্ণভাব। জ্যোতির্ময়ী নক্ষত্রটি
আমার মা। আমাদের খোশগল্প মনে রেখ।
 
গরীবেরা মরণের গান গায়। আমাদের বন্ধু
চলে যায় খোয়া বিছানো রাস্তায়।
 
আমার এ হাত রাত কাটায় কোথায়?
আকাশের রঙধনু লুকিয়ে ফেলেছে কারা?
 
সুদূর অনাদিকাল থেকে আমি তোমার পাশেই আছি।
তোমার হাতের ওপরে আমার হাত তবে উড়ে এসে জুড়ে বসা কেউ?
 
যায় আসে না কিছুই। তবু, সেই আগুনকে আমি
মরে যেতে দেব না, আমরা যাকে ইতিমধ্যে
দূরবর্তী নাম ধরে ডাকি।
 
একাকী
 
কণ্ঠধ্বনি ম্লান হয়ে যায়
অনেক দূরের একটি বাড়ির চতুর্দিকে।
একটি মিনতিভরা কৈফিয়ত
চাপা পড়ে স্বচ্ছ শূণ্যতায়।
 
কার ডাক শুনি?
আমাদের চারপাশের কাচের জানালায়
তার কণ্ঠস্বর ম্লান হয়ে যায়–
যেখানে সময় গিলে খায় মন।
 
নিঃসঙ্গ আকাশের তলদেশ ছাড়া
আমাদের যাওয়ার আর কোনোই জায়গা নেই।
 
একাকী
অসার সময়ের মত এখনো আমরা
পরিপক্ক হয়ে উঠতে পারিনি।
 
পানির ওপরের কথারা
 
পানির ওপর কথারা ভাসতে থাকে!
স্লেজগাড়ির ঘণ্টাধ্বনির মতন অরুণোদয়।
কথা নিরবতা। কথা ভোরের নক্ষত্র।
 
চলো, আমরা ঝর্নায় যাই। চলো, আমরা পুকুরে
যাই, যেখানে ধোপানী ধুয়ে দেয় স্বর্গের শিশির আর
সুখী মানুষদের অন্তর।
 
পৃথিবীর সব রহস্য আমরা চুরি করে নেব
স্রষ্টা সর্বশক্তিমান, এই সবকিছু আমাদের।
 
কামনারা যেন সূর্যোদয় আর সংগীত।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে ঊর্ধে তুলে ধরে মাত্র একটি নক্ষত্র।
 
আমি তোমাদের বলি: বিষণ্নতা অপরিমীম,
সত্য উচ্চারিত হয়– তখন আমরা বহু দূরে।
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com