হঠাৎ করেই লবণের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে চামড়াশিল্পে। এ শিল্পের সাথে জড়িতরা মনে করছেন, লবণের এই অস্বাভাবিক দামের কারণে ট্যানারি মালিকরা কুরবানির পশুর চামড়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারবে না। এতে অন্যবারের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি চামড়া নষ্ট হবে। তারা জানান, টাকা বাঁচাতে কাঁচা চামড়ায় লবণ কম দিলে তার মান কমবে।
জানা গেছে, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের অতি জরুরি উপাদান লবণের দাম বেড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ হওয়ায় কোরবানি সামনে রেখে এখনও লবণ কেনেননি চামড়া ব্যবসায়ীরা। বরং লবণের দাম না নামলে চামড়ার দাম পড়ার পাশাপাশি অন্য সময়ের চেয়ে এবার বেশি পরিমাণে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
সাধারণত কোরবানির ঈদের মাসখানেক আগে থেকেই লবণ কেনা শুরু করেন চামড়ার আড়তদাররা। বাংলাদেশে সাধারণত লবণের দামে তেমন হেরফেরও হয় না। তবে গতবার এই সময়ে ৭৪ কেজি লবণের যে বস্তা ৬৫০ টাকায় মিলছিল এবার তার দাম ১৩০০ টাকা।
এ প্রেক্ষাপটে লবণের দামে লাগাম টানতে দেড় লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই পরিমাণ লবণ আনতে মঙ্গলবার এলসি খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব হেদায়তুল্লাহ আল মামুন। দু-একদিনের মধ্যে আরও এক লাখ টন লবণ আমদানির এলসি খোলা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ঈদের আগে এসব লবণ চলে এলে দাম কমে যাবে বলে মনে করছেন সচিব।
তবে আমদানির লবণ এলে দাম কমবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। তার ভাষায় ‘আমাদের দেশে যে জিনিসের দাম একবার বাড়ে, তা আর কখনও কমে?’ লবণের দাম না কমলে চামড়ার দামে তার প্রভাব পড়বে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘খরচ’ ঠিক রাখতে গতবারের চেয়ে কম দামে চামড়া কিনবেন তারা।
কম দামে চামড়া কেনা গেলেও লবণ স্বল্পতায় তা বেশি পরিমাণে নষ্ট হবে বলে শঙ্কা করছেন চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতা দেলোয়ার। তিনি বলেন, ‘অতিমূল্যের কারণে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়ায় লবণ কম দেবে। এতে চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকবে।’
কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা জানান, একটি গরুর চামড়ায় প্রায় দশ কেজি লবণ ব্যবহার করতে হয়। সে হিসাবে আগে একটি চামড়া সংরক্ষণে লবণ বাবদ যেখানে ৮৭ টাকা ব্যয় হত, সেখানে বর্তমান বাজার দরে লাগবে প্রায় ১৭৫ টাকা।
বাংলাদেশে প্রতিবছর মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ চামড়া কোরবানির ঈদে জবাই করা পশু থেকে আসে। এই সময়ে গড়ে ৩০ লাখ চামড়া আসে আড়তে। সাধারণত মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন। আড়ত হয়ে এগুলো কিনে নেন ট্যানারি মালিকরা।
বিবার্তা/জিয়া