লজ্জাবতীর ছোট ছোট পাতাগুলো আলো পেলে খুলে যায়, অন্ধকারে বন্ধ হয়। কিন্তু হঠাৎ ছুঁলে পাতা নুয়ে পড়ে এবং ছোট পাতাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে লজ্জাবতী পাতার গোঁড়া একটু ফোলা থাকে, এর ভিতর বড় বড় অনেক কোষ আছে।
ওইসব কোষ যখন পানি ভর্তি হয়ে ফুলে ওঠে তখন লজ্জাবতী পাতার ডাঁটাটি সোজা হয়। কিন্তু হঠাৎ পাতা ছুঁলে ওই ফোলা কোষগুলো থেকে পানি বাইরে বেরিয়ে পিছন দিককার কোষে চলে যায়, ফলে কোষগুলো চুপসে পড়ে। চুপসানো কোষে পানির চাপ কম থাকে। তাই লজ্জাবতী ডাঁটাটিও আর সোজা থাকতে পারে না, নিচের দিকে নুয়ে পড়ে।
যে পাতাটিকে ছোঁয়া হয়, এ প্রক্রিয়াটি শুধু যে তার মধ্যেই ঘটে তা নয়। আস্তে আস্তে তা উপর-নিচে সব পাতায়ই ছড়িয়ে যায় এবং এভাবে সব পাতা নুয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, লজ্জাবতীর পাতা স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে একটা তড়িৎ প্রবাহ গাছের সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
‘অ্যাসিটাইল কোলিন’জাতীয় এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে এই তড়িৎ প্রবাহিত হয়। এই তড়িৎ খুব দ্রুত এক কোষ থেকে আরেক কোষে যেতে পারে।
লজ্জাবতী গাছগুলো কেন এরকম আচরণ করে থাকে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিস্তর গবেষণা করেছেন। তাদের মতে, লজ্জাবতী গাছের পাতার গোঁড়াটা একটু ফোলা থাকে। এই ফোলা অংশের ভিতর থাকে বড় বড় কোষ। এসব কোষ যখন পানি ভর্তি থাকে তখন গাছের পাতার বোটা ফুলে ওঠে এবং ডাঁটা সোজা হয়। কিন্তু লজ্জাবতী গাছে কেউ হাত দিয়ে স্পর্শ করলেই তার সাড়া গায়ে একটা বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়।
এদের শরীরে অ্যাসিটাইল নামে এক প্রকারের রাসায়নিক পদার্থ আছে। এই অ্যাসিটাইল কোলিন পদার্থের মাধ্যমেই এই বিদ্যুৎ প্রবাহ ছড়িয়ে পড়ে ওদের সাড়া অঙ্গে। তখন এই রাসায়নিক পদার্থই দ্রুত এক কোষ থেকে আরেক কোষে ছুটতে থাকে। এ ফলে লজ্জাবতী গাছের কোষ থেকে খনিজ লবণ বেরিয়ে আসে।
খনিজ লবন বের হয়ে আসার সঙ্গে কোষে যে পানি জমা ছিল তাও বেরিয়ে আসে। পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে কোষগুলো চুপসে যায়। ফলে তাদের শক্তি ও চাপ কমে যায়। তখন গাছের পাতা গুলোও শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং দুর্বল হয়ে নুয়ে পড়ে। এই অবস্থা কিছুক্ষণ থাকে। আবার বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে ধীরে ধীরে কোষে পানি জমতে থাকে, গাছটি ও তখন পুনরায় সোজা হয়ে উঠে।
বিবার্তা/জিয়া