মুরাসির দাবি, তাঁর জন্মতারিখ ৬ জানুয়ারি ১৮৩৫। সেই হিসেবে তাঁর বয়স বর্তমানে ১৮১ বছর!
এমন অদ্ভুত দাবিকে এক নজরে অবাস্তব মনে হতে বাধ্য। সেটা বোধ করি মুরাসি নিজেও জানেন। তাই তাঁর বয়স নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললেই তিনি তাঁর বয়সের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন ব্রিটিশ আমলে দেয়া সরকারি বার্থ সার্টিফিকেট এবং পরিচয়পত্র।
তাতে তাঁর জন্মতারিখ হিসেবে তাঁর দাবি করা তারিখটিই লিপিবদ্ধ রয়েছে। মুরাসিকে প্রশ্ন করলে তিনি শোনাতে শুরু করেন তাঁর জীবনকাহিনী। মুরাসির জন্ম বেঙ্গালুরুতে। তার পর তিনি চলে আসেন বেনারসে। সেখানে তিনি চর্মকার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
১৯০৩ সালে তিনি যে বেনারসে উপস্থিত ছিলেন, তারও প্রমাণ রয়েছে তাঁর কাছে। ১৯৫৭ সালে যখন তিনি নিজের পেশা থেকে অবসর নেন তখন তাঁর বয়স ১২২ বছর। তাঁর দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে হিসেবমতো তিনিই পৃথিবীর প্রবীণতম মানুষ।
কেমন লাগে সেটা ভাবলে? বৃদ্ধ বিরক্ত হয়ে বলেন, ভালো না। আমার নাতির ছেলে-পুলেদের মৃত্যু পর্যন্ত আমাকে দেখতে হয়েছে। সবাই একে একে বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আমি বেঁচে রয়েছি। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয়, মৃত্যু আমাকে ভুলেই গিয়েছে। না হলে কেউ ১৮১ বছর বেঁচে থাকে! কী জানি, আমি হয়তো মরবই না কোনো দিন...।
মুরাসির এই দীর্ঘ আয়ুর রহস্য কী? মুরাসির উত্তর, সংযম। ছোটবেলায় দারিদ্র্যের কারণে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হত। সেই থেকেই অল্প খাওয়া অভ্যাস হয়ে যায়। তার পরেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনোদিন খাইনি, বলে হাসেন ১৮১ বছরের মানুষটি।
তারপরও থেকে যায় প্রশ্ন, সত্যিই কি কোনো মানুষের পক্ষে ১৮১ বছর জীবিত থাকা সম্ভব? সেক্ষেত্রে এই খবরের সত্যতা ও উৎস যাচাই করতেই হয়। সন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, মুরাসি নামের এই ব্যক্তির কাহিনী প্রথম প্রচার লাভ করে ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেইলি রিপোর্ট নামের একটি ওয়েবসাইট মারফৎ। সেই ওয়েবসাইটের শুরুতেই রয়েছে ডিসক্লেইমার— ‘এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রতিবেদনই কল্পকাহিনী মাত্র’।
কাজেই সেখানে ওই মুরাসি কাহিনীর কোনো সত্যতা দাবি করা হয়নি। পরবর্তীকালে এই বৃত্তান্ত ব্যাপক প্রচার পায় পর্তুগিজ, স্প্যানিশ এবং ইটালিয়ান ভাষার একাধিক ওয়েবসাইটে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বানানো হয়েছে একাধিক ভিডিও। ক্রমে ক্রমে ভাইরাল হয়ে যায় খবরটি।
কিছু ভারতীয় মিডিয়াও এই ভিত্তিহীন খবর প্রচার করেছে। খবরটি ‘ভিত্তিহীন’ এই কারণেই যে, ওই ব্যক্তির বয়সের প্রমাণ হিসেবে কোনো ডাক্তারি পরীক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়নি ওই প্রতিবেদনে। আর তা যদি না হয়, তাহলে এক বৃদ্ধের নিজের দাবির ভিত্তিতে কিংবা জরাজীর্ণ কিছু নথির ভিত্তিতে একজন মানুষকে ১৮১ বছরের বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না।
বিবার্তা/কাফী