ঘোড়ার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভাসে ট্যাঙ্গলড এর সেই ঘোড়াটি যে কিনা সিনেমাটিতে রেখেছিল এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নায়কের সাথে শত্রুতা, একপর্যায়ে তার সাথে বন্ধুত্ব, প্রেমে সহায়তা এবং শেষাবধি নায়ককে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে ঘোড়াটি পালন করেছিল মহান নায়কের ভূমিকা। ইতিহাসের পাতায়ও স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে এমনই সব দুর্দান্ত সাহসী ঘোড়ার কথা, যারা তাদের মালিকের সাহায্যে সর্বদাই নিবেদিত ছিল। এমনকি প্রাণও বিসর্জন দিয়েছিল মালিকের প্রাণ রক্ষার্থে। এমনই ১০ টি ঘোড়া সম্পর্কে জেনে নিন স্বল্পাক্ষরে।
বুর্কিনা ফাসো: তার সময়ের বিখ্যাত পুরুষ ছিলেন মহান বীর আলেকজান্ডার। কিংবদন্তীটা এখানেই যে যখন বুর্কিনা ফাসো আবিষ্কৃত হয় তখন সে কাউকে তার কাঁধে বসাতো না। আলেকজান্ডার এর কারণ আবিষ্কার করেন যে ঘোড়াটি তার ছায়া দেখে বেশ ভয় পেয়ে যেত এবং এজন্যই তার ঘাড়ে কাউকে বসাতে চাইত না। আলেকজান্ডার যখন ১০ বছরের বালক ছিলেন তখন তিনি বুর্কিনা ফাসোর মুখেমুখি হন। সেসময় তিনি ঘোড়াটির কানে হালকাভাবে কিছু একটা বলেন এবং সাথে সাথে ঘোড়াটি তার মাথা নুয়ে দিয়ে আলেকজান্ডারকে তার কাঁধে ওঠার অনুমতি দেয়। ইতিহাসের বিখ্যাত এই বুর্কিনা ফাসো বহু বড় বড় যুদ্ধের অগ্রভাগে অবস্থান করেছিল এবং মালিকের নির্দেশমত এক মহান নায়কের ভূমিকা রেখেছিল। পারস্যের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি যখন বুর্কিয়া ফাসোকে অপহরণ করে, তখন আলেকজান্ডার সমগ্র পারস্য ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দেন। একপর্যায়ে পারস্যরা ঘোড়াটিকে ফিরিয়ে দেন। ইতিহাসের পাতায় এই বুর্কিয়া ফাসো সবচেয়ে দ্রুততম ঘোড়া হিসেবে সমধিক পরিচিত।
কমান্সে/গা: কমান্সে বা গা এক ধরনের আমেরিকান বন্য ঘোড়াবিশেষ যাকে ১৮৬৮ সালে রিসালা নামে এক আর্মি অফিসার কিনে এনেছিলেন। নেটিভ আমেরিকানদের সাথে এক যুদ্ধে আহত হবার পরে তিনি তার নাম রাখেন। যুদ্ধে আহত হয়ে রিসালা যখন তীরের আঘাত সহ্য করতে পারছিলেন না তখন ঘোড়াটি তার মালিককে সাহায্য করার জন্য চিৎকার করতে থাকে। আর সেই চিৎকার শুনেই সাহায্যকারী ছুটে চলে আসেন। ১৮৭৬ সালের ২৫ জুন জেনারেল জর্জ কাস্টার ধ্বংস হবার পরে ঘোড়াটিকে বেশ আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। উত্তর ডাকোটার ফোর্ট লিঙ্কনে প্রায় এক বছর ধরে তাকে সুস্থ করা হয়। সুস্থ হওয়ার পরে ঘোড়াটি আর যুদ্ধে যেতে পারেনি। বর্তমানে জাতীয় ইতিহাস রক্ষার নিমিত্তে ঘোড়াটির ভাস্কর্য কানসাস জাদুঘর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
মারেনগো: আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি ওয়েক্সফোর্ডে মারেনগোর জন্ম। ১৮১২ সালে প্যারিস থেকে মস্কোর ৫৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়ার জন্য ঘোড়াটি বিশ্বস্মরণীয় হয়ে আছে। এই অবিশ্বাস্য সময়টুকুতে তার ঘাড়ে বসে ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্ব নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। মিশরের যুদ্ধে ঘোড়াটি তার শক্তি দিয়ে নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে বাঁচিয়েছিল। তারপর থেকে মারেনগো ফ্রান্স সাম্রাজ্যে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে এবং সেই থেকে মারিনগো ওয়াটারলুসহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
কোপেনহেগেন: ইতিহাসের পাতায় কোপেনহেগেন নামেও একটি ঘোড়ার অস্তিত্ব ছিল। ঘোড়াটি স্বভাবে অগ্নিসদৃশ ছিল। ছিল অনেক বেশি চঞ্চল আর দুরন্ত। কোপেনহেগেনের মালিক ছিলেন ডিউক অব ওয়েলিংটন। একবার ওয়াটারলু যুদ্ধ থেকে ফিরে ডিউক অব ওয়েলিংটন ঘোড়াটিকে এক প্রকারের সম্বর্ধনা দিলে ঘোড়াটি তার মাথায় আঘাত করে তাকে স্বাগত জানায়। কোপেনহেগেন বৃদ্ধ বয়সে বেশ নরম স্বভাবের হয়ে গিয়েছিল কেননা তাকে তার মালিকের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা হয়েছিল।
বাইয়ারলের তুর্ক: সেসময় তিনটি আরবীয় ঘোড়া ছিল যাদের একটির নাম ছিল তুর্ক। ঘোড়াটি দৌড়ে অনেক বেশি এগিয়ে ছিল তবে আসলেও সেটি আরবীয় ছিল কি না সে বিষয়ে সংশয় ছিল। বুডা অবরোধের কারণে ১৬৮৮ সালে ব্রিটিশদের কাছে তুর্কিরা পরাজিত হয়। সেসময় একজন তুর্কি অফিসারের কাছ থেকে ব্রিটিশ ক্যাপ্টেইন রবার্ট বাইয়ারলে ঘোড়াটি নিয়ে আসেন। তখন জানা যায়নি যে ঘোড়াটি আসলে কোন জাতের ছিল। তবে ঘোড়াটি সম্ভবত আরবীয়ই ছিল। ঘোড়াটি অনেকগুলো দৌড় প্রতিযোগিতায় জিতেছিল এবং মালিকের প্রতিও ছিল বেশ সহানুভূতিশীল।
বিবার্তা/জিয়া