একদিন রাজা ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে সেনাপতি, উজির, নাজির সবাইকে ডাকা শুরু করলেন। সবাই তাড়াহুড়ো করে রাজার সামনে এসে হাজির। রাজা বললেন, শীঘ্রই জরুরি বৈঠক হবে, সবাই প্রস্তুত হয়ে নাও। মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয়ে গেল আলোচনা সভা।
সবাই রাজাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই জরুরি সভা ডাকার কারণ কি? রাজা বললেন, আমি মানব সভ্যতার পুরো ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাই, শীঘ্রই রাজ্যের জ্ঞানসাধকদের খবর দাও। রাজার কথার সাথে সাথে রাজ্যের সব জ্ঞানসাধককে রাজার সামনে হাজির করা হল। সবাইকে প্রস্তাব দেয়া হলেও কেউই এ দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছিলেন না। অবশেষে রাজ্যের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিটিকে জোর করে দায়িত্ব দেয়া হল তিনি যেন রাজাকে মানব সভ্যতার ইতিহাস জানার ব্যবস্থা করে দেন। রাজার আদেশ! সুতরাং অমান্য করার কোন সুযোগ নেই।
জ্ঞানসাধক শীঘ্রই গভীর গবেষণায় নেমে গেলেন। দীর্ঘ দশ বছর গবেষণার পর তৈরি করা হল মানবসভ্যতার ইতিহাস। রাজার সামনে হাজির করা হল ১০০ খণ্ডের বিশাল মানবসভ্যতার ইতিহাস। বইয়ের স্তুপ দেখে রাজা হতাশ হয়ে গেলেন। তিনি বললেন, এতোগুলো বই আমার জীবদ্দশায় পড়ে শেষ করা সম্ভব নয়। রাজা নির্দেশ দিলেন বইগুলোকে যেন সংক্ষিপ্ত করে হয়।
সাধক আরো পাঁচ বছর সাধনা করে বইগুলোকে ৫০ খণ্ডে নামিয়ে আনলেন। কিন্তু তাতেও রাজার মনে ধরেনি। রাজা বললেন, ৫০ খণ্ড বইও আমার জীবদ্দশায় পড়ে শেষ করা সম্ভব নয়। সুতরাং একে আরো সংক্ষিপ্ত করে আনা হোক।
জ্ঞানসাধক ১০ খণ্ডে মানব সভ্যতার ইতিহাস লিখে আনলেও রাজা তাঁকে বললেন, তুমি একটা বেকুব। তুমি দেখতে পাচ্ছ আমার বয়স অনেক বেড়ে গেছে, আমার পক্ষে কি এতগুলো বই পড়ে শেষ করা সম্ভব?
অবশেষে সাধক একদম সংক্ষিপ্ত আকারে এক খণ্ডের একটি বইয়ে মানবসভ্যতার ইতিহাস লিপিবদ্ধ করলেন। এ বই যখন তিনি রাজার সামনে আসলেন তখন রাজা মৃত্যুশয্যায়। মৃত্যু য্যায় কারো পক্ষে একটি বই পড়ে শেষ করা সম্ভব নয়। তিনি হতাশ চোখে বইটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। আফসোস করতে করতে রাজা বললেন, মানবসভ্যতার ইতিহাস আমার জানা হল না।
এমন সময় রাজার এক উজির সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে বললেন, রাজা আমি আপনাকে এক বাক্যের মাধ্যমে মানবসভ্যতার ইতিহাস জানাতে পারবো। উজিরের কথা শুনে রাজা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়লেন। দেরী না করে খুব শীঘ্রই মানবসভ্যতার ইতিহাসটি তিনি উজিরকে বলার জন্য নির্দেশ দিলেন।
উজির অত্যন্ত গাম্ভীর্য নিয়ে ধীরে ধীরে মানবসভ্যতার ইতিহাস বলা শুরু করলেন। উজির কণ্ঠস্বর থেকে বের হল অসাধারণ এক বাক্য...
‘মানুষ জন্মেছে... দুঃখ পেয়েছে... অতঃপর মরে গেছে...!’
বিবার্তা/জিয়া