দুটো দৃশ্যমান কারণে এই মুহূর্তে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ্যোগ্য অলস টাকার অংক বাড়ছে। ব্যাংক সূত্রমতে, তারল্য বেড়ে যাওয়ার পেছনে প্রেধানত দুটো কারণ সক্রিয় রয়েছে। প্রথমত কাঙ্ক্ষিত ঋণ চাহিদা না থাকা। দ্বিতীয়ত অধিক পরিমাণে বিদেশি ঋণের আগমন। এতে ব্যাংকগুলোতে অলস পড়ে রয়েছে অতিরিক্ত তারল্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য জমা রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা ঢাহা অলস পড়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল এক লাখ ৪১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। এ সময় ব্যাংকগুলো রেখেছে দুই লাখ ৫৫ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ বিদেশ থেকে সরাসরি সহজ শর্তে ও তুলনামূলক সুবিধাজনক সুদে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিয়েছে। এতে স্থানীয় ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগযোগ্য তহবিল অলস পড়ে আছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিনিয়োগ করতে না পারায় ব্যাংকগুলোর কাছে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এসব অর্থের বিপরীতে তারা নিয়মিত সুদ গুনলেও কোনো আয় করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতে আমানতের তুলনায় ঋণে সুদহার ধীরে ধীরে কমাতে হবে। ফলে উদ্যোক্তারা নতুন করে ব্যাংকঋণ নেবেন। কারণ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। বর্তমানে শিল্প ও বাণিজ্যে ঋণের প্রবাহ আগের তুলনায় কমে গেছে। লোকজনের ব্যাংকঋণের চাহিদাও কমে গেছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করছেন। ফলে ব্যাংকের তারল্য সম্পদ বাড়ছে।
সূত্র মতে, সম্প্রতি দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাও বাড়তে শুরু করেছে। যার ফলশ্রুতিতে জুন শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তারপরও বিপুল পরিমাণে অলস টাকা ব্যাংক খাতে থাকায় উদ্বৃত্ত তারল্য খুব বেশি কমছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য সময় রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) তারল্য সম্পদের পরিমাণ এক লাখ ৩ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এই পাঁচ ব্যাংকের তারল্য সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৪৩ হাজার ৫৫৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সে হিসাবে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে ৫৯ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে তারল্য সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল এক হাজার ৪৯০ কোটি টাকা, তারল্য স্থিতি রয়েছে এক হাজার ৬৪২ কোটি টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে এক লাখ ৬৩২ কোটি টাকার তারল্য স্থিতি রয়েছে। এসব ব্যাংকের তারল্য সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৭০ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ২৯ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকগুলোর তারল্য স্থিতি ২৭ হাজার ৩২০ কোটি টাকা, আর সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ১৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৮ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, বিদেশি ব্যাংকগুলোর তারল্য সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল সাত হাজার ৭৫ কোটি টাকা, কিন্তু তারল্য সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। এতে করে বিদেশি ব্যাংকগুলোর কাছে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই শেষে বেসরকারি খাতের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৬৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা, যা জুন শেষে ছিল ছয় লাখ ৬৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে জুলাই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ কমেছে চার হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। তথ্যে আরও দেখা যায়, গত বছরের জুলাই মাস শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি ছিল পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা।
বিবার্তা/জিয়া