কথায় বলে শখের তোলা আশি টাকা। মানুষ শখ পূরণ করতে অনেক কিছু করতে পারেন। শখ এমন একটি জিনিস যা যে কোনো বয়সী মানুষকে ছেলেমানুষি করতে বাধ্য করে। মানুষ এক ধরনের নেশার মধ্যে থেকে শখের নেশা পূরণ করতে থাকেন।
একেকজন মানুষের মানসিকতা, চিন্তাধারা ও সত্তা যেমন আলাদা তেমনই তাদের শখের ধরনও আলাদা ধরণের হয়। মানুষের চিন্তাধারা যেমন একজন মানুষকে অন্যদের থেকে আলাদা করে এবং ভেতরের মনমানসিকতা প্রকাশ করে, তেমনই শখও মানুষের ভেতরের চিন্তাধারাটাকে প্রকাশ করে।
আমাদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা শখ রয়েছে। অনেকের কিছু অদ্ভুর ধরনের শখও রয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকেরই অনেক আগ্রহ থাকে বিশ্ববিখ্যাত মানুষের আচার আচরণ সম্পর্কে। অনেকের মনে প্রশ্নও জাগে তাদেরও কি শখের নেশা ছিল? কী ধরনের শখ ছিল?
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি: লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা মোনালিসার হাসি আজও শতশত হৃদয়ে দাগ কাটে। এরই মাঝে অমর হয়ে আছেন তিনি। তবে তিনিও সাধারণ মানুষের ব্যতিক্রম নন। তারও ছিল শখের নেশা। তিনি বাজার থেকে বিভিন্ন দামের ও বিভিন্ন জাতের পাখি কিনতেন। তবে অদ্ভুত ব্যাপার ছিল তিনি পাখিগুলো পুষতেন না। কিনে উড়িয়ে দিতেন। মুক্ত করে দিতেন আকাশে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: নোবেল প্রাইজ পাওয়া কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের অনেক ধরনের ঘটনা আমাদের কাছে অনেক আগ্রহের কারণ। তেমনই আমাদের অনেকের আগ্রহ রয়েছে তার শখের ব্যাপারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিল নানা ডিজাইনের কলম সংগ্রহের নেশা। অনেকে ভাবতে পারেন তিনি ছিলেন সাহিত্যকার তার মধ্যে এই শখটি থাকতেই পারে। কিন্তু তার শখটি অদ্ভুত হওয়ার কারণ ছিল তিনি সেই কলমগুলো দিয়ে একটি আঁচড় কেটেও দেখতেন না খাতার কাগজে।
আলেকজান্ডার দ্যুমা: আলেকজান্ডার দ্যুমার লেখা নানা উপন্যাস, গল্প কবিতা এখনও অনেক ভক্তের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। কিন্তু আপনারা জানেন কি, তার ছিল অদ্ভুত ধরনের শখ। এবং তিনি তার শখকে নিজের পেশার সাথে জুড়ে নিয়েছিলেন। তিনি নীলরঙের কাগজে উপন্যাস লিখতেন, গোলাপি রঙের কাগজ রেখেছিলেন কবিতা লেখার জন্য এবং পত্রিকায় ছাপানোর জন্য তিনি লেখা পাঠাতেন হলুদ রঙের কাগজে।
মারকনি: বিজ্ঞানের জগতে মারকনি যতটাই খটমটে ছিলেন না কেন, নিজের জীবনে তিনি ছিলেন একজন ছেলেমানুষ মনে অধিকারী মানুষ। আর তাঁর এই ছেলেমানুষি স্বভাব প্রকাশ পেতো অদ্ভুত রকমের শখটির মাধ্যমে। তিনি বছরের ৩৬৫ দিনই সমুদ্রের উপকূলে ঘুড়ি উড়াতেন। একটি দিনও বাদ দিতেন না তিনি। যদি কোনো কারণে একদিন ঘুড়ি উড়াতে না পারতেন সেদিন তিনি ঘুমাতেই পারতেন না।
মাদাম কুরি: বিজ্ঞানের জগতে মাদাম কুরির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয় ১৮৯৮ সালে রেডিওঅ্যাক্টিভ সাবস্টেন্স আবিষ্কারের মাধ্যমে। যার কারণে তিনি হন নোবেল পুরস্কারের অধিকারী। কিন্তু তিনিও ছিলেন নিজের শখের নেশায় বুঁদ। আর তাঁর শখটিকে অদ্ভুত ধরনের শখই বলা চলে। তিনি প্রায় প্রতিদিন বিভিন্নভাবে একবার করে আত্মহত্যার চেষ্টা করতেন। তিনি অনেকভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে যান কারণ এটিই ছিল তার শখ।
অ্যাডলফ হিটলার: বিশ্বের ইতিহাসে যতো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস আছে তার মধ্যে অ্যাডলফ হিটলারের নাম প্রথমের সারিতেই। কিন্তু তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে কেমন মানুষ ছিলেন তা অনেকরই অজানা। তিনিও ছিলেন অদ্ভুত শখের মালিক। তিনি ছোটবেলা থেকেই ভায়োলিন বাজাতেন। এবং তার সময়ের জার্মানির অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভায়োলিন বাদক ছিলেন তিনি। তার অদ্ভুত রকমের শখের সাথে এই ভায়োলিনের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। তার নির্দেশে যতোগুলো হত্যাযজ্ঞ করা হয়েছে প্রত্যেকটির পর তিনি তার ভায়োলিনটি বাজিয়ে দুঃখপ্রকাশ করতেন। এটিই ছিল তার শখ।
বিবার্তা/জিয়া