দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ সোমবার পাথরবাহী চীনা জাহাজ বহির্নোঙরের মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রার কার্যক্রম। সোমবার দেশের আরেক মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণের পাথর নিয়ে চীনা জাহাজটি পায়রা বন্দরে বহির্নোঙর করেছে।
এর ফলে বন্দরটি চালুর মধ্য দিয়ে নিরাপদ বাল্কপণ্যাদি নদীপথে পরিবহনের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছে। স্বল্প পরিসরে এ গভীর সমুদ্রবন্দরের বাণিজ্যিক শুরু হলেও পুরোপুরি চালু হবে ২০১৮ সালে।
প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ড ৫৩ হাজার টন পাথর নিয়ে সোমবার রামনাবাদ চ্যানেলের বহির্নোঙরে পৌঁছবে। ওই দিন থেকেই লাইটারেজ অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে।
এদিকে, দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রার উন্নয়ন কার্যক্রমকে ঘিরে পুরো দক্ষিণাঞ্চল আলোকিত হয়ে উঠেছে। এক সময় সমুদ্র উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার জনপদ ছিল অবহেলিত। প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করা এ অঞ্চলের মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়াতো বিভিন্ন শহরে।
ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সরকার রাবনাবাদ নদীর অববাহিকা ও বঙ্গোপসাগরের চ্যানেলে পায়রা তৃতীয় সমুদ্রবন্দরটির কার্যক্রম শুরু করে। এর পরই বন্দরকেন্দ্রিক উন্নয়নে পাল্টে যেতে শুরু করে এ উপজেলার চিত্র। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে পায়রা বন্দরকেন্দ্রিক বিনিযোগকারীরা এর আশপাশে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য জমি কেনা শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগমের সভাপতিত্বে সম্প্রতি পায়রা সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম ও অগ্রগতি শীর্ষক সভায় পায়রা বন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানিতে প্রযোজ্য শুল্ক-করাদি বা শুল্কছাড়ের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়। পায়রা বন্দর এলাকায় বন্দর, জেটি, কন্টেইনার টার্মিনাল, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি চলমান পায়রা কাস্টমস হাউসের জমি দ্রুত অধিগ্রহণের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।
পায়রা বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সাইদুর রহমান জানান, পণ্য খালাসের দিন থেকেই লাইটারেজ অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে। এর ফলে নিরাপদ পণ্যাদি নদীপথে পরিবহনের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ রয়েছে।
এমভি ফরচুন বার্ডের মালিক সিলেটের আমদানিকারক জালাল উদ্দিন জানান, আমদানি করা পাথরগুলো মূলত ‘ক্র্যাশিং স্টোন’। এর বড় অংশই পদ্মাসেতু নির্মাণের জন্য চীন থেকে আনা হয়েছে।
কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল হালদার জানান, পায়রা সমুদ্র বন্দর এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সহায়তা করবে। অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরও সমৃদ্ধ করবে। তা ছাড়া নৌঘাঁটির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সুন্দরবনের অপরাধ দমন সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ২০১৮ সালের মধ্যে এর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
বিবার্তা/উত্তম/জিয়া