সিন্ডিকেটের কারসাজিতে কোরবানির পশুর বাজার জমে ওঠার আগেই অস্থির হয়ে গেছে দেশের মশলার বাজার। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও আমদানিকারক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে মশলার পাইকারি ও খুচরা বাজার। অথচ মাসখানেক আগেও কোরবানির অন্যতম অনুষঙ্গ মশলার দাম নিম্নমুখী ছিল।
ক্রেতারা বলছেন, শুধুমাত্র ব্যবসায়িক মুনাফা বৃদ্ধির অসাধু উদ্দেশ্যে মশলার দাম বাড়ানো হয়েছে। বহির্বিশ্বে যেখানে ধর্মীয় উৎসবের সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা বরং ব্যবসার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে এসব মৌসুমকে বেছে নেয়।
নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে গেছে, ঈদের বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে প্রায় প্রতিদিনই দাম বেড়ে চলেছে।বিবার্তার চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, দেশের সর্ববৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে কোনো কারণ ছাড়াই মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন মশলার পাইকারি দাম পণ্যভেদে প্রায় ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। গত সপ্তাহের তুলনায় খুচরা বাজারে এসব মশলার দাম পণ্যপ্রতি কেজিতে ১৫-২০ টাকা করে বেড়েছে।
এদিকে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে পাইকারি পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা মসলা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সবকটি মশলা পণ্যের দাম বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আদা ও এলাচের দাম। এক সপ্তাহে আদার দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আর এলাচের দাম বেড়েছে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এছাড়া জিরার দাম বেড়েছে ৪০-৪৫ টাকা, দারচিনির দাম বেড়েছে ৩৫-৪০ টাকা, রসুনের দাম বেড়েছে ৩০-৩৫ টাকা এবং ধনিয়ার দাম বেড়েছে ২৫-৩০ টাকা। অন্যদিকে মরিচ, হলুদ, লবণ ও পিয়াজের দাম বেড়েছে পণ্যভেদে ১০-২০ টাকা।
পাইকারি বাজারে মশলা পণ্যের দাম প্রসঙ্গে জানা যায়, প্রতিকেজি কাঁচা আদার (চায়না) দাম ১২০-১২৫ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৬৫ টাকা। আর দেশি আদার দাম ১১০-১২০ টাকা। প্রতিকেজি রঙ এলাচের (অস্ট্রেলিয়ান) দাম মানভেদে ৯০০-১০০০ টাকা। যা গত সপ্তাহের্ ছিল ৭৭০-৮০০ টাকা। মানভেদে প্রতিকেজি জিরার (সিরিয়া) দাম পড়ছে ৩৪০-৩৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০০-৩২৫ টাকা। দারুচিনির দাম কেজিপ্রতি ২২০-২৩০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯০-২০০ টাকা। রসুনের কেজি ১৬৫-১৭০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪০-১৪৫ টাকা।
এছাড়া দেশি মরিচের কেজি ১৯০-২০০ টাকা, ভারতীয় মরিচের কেজি ১৬৫-১৭০ টাকা এবং গোল মরিচের কেজি ১২০০-১২৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১৫-২০ টাকা করে বেড়েছে। দেশি (বিনি) হলুদের কেজি ১৫০-১৬০ টাকা, ভারতীয় হলুদ ১১৮-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।অপরদিকে লবণের দাম প্রতিকেজি ২৫-৪০ টাকা এবং সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
কোন ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এভাবে বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে মশলা পণ্যের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে খাতুনগঞ্জের ডি.আর ট্রেডার্সের মালিক মো. রাশেদুল আলম চৌধুরী জানান, চাহিদা বেশি থাকলে পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই একটু বাড়ে। প্রত্যেক ব্যবসায়ীদের কাছে এটা একটা ব্যবসার মৌসুম। তবে লাভের মাত্রাটা যাতে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে সহনীয় পর্যায়ে থাকে সেটা সবসময় আমরা চাই। যেহেতু মশলা পণ্য অনেকটাই আমদানি নির্ভর সে কারণে অনেক সময় আন্তর্জাতিক বাজার ও কিছু অসাধু আমদানিকারকদের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা ঠিকমত পেরে উঠি না।
এদিকে পাইকারি বাজারে মশলা জাতীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে খুচরা বাজারে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ফলে পণ্যভেদে কেজি প্রতি ক্রেতা সাধারণকে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি গুণতে হচ্ছে।
বিবার্তা/জিয়া