ভারত ও চীনের মাঝে থাকার কারণে হাই প্রোফাইল কিছু পর্যটকের পা পড়ে ভুটানে। ভারতে আসার পর ডিউক এবং ডাচেস অব ক্যামব্রিজ ভুটানে ঘুরতে যান। হিমালয়ের এই ছোট রাজ্যটি সম্পর্কে বিশ্ববাসী খুব কমই যানেন। এখানে দেশটি সম্পর্কে কিছু দারুণ তথ্য জেনে নিন।
১. এটা বহির্বিশ্ব থেকে অন্যদের তুলনায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ব্রিটেনের সঙ্গে এর কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের লালনে এরা বহির্বিশ্ব থেকে আলাদা রাখতেই পছন্দ করে। ১৯৯৯ সালে প্রথম দেশটিতে ইন্টারনেট ও টেলিভিশনের অনুমতি দেয়া হয়। ১৯৭০-এর দশকে প্রথমবার বিদেশ পর্যটকদের প্রবেশে অনুমতি দেয়া হয়।
২. দেশটির রাজধানী থিম্পুতে স্মার্টফোন ও কারাওকে বারের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে। তরুণ প্রজন্ম এবং জনসংখ্যার অধিকাংশ সোশাল মিডিয়া ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন। এতে চলাফেরা ও ফ্যাশন ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। রাজনীতি নিয়ে অনেক খোলামেলা আলোচনাও হয়ে থাকে। বিছিন্ন মনোভাব থাকলেও কিছু আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তারা যথেষ্ট এগিয়ে। যেমন- ১৯৯৯ সাল থেকে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। তা ছাড়া তামাক সেখানে পুরোপুরি অবৈধ। দেশটির ৬০ শতাংশজুড়ে বনভূমি।
৩. দারুণ সুন্দর পর্যটন অঞ্চল এবং মনোমুগ্ধকর সংস্কৃতিতে পূর্ণ দেশটিতে এখন পর্যন্ত ঘুরতে যাওয়া খুব সহজ নয়। পর্যটনকে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়তে এখনো দেয়া হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের মানুষকে দেশটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নানা নিয়ম রয়েছে। এর জন্যে ২৫০ ডলার ফি গুনতে হবে। নিজস্ব সংস্কৃতি ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে এবং বাইরের মানুষের প্রবেশ ব্যাপক হারে বন্ধ করতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
৪. ভুটানে জীবনযাপনের মান বিচার করা হয় গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস (জিএনএইচ)-এর মাধ্যমে। গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি)-এর মাধ্যমে জীবনমানের তেমনটা তুলনা হয় না। দেশটির সরকার জনগণের বস্তুগত ও মানসিক শান্তির কথা বলেন। এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হয় দেশটির ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস সেন্টার’ থেকে। এ সংস্থা একজন মানুষ পরিচালনা করেন। অধিকাংশ ভুটানবাসী তার জীবন নিয়ে সুখী। এর জনসংখ্যা সাড়ে সাত লাখ। ভূখণ্ড ৩৮ হাজার ৩৬৪ বর্গ কিলোমিটার। প্রধান ভাষা জঙ্ঘা। রাষ্ট্রধর্ম বৌদ্ধ। এ ছাড়া হিন্দু ধর্মও রয়েছে। গড় আয়ু পুরুষের ৬৬ বছর এবং নারীর ৭০ বছর। রপ্তানিযোগ্য পণ্য হলো হাইড্রোলিক পাওয়ারের মাধ্যমে ভারতে বিদ্যুৎ সরবরাহ, কাঠ, সিমেন্ট, কৃষিপণ্য এবং হস্তশিল্প।
৫. তবে সবাই সুখী নন। ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল। তিব্বতীয় সংস্কৃতির সংখ্যগরিষ্ঠ ভুটানিদের সঙ্গে সংখ্যালঘু নেপালিদের সংঘর্ষ ঘটে ১৯৯০ সালের দিকে। নেপালিদের হাজার হাজার মানুষ নেপালের রিফুজি ক্যাম্পে ছুটে যান।
৬. জনগণ দেশের রাজাকে দারুণ ভালোবাসে। ২০০৬ সালে ক্ষমতায় আসেন রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক। তার সময় থেকে রাজনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন আসতে থাকে। এ পরিবর্তন তার বাবার সময় থেকে শুরু হয়। যখন ১৯৫৮ সালে তিনি তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষমতা ত্যাগ করেন। বর্তমানে সরকারের সব অংশে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০০৮ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুটো দল অংশ নেয়। রাজ পরিবার সংশ্লিষ্ট ভুটান পিস অ্যান্ড প্রোসপারিটি পার্টি (ডিপিটি) এতে জয়লাভ করে। ২০১৩ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে জয় পায় বিরোধী দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)। বর্তমান রাজা আমেরিকা ও ব্রিটেনে লেখাপড়া করেছেন। ২০১১ সালে তিনি বিয়ে করেছেন। ভুটানের বর্তমান রানি জেটসান পেমা। এই দুজন মানুষ গোটা ভুটানে সবার ভালোবাসার পাত্র।
৭. ভুটানবাসী প্রচুর গাছ লাগাতে পছন্দ করেন। রাজা-রানির প্রথম সন্তানের জন্ম জনগণ পালন করে এক লাখ ৮ হাজার গাছ লাগিয়ে। গাছ তাদের কাছে দীর্ঘ জীবন, সৌন্দর্য এবং সহমর্মিতার প্রতীক। ২০১৫ সালে মাত্র ১ ঘণ্টায় ৫০ হাজার গাছের চারা লাগিয়ে ভুটান গিনেস রেকর্ড বুকে স্থান করে নেয়। সূত্র: বিবিসি।
বিবার্তা/জিয়া