আবেগের প্রকাশের এক অদ্ভুত কিন্তু খুবই ঘনিষ্ট পথ হল ‘চুম্বন’। মা সন্তানকে ভালবেসে চুমু খায়, প্রেমের প্রকাশে চুমু তো থাকবেই, এমনকি কোন বস্তু খুব ভাল লেগে গেলে সেটিকেও আমরা চুমু খাই। আমাদের খুব প্রিয় এই ভালবাসা প্রকাশের মাধ্যম সম্পর্কে জানব কিছু মজার তথ্য।
‘Kiss’ শব্দটা কোথা থেকে এলো: শব্দটি এসেছে প্রাচীন ইংরেজি শব্দ ‘cyssan’ থেকে। যদিও কেউ জানে না এই শব্দটি কীভাবে সামনে এলো। তবে ধারণা করা হয়, এটা কোন না কোন ভাবে চুম্বনের সময় তৈরি মুখের শব্দের সাথে জড়িত। সকল শব্দের গুরু গ্রিক ভাষায় প্রেম নিয়ে, ভালবাসা নিয়ে এত শব্দ আছে, কিন্তু এই বিশেষ আবেগ ‘চুম্বন’ নিয়ে তাদের কোন শব্দ নেই। তবে রোমানরা এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে। তাদের আবার একটা নয়, নানান রকম চুম্বনের নানান রকম নাম আছে। প্যাশনেট চুম্বনকে তারা বলে ‘saviolum’, একদম ঘনিষ্ঠ চুম্বনকে বলে ‘osculum’, আবার গলায় বা হাতে চুমু খাওয়াকেও osculum বলে তারা।
কিভাবে শুরু হল এবং ছড়িয়ে পড়ল: নিশ্চিতভাবে এর উত্তর কেউ জানে না। এখানে আছে শুধুই তত্ত্ব। অনেকেই মনে করেন, চুমু একটি জৈবিক প্রবৃত্তি। বিজ্ঞানের অমীমাংসিত মানব আচরণের মধ্যে এটি একটি। কিন্তু মজার তথ্য লুকিয়ে আছে মানুষের ভাবনায়। ভারতীয় বেদে চুম্বনের উল্লেখ করা হয়েছে মুখ দিয়ে স্পর্শ হিসেবে। অনেক ইতিহাসবেত্তা বলতে চান, আলেক্সান্ডারের ভারতবর্ষে আসার মাধ্যমে মুখের সাহায্যে স্পর্শের প্রচলন হয় এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে আবার মায়ের সন্তানকে খাবার চিবিয়ে মুখে করে খাওয়ানোর ধরনকে দায়ী করেন। এটা অবশ্য মানুষের চেয়ে বেশি দেখা যায় পাখির মধ্যে।
মনুষ্য প্রজাতির ১০ ভাগ কখনো চুমু দেয় না: এর কারণ আছে বিভিন্ন রকম। এস্কিমোরা চুমু দিয়ে আবেগ প্রকাশ করে না। তারা বরং নাক ঘষে আকর্ষণ তুলে ধরে। তারা এজন্য এটা করে না যে তাদের ঠোঁট বরফ শীতল হয়ে যাবে। তারা এটা করে কারণ তাদের মুখ ঢাকা থাকে। তাই তারা মুখের খোলা অংশটিই আগে ব্যবহার করে। যেখানে পৃথিবীর ৯০ ভাগ মানুষই চুমু আদান-প্রদান করে সেখানে সুদানের মানুষ মনে করে মুখের মাধ্যমে আত্মা শরীর থেকে পালিয়ে যায়, তাই তারা চুমুকে গ্রহণ করেনি কখনো। ১৮ মিলিয়ন বছর যাবত মঙ্গোলিয়ার অধিবাসীরা জানতই না কিভাবে চুমু দিতে হয়। ১৭ শতকে এই ঘটনার সাথে তাদের পরিচয় হয় ইংরেজরা সেখানে পা রাখার পর।
কিছু দেশে মানুষকে চুমু থেকে বিরত থাকতে বলা হয়: জনসম্মুখে চুম্বন নিষিদ্ধ অনেক দেশেই। ম্যাক্সিকোতে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয় তার স্ত্রীকে জনসম্মুখে চুম্বনের দায়ে। ২০১০ সালে সৌদি আরবে এক ব্যক্তিকে চার মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয় এক নারীকে জনসম্মুখে চুমু দেয়া এবং বিব্রত করার অপরাধে।
লম্বা চুমুর বিশ্ব রেকর্ড: বর্তমান রেকর্ডটি রিপ্লে'র বিলিভ ইট অর নট শো তে করা। থাইল্যান্ডের লাক্সানা এবং এক্কাচাই তিরানাত এক আরেকজনের ঠোটে ঠোঁট রেখেছিলেন ৫৮ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের জন্য। যেখানে গবেষণা বলে, মানুষ তার সম্পূর্ণ জীবদ্দশায় মোট ৩৩৬ ঘণ্টা চুমু আদানপ্রদানে ব্যয় করে এবং ৩০,২৪০ ক্যালরি শক্তি ক্ষয় করে। চুমু বলতে এখানে আলতো চুমুর কথা নয়, বরং গভীর চুমুর কথাই বলা হয়েছে।
নিয়মিত চুমু প্রতারণার সম্ভাবনা কমায়: বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রতারণার ক্ষেত্রে শরীরের যে রাসায়নিকটি দায়ী তার নাম ডোপামিন। চুম্বন এই রাসায়নিকের নিঃসরণ বাড়ায়, ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখে। আসলে দিন যতই যায় সম্পর্কের চমকগুলো হারিয়ে যায়। মানুষ তখন বাইরের পৃথিবীতে আবেগের হারিয়ে যাওয়া তীব্রতা খোঁজে, নিজের গভীর অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে চায়। চুমু আমাদের শরীরে ‘অক্সিটোসিন’ নামে রাসায়নিক নিঃসরণ করে, যা মনে আনে শান্তি এবং উচ্চ মাত্রার আনন্দ।
পশুপাখিরাও চুমু খায়: শুধু মানুষ কিন্তু নয়, চুমুর প্রচলন আছে পশুপাখির মধ্যেও। তারাও আবেগ প্রকাশের জন্য বেছে নেয় চুম্বন। শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে দেখা যায়, মারামারির পর তারা একে অপরকে চুমু খায়। এভাবে তারা লড়াই এর বড়াই করে! হাতিদের প্রায়ই দেখা যায়, শুঁড় ঘনিষ্ঠ করতে। শুঁড় দিয়ে টেনে পরস্পরের মুখ কাছে আনার চেষ্টা করে তারা।
বিবার্তা/জিয়া