একাদশ সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করল জাতীয় পার্টি। শনিবার বিকেলে সিলেট শহরের রেজিস্টারি মাঠে জাপার বিভাগীয় সমাবেশে আগাম নির্বাচনী প্রচারণার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
বিকেল ৫টা ১২ মিনিটে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সিলেটবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আরেকবার সুযোগ দিন, আমি আপনাদের সন্তান।
তিনি বলেন, সিলেট ছিল হাওড় ও পানির অঞ্চল। এখানে ছিল না, কোনো রাস্তাঘাট ও উন্নয়ন। আমি যখন ক্ষমতায় ছিলাম, এ ভাটি অঞ্চলকে উন্নয়নের অঞ্চল হিসেবে রূপ দিয়েছি। এখানে আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দর স্থাপন করছি। দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছি। এ এলাকাবাসীর দুঃখে-সুখে আমিই ছিলাম একমাত্র অভিভাবক।
জাপার চেয়ারম্যান বলেন, সিলেটের মানুষ আমাকে ৮ টি আসন উপহার দিয়েছে। সেদিন যদি তারা আমাকে সম্মানিত না করতেন তাহলে আমার ফাঁসি হত। সিলেটবাসী আমাকে ভোট দিয়ে জীবন রক্ষা করছেন।
এরশাদ বলেন, আমি আপনাদের কাছে আবেদন করছি আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সিলেটবাসী আমাকে আরেকবার সুযোগ দিবে।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি সকল নির্বাচনের আগে একটি নীতির মাধ্যমে শুভসূচনা করে। সেটি হল প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেটের পূণ্যভূমি সফর ও হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে আসছে। এবারও তাই করছি।
সরকারের সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, আমি এখন খবরের কাগজ পড়ি না। দেশে প্রতিদিন লাশের মিছিল বাড়ছে। ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শত শত নারী। কোথাও কোনো বিচার হচ্ছে না।
প্রতিদিন হিসেব ছাড়া মানুষ মরছে উল্লেখ করে জাপার চেয়ারম্যান বলেন, আমার সরকারের সময় মিলন ও নূর হোসেন ছাড়া আর একটিও হত্যাকাণ্ড হয়নি। এখন প্রতিদিন গুম-খুন হচ্ছে এসব গুম-খুনের বিষয় পুলিশ ও র্যাব জানে না। কয়েকদিন পরে তাদের লাশ পাওয়া যায় ডোবায়।
তিনি বলেন, যেসব মানুষ গুম-খুন হচ্ছে তাদের মা-বাবা-স্ত্রী-সন্তানের কান্নার পানিতে ভেসে যাবে এ দেশ। কেউ তাদের দুঃখ ও মনের ব্যথা বুঝতেছে না।
এরশাদ অভিযোগ করে বলেন, নির্বিচারে মানুষ হত্যা চলছে। বেকারত্ব এখন দেশের বড় অভিশাপ। এ দেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি বিএনপি শুরু করেছে। আজ তাদের অবস্থান কোথায়?
দেশের নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তনের কথা জানিয়ে এরশাদ বলেন, আগামীতে জাপা ক্ষমতায় আসলে দেশে প্রাদৈশিক সরকার ব্যবস্থা চালু করা হবে।
এর আগে সিলেট বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। এদিকে এরশাদের সমাবেশকে ঘিরে সিলেট নগরী স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে। দীর্ঘদিন পর এরশাদের বক্তব্য শোনার জন্য সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সাধারণ মানুষের ঢল নামে।
অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিরোধী দলীয় নেতা ও জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারমান বেগম রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়া উদ্দিন বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সালমা ইসলাম এমপি, সাইদুর রহমান টেপা, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, তাজ রহমান ,ইয়াহিয়া চৌধুরী এমপি, সেলিম উদ্দিন এমপি, মুনিম চৌধুরী বাবু এমপি, পীর ফজলুর রহমান এমপি প্রমুখ।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, এসএম ফয়সল চিশতি, মেজর অব. খালেদ আখতার, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শামীম হায়দার, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, কাজী মামুনুর রশীদ, ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু, নুরুল ইসলাম নুরু, জহিরুল ইসলাম জহির, আলমগীর শিকদার লোটন, দিদারুল আলম দিদার, রওশন আরা মান্নান এমপি, হেনা খাঁন, যুগ্ম-মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, ইসহাক ভূঁইয়া, আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, ফখরুল আহসান শাহাজাদা, মনিরুল ইসলাম মিলন, মো. নোমান এমপি, নুরুল ইসলাম ওমর এমপি, আমির হোসেন ভুঁইয়া এমপি, বেলাল হোসেন, আবু সাঈদ স্বপন, অন্যন্যা হোসাইন মৌসুমী, একেএম আসরাফুজ্জামান খাঁন, সৈয়দ ইফতেখার আহসান, মিজানুর রহমান মিরু, শাহনাজ পারভীন প্রমুখ।
বিবার্তা/বিপ্লব/রয়েল