পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা হয়েছে দীর্ঘ। বই নিষিদ্ধ হওয়ার পর অনেক বই হয়েছে বিখ্যাত। কিছু বইয়ের জন্য লেখকদের যেতে হয়েছে নানা রকম প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে। কোন কোন লেখককে দাঁড়াতে হয়েছে কোর্টে, মামলা চালাতে হয়েছে দিনের পর দিন, ছাড়তে হয়েছে দেশ, ভিটেমাটি। আসুন জানা যাক এমন কিছু ‘নিষিদ্ধ বই’ এর কথা।
ট্রপিক অব ক্যান্সার: ট্রপিক অব ক্যান্সার মার্কিন ঔপন্যাসিক হেনরি মিলার রচিত একটি উপন্যাস, যা প্রথমে অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে একটি মার্কিন ক্ল্যাসিক সাহিত্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এতে মানুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং যৌনকর্মের বিস্তর বর্ণনা থাকায় প্রকাশের পর সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৭ বছর নিষিদ্ধ ছিল থাকার পর সুপ্রিম কোর্ট ১৯৬৪ সালে উপন্যাসটিকে অশ্লীলতার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়।
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস: ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ সালমান রুশদির উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই মুসলিম বিশ্বে ঝড় তোলে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে এক বছর পরই বইটি নিষিদ্ধ হয়। স্যাটানিক ভার্সেস লেখার অপরাধে ১৯৮৯ সালে ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড জারি করে ফতোয়া দেন। তখন মুসলিমদের বিক্ষোভ ও দাঙ্গার পর ভারতে তার উপন্যাস নিষিদ্ধ করা হয়। এ বইটির জন্য অনেকে হত্যা ও হামলার শিকারও হয়েছেন। যিনি স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাসটির জাপানি ভাষায় অনুবাদ করেন হিতোশি ইগারাশি। ১৯৯১ সালে তাকে ছুরিকাঘাতে মেরে ফেলা হয়। ইতালির অনুবাদক ইতোরে ক্যাপ্রিওলোকেও ছুরিকাঘাত করা হয়, তবে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। নরওয়ের প্রকাশক উইলিয়াম নাইগার্ডকেও আততায়ীরা গুলি ছোঁড়ে, কিন্তু অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি।
আমেরিকান সাইকো: ‘আমেরিকান সাইকো’ ব্রেট এস্টন এলিসের বিখ্যাত উপন্যাস। সেক্স, ভায়োলেন্স আর সাইকোপ্যাথির মিশেলে অন্য রকম একটা উপন্যাস। ২৭ বছর বয়সী প্যাট্রিক কাজ করে ওয়ালস্ট্রিট কোম্পানিতে। সে একে একে খুন করে কলিগ থেকে শুরু করে বান্ধবী পর্যন্ত। ভয়ঙ্কর মানসিক বিকারগ্রস্ত একজন সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠে প্যাট্রিক। ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত বইটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত হয়নি। জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায়ও নিষিদ্ধ ছিল। এরপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও শর্ত দেয়া হয় যে, ১৮ বছরের কম বয়সী কারও কাছে এটি বিক্রি করা যাবে না। ২০০০ সালে বইটি অবলম্বনে নির্মান করা হয় একটি সিনেমা।
ইভস ডায়েরি: মার্ক টোয়েনের এই বইটির ওপর শতবর্ষ আগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের চার্লটন লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছে। নগ্ন চিত্রকর্ম থাকায় কর্তৃপক্ষ ১৯০৬ সালে ইভস ডায়েরি বইটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বইটিতে লেখক আদম ও ইভের কাহিনী তুলে ধরেন।
ললিতা: ভ্লাদিমির নবোকভের লেখা একটি উপন্যাস ‘ললিতা’। লেখক প্রথমে ইংরেজি ভাষায় উপন্যাসটি রচনা করেন। একজন বিবাহিত মধ্যবয়স্ক পুরুষের সঙ্গে একটি ১২ বছর বয়সী বালিকার যৌন সংসর্গের ঘটনা হলো এই উপন্যাসটির মূল উপাদান। উপন্যাসটি ১৯৫৫ সালে প্যারিসে এবং ১৯৫৮ সালে নিউইয়র্কে প্রকাশিত হওয়ার পর অশ্লীলতার অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়।
বিবার্তা/জিয়া