সরকারের বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে বরিশাল বিভাগে। এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে গোটা অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র। বরিশালে আইসিটি পার্ক, অর্থনৈতিক জোন, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর, ভোলায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, ভোলা-বরিশাল ব্রিজসহ ব্যাপক উন্নয়নে এখানে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, বর্তমান সরকারের পরিকল্পিত উন্নয়নে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। অবহেলিত এই জনপদে বইছে উন্নয়নের হাওয়া। বিশেষ করে এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। এছাড়া পটুয়াখালীতে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম পায়রা সমুদ্রবন্দর গত ১৩ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর কল্যাণে সরাসরি রেলপথ যাবে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে বরিশাল দিয়ে পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দরে। এর মাধ্যমে এখানে উচ্চমাত্রায় অর্থনৈতিক গতি সঞ্চার হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বিশিষ্ট শিল্পপতি ও বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, পায়রা বন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর বরিশালের ব্যবসায়ীরা উৎসবমুখর অবস্থায় রয়েছে। কারণ পদ্মা সেতুরও নির্মাণ কাজও দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ব্যাপক শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে রূপ নেবে বরিশাল অঞ্চল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসবেন এখানে বিনিয়োগ করতে।
সূত্র জানায়, বরিশালের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের অদূরে ও বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পাশে ২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত হবে আইসিটি পার্ক। সড়ক ও জনপদ বিভাগের ৫ একর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে পার্ক নির্মাণের জন্য। গড়ে উঠবে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যারা শুধু দেশীয় নয়, বিদেশী কোম্পানির কাজও সম্পাদন করবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ২৩ হাজার বেকার যুবক-যুবতী কর্মসংস্থানে সুযোগ পাবে এখানে।
এছাড়া আগৈলঝাড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে ৩শ’ একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গত ৬ আগস্ট প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক পবন চৌধুরী নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করে গেছেন। আর সদর উপজেলার চর-আইচায় ১০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার স্থাপনের জন্য। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে পর্যটন কর্পোরেশন।
এদিকে দেশের সর্ববৃহৎ দ্বীপ জেলা ভোলায় আরেকটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নে ২০৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য। এখান থেকে উৎপাদিত পণ্য খুব সহজেই পায়রাবন্দর দিয়ে দেশ ও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে গত ৫ আগস্ট বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও অর্থনৈতিক জোন প্রকল্পের প্রধান পবন চৌধুরী নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভোলায় প্রচুর গ্যাসের মজুদ রয়েছে। এখানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। ফলে গ্যাস ও বিদ্যুতের মজুদ থাকায় খুব ভালোভাবে এখানে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠিত করা যাবে। প্রাথমিকভাবে প্রায় সাড়ে ৩’শ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে অর্থনৈতিক জোনের উন্নয়ন কজের জন্য। আগামী বছরের প্রথম দিতে মাটি ভরাটসহ প্রথম পর্যায়ের কাজ আরম্ভ করা হবে বলে তোফায়েল আহমেদ জানান।
গ্যাসসমৃদ্ধ এই জেলাকে দেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত করতে ভোলা-বরিশাল ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। ইতিমধ্যে ব্রিজ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। গত জুলাই মাসে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ব্রিজের স্থান পরিদর্শন করেছেন। ব্রিজটি নির্মাণ হলে ভোলা হবে দেশের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধশালী জেলা।
অন্যদিকে সমুদ্রগামী জাহাজ থেকে মালামাল খালাসের মধ্যে দিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত পায়রা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ৫৩ হাজার মেট্রিক টন পাথর নিয়ে চীন থেকে আসা প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ড বন্দরে নোঙ্গর করেছে। এছাড়া মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে আরো দুটি বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রায় ছয় হাজার একর জমির উপর ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বন্দরটি নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি করবে ও রফতানি পক্রিয়া এবং সিপবিল্ডিং সেক্টরে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। বন্দরটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালী জেলার বাসিন্দারা। এ তিনটি জেলা দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে।
বিবার্তা/জিয়া