কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী ছিল সোহাগী জাহান তনু। শুধু ইতিহাস বিভাগ নয়, কলেজ ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখ ছিল তনু। কিন্তু মৃত্যু তাকে আজ সব কিছু থেকেই দূরে নিয়ে গেছে। আর কখনও কলেজ ক্যাম্পাসে পা রাখবে না তনু। কখনো হেসে কথা বলবে না ইতিহাস বিভাগের সহপাঠীদের সাথে। তনুর সহপাঠীদের কিছু স্মৃতি কথা বিবার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘তনুকে আমরা হাসি বলে ডাকতাম’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী সুমন বলেন, তনুকে আমরা ‘হাসি’ বলে ডাকতাম। কারণ সে সবসময় হাসতো। একটি স্মৃতি মনে পড়ে, কলেজের বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় তনু একক নৃত্যে অংশ নেয়। নৃত্য শেষে আমি মজা করে তাকে বলি, তোর নাচ ভাল হয়নি । অমনি সে আমাকে বলে ‘এক থাপ্পর দিমু। দেখবি আমি প্রথম হবোই।’ আসলেই সে প্রথম হয়। যা আজ আমাকে ভাবায়।
তনুর সহপাঠী সুমন বলেন, ২ মার্চ প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়। সে দিন তনুসহ আমরা অনেকেই কলেজের বটতলায় আড্ডা দেই। ওইসব আড্ডায় তনু সবার চেয়ে একুট বেশি দুষ্টমি করতো। আর সে একটু বেশি হাসতো। আর এই হাসি যেন তার মুখে সব সময় লেগেই থাকতো।
‘তনুকে সবাই এক নামে চিনতো’
তনুর সহপাঠী ফারজানা নিশাত বলেন, তনুর সাথে আমার তেমন গভীর সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু যখনই ক্যাম্পাসে বা বিভাগে তার সাথে আমার দেখা হতো, তখনই সে হাসি দিয়ে কেমন আছি তা জানতে চাইতো। বেশির ভাগ সময় সে তাই করত। ক্লাসের শেষে আমি বিভাগ থেকে বিতর্ক পরিষদের দিকে যেতাম, আর তনু থিয়েটারের কার্যালয়ের দিকে যেত। এই পথেই তনুর সাথে বেশি দেখা হত। কিন্তু এখন ভাবলে দুঃখ হয় তনুর সাথে আমার আর কোনো দিন দেখা হবে না! আমাকে সে বলবে না নিশাত কেমন আছ?
নিশাত আরো জানান, তনু সবসময় মিষ্টভাষী ছিল। তবে তাকে বেশি জানার সুযোগ হয়েছে গত মার্চ মাসে কলেজের বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার সময় কয়েকটি বিভাগে সে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। আমিও অংশ নেই। ড্রেসিংরুমে তার সাথে অনেক মজা করেছি। আসলে তনুকে ইতিহাস বিভাগের সবাই এক নামে চিনতো।
‘তনুর বির্তকের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল’
তনুর আরেক সহপাঠী কামরুল ইসলাম বলেন, গত বছর নভেম্বরে কলেজ বির্তক পরিষদের আয়োজনে ৬ষ্ঠ আন্তঃবিতর্ক উৎসবে ইতিহাস বিভাগের হয়ে তনুর বির্তক করার কথা ছিল। কিন্তু তার ভাল প্রস্তুতি না থাকায় সে অংশ নেয়নি। সে অংশগ্রহণ না করলেও সব সময় আমাদের উৎসাহ দিত। কারণ আমাদের ব্যাচে বিতর্ক কেউ ভাল পারতো না । আমরা সাহস পাচ্ছিলাম না। সে সবসময় আমাদের টিম গঠনে সহযোগিতা করেছিল।
কামরুল ইসলাম আরো বলেন, প্রথম বর্ষের টেস্ট পরীক্ষা একসাথে দিয়েছি। তার চলে যাওয়া আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি বিতর্ক পরিষদের সদস্য ও থিয়েটারের সদস্য। তনুর বিতর্কের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। তনুর বিতর্ক পরিষদের সদস্য হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হায়েনারা হতে দিল না। আজ যখন বিতর্ক করতে যাই, ক্লাস করি, মাঝে মাঝে মনে হয় সে পাশে আছে। তাকে ভীষণ মিস করি।
‘তনুর মুখে হাসি নেই তা আমি কখনো দেখিনি’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আমেনা খানম পলি তনুর খুব ভাল বন্ধু ছিল। সে তনুর সাথে স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে বলেন, একদিন সালাহউদ্দিন স্যার ক্লাস নিচ্ছে। তনু কোনো একটি বিষয় নিয়ে হাসছে। স্যার দেখে ফেলে এবং তাকে ধমক দেয়। কিন্তু কোনো ভাবেই তনু তার হাসি থামাতে পারছে না। স্যার তো রেগে গেলেন। তারপর আমরা অনেকে স্যারকে বললাম, ওর মুখটাতে সব সময় হাসি লেগেই থাকে।
পলি আরো বলেন, তনুর মুখে হাসি নেই তা আমি কখনো দেখিনি। এমনকি সে ক্লাসে নিয়মিত আসতো। পড়াশুনায় ভাল ছিল। মাঝে মাঝে মনে হয় তনু নিশ্চয়ই আমাদের পাশে এসে আগের মতই বসবে, আবারো দেখতে পাবো তার সেই হাসিমাখা মুখ!
বিবার্তা//বিল্লাল//রয়েল//মাজহার