কোরবানি ঈদের আগে মসলা বেচাকেনা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে খুচরা বাজারে। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নগরবাসী ঈদের মসলা কেনাকাটা শুরু করেছেন। তবে চিরাচরিত কায়দায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা মসলার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। জানা গেছে, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, রসুন, এলাচি, দারুচিনি লবঙ্গসহ সকল প্রকার মসলা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারাও দাম বেশি নেয়ার অভিযোগ করছেন। তাদের অভিযোগ সপ্তাহ ব্যবধানে বিক্রেতারা সকল প্রকার মসলার দাম বেশি নিচ্ছেন। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন পাইকারি বাজারেই মসলার দাম বেড়েছে। প্রতিকেজি মসলার দামে ১শ’ থেকে ১২০ টাকা বেশি নিচ্ছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে এলাচি ও লবঙ্গের দাম বেড়েছে বেশি।
কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ‘ঈদ উপলক্ষে মসলা বিক্রি বেশ ভালোই হচ্ছে।’ অন্যদিকে ক্রেতা বাবুল বলেন, ‘কোরবানির পশু এখনো কেনা হয়নি। ঈদের দু’এক দিন আগে কিনব। এখন মসলা পণ্য কিনে রাখছি। তবে মসলার দাম বেশি নিচ্ছে বিক্রেতারা। এক মাস আগে ১০০ গ্রাম এলাচি কিনেছি ১শ’ টাকায়। এখন কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন আরো দাম বাড়তে পারে।’
দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানি মিজান আলম বলেন, ‘দাম বৃদ্ধি বিষয়টি সত্য। এখানে খুচরা বিক্রেতাদের করার কিছু নেই। পাইকারি বাজারেই প্রতিটি মসলার কেজিতে বেড়েছে ১শ’ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।’
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জিরা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ গ্রাম ৯০ টাকা। উন্নতমানের জিরা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। সে হিসেবে জিরার কেজি পড়ে ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি জিরা বিক্রি হতে দেখা গেছে ১১৬ থেকে ৩৪২ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে ভারতীয় জিরা প্রতিকেজি ৩২৩ থেকে ৩২৪, সিরিয়ার জিরা ৩৪২, মিষ্টি জিরা (ভারতীয়) ১১৬, মিশরের মিষ্টি জিরা ১২০ টাকা।
দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি ২৫০ গ্রাম ৭৫ টাকায়। খুচরায় কেজি পড়ে ৩শ’ টাকা। পাইকারি বাজারে চীনের দারুচিনি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২১৬ এবং ভিয়েতনামের দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ২২৮ টাকা।
এ মসলাটি প্রতি ১০০ গ্রাম বিক্রি করতে দেখা গেছে ১২০ টাকা। মানভেদে কোথায় ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। সে হিসেবে খুচরায় প্রতিকেজির দাম পড়ে এক হাজার ২শ’ টাকা। উন্নতমানের এলাচি এক হাজার ৬শ’ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি বাজারে এই এলাচি বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ৮৭৫ টাকা কেজি। উন্নতমানের আরো একটি এলাচি আছে যেটির প্রতিকেজির দাম এক হাজার ২শ’ থেকে এক হাজার ১৪০ টাকা পর্যন্ত।
খুচরা বাজারে প্রতি ২৫০ গ্রাম জয়ত্রিক বিক্রি হচ্ছে ৩৭৫ টাকায়। পাইকারিতে শ্রীলংকান এই মসলা মানভেদে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২শ’ টাকা কেজি। গোল মরিচ ২৫০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ টাকা। পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি কেজি ৮শ’ থেকে ৮৩০ টাকা। লবঙ্গ ২৫০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ টাকায়। ইন্দোনেশিয়া থেকে নিয়ে আসা এই মসলা পাইকারিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে প্রতিকেজি বিক্রি হয় ৯শ’ থেকে সাড়ে ৯শ’ টাকায়।
প্রতিকেজি ধনিয়া মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১শ’ টাকায়। পাইকারিতে ৫২ থেকে ৭০ টাকা। শুকনা মরিচ মানভেদে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা। পাইকারিতে ভারতীয় শুকনা মরিচ প্রতিকেজি ১৬০, দেশি (বগুড়া) ১২৫ থেকে ১৩০, দেশি (রায়পুরী) ১৩০ টাকা। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি ২৫০ গ্রাম গুঁড়া মরিচ বিক্রি করতে দেখা গেছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। খুচরায় ২৫০ গ্রাম হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। পাইকারি বাজারে শুকনা দেশি হলুদ প্রতিকেজি ১২০ থেকে ১২৫, ভারতীয় হলুদ ১১৮ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া খুচরা বাজারে ১০০ গ্রাম তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়।
খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ টাকা। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কেজি মানভেদে ১৮ থেকে ২২ টাকা। খুচরায় রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০, আদা ৮০ টাকা। পাইকারিতে রসুন ১৫৫ থেকে ১৫৮ টাকা এবং আদা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত।
খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। খোলা সয়াবিন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকায়। লবণ প্যাকেট জাত মোটা দানা প্রতিকেজি ২৫ টাকা, উন্নতমানের চিকন দানার লবণ প্রতিকেজি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।
বিবার্তা/জিয়া