গত বছর থেকে আমাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে;
শুধু আমার আত্মা এখন পৃথিবীতে বিচরণ করছে।
তবে মানুষরূপী সেই আত্মাকে
অনেকেই ‘মানুষ’ ভেবে ভুল করে।
আমাকে যেদিন মৃত ঘোষণা করা হয়
ঠিক তার আগে একটা বিজ্ঞাপণ ছাপা হয়েছিলো
‘আমি খুন হতে চাই
খুনি আবশ্যক’!
সেখানে ছোট হরফে লেখা-সকাল, বিকেল,
সন্ধ্যা, মাঝরাত কিংবা ভোরে
আমি খুন হতে চাই।
অবশেষে আমি খুনি পেলাম।
যেদিন আমি প্রথম খুন হলাম-
আমার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে পরিচিতরা
তারা দেখছে, নিস্তব্ধ নির্জনতার মাঝে আমি শুয়ে।
আমি দেখছি সবাইকে, আমাকে দেখছে সবাই আগ্রহভরে
আমি সবার কথা শুনছি।
অবশেষে আমি খুন হলাম।
প্রথম মৃত্যুর উপলব্ধিটা খুব বেদনাদায়ক হলো না,
ভেবেছিলাম সারা শরীর রক্তে ভিজে যাবে
চোখদুটো খুবলে তুলে আনবে ধারালো ছুরি দিয়ে
হাতের আঙুলগুলো কুচিকুচি করে কেটে নেবে।
কই, সারা শরীরে কতোজন তন্ন তন্ন করে খুঁজলো
কিন্তু কোথাও রক্তের কোনো দেখা নেই!
অথচ আমার স্পষ্ট মনে আছে
যেদিন আমাকে খুন করা হলো
চকচকে-তীক্ষ্ণ ছুরি হাতে খুনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
চাহনি তার ভয়ঙ্কর।
আমি হতবাক হয়েছিলাম যখন দেখলাম
ওর হাত নয়, কাঁপছে ঠোটদুটো।
আমি কিছু বলার আগেই
পরিণত হলাম আত্মায়!
আমি নিথর, শুধু দেখছি আর শুনছি,
কফিন কাঁধে নিয়ে এগোনোর ঠিক আগে
পাশ থেকে কে একজন আমার লাশের উপর ছড়িয়ে
দিলো টকটকে লাল রক্তজবার পাপড়ি।
দেখতে পেলাম না, শুধু ঘ্রাণটা পেলাম
ততক্ষণে সাদা কাপড়টাই আমার টোখদুটো ঢেকে গেছে।
আমাকে নিয়ে দ্রুত পায়ে সবাই রওনা হয়েছে
ঘ্রাণটা ক্রমেই ম্রিয়মাণ হচ্ছে;
মনে পড়লো এটি সেই গন্ধ,
যখন আমাকে খুন করা হলো
তখন আমার সামনে ছিল।
গত বছর আমাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
বিবার্তা/মিলন/কাফী