চামড়া কিনে মৌসুমী ক্রেতারা এখন দারুণ বেকায়দায়। ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন যে দর বেঁধে দিয়েছিল সেই দরে চামড়া কিনতে পারেনি বেশিরভাগ মৌসুমী ক্রেতা। তাই বিশেষজ্ঞরা এবার বেশি মাত্রায় চামড়া পাচারের আশঙ্কা করছেন। উল্লেখ্য, গত তিন বছর ধরেই ক্রমাগত চামড়ার দাম কমিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।
এবার ট্যানারি মালিকদের সংগঠন ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশ ঢাকায় লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে বর্গফুটপ্রতি ৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে এই দাম ৪০ টাকা। অর্থাৎ লবণছাড়া দাম হওয়ার কথা আরও কম। কিন্তু এই হিসাব ধরে চামড়া কিনতে পারেনি মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, কেনা দামের চেয়ে এবার আড়তে দাম কম বলা হচ্ছে তিন থেকে চারশ টাকা। এই অবস্থায় শত শত কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কায় পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
২০১৫ সালে বাংলাদেশে কোরবানির পর ৩৬ লাখ গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছিল ট্যানারি মালিকরা। প্রতি বছর কোরবানির সংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়লে এবার গরু কোরবানি ৪০ লাখের মতো হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। অথচ সারা দেশেই দর পড়ে যাওয়ায় প্রতিবেশী একটি দেশে চামড়া পাচার বাড়ার আশঙ্কা করছে খোদ প্রশাসন। এ জন্য সীমান্ত এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আমাদের খুলনা ব্যুরো জানায়, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনে সেই তা প্রক্রিয়াজাত করে লাভ থাকবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে এই অবস্থা চলে আসছে। এই অবস্থা উত্তরণ না হলে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার কথা বলছেন কেউ কেউ।
একাধিক চামড়া ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ৯০ এর দশকে খুলনায় চামড়া ব্যবসায় জড়িত ৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু ভারতে চামড়া পাচার, ট্যানারি মালিকরা টাকা সময়মতো টাকা পরিশোধ না করাসহ নানা কারণে ব্যবসায় উৎসাহ হারিয়েছেন ৪০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা। দুই দশকে ৫০ থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নেমেছে আটটিতে।
খুলনা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও আমান লেদারের স্বত্বাধিকারী আমান উল্লাহ জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা যে দরই বেঁধে দিক না কেন, মৌসুমী ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা প্রতি বর্গফুট ৬০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দরে চামড়া কিনেছেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালাম ঢালী জানান, এবার লবণের দাম হঠাৎ করে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কেবল দাম বেড়েছে তা নয়, ৭৫ কেজির বস্তায় লবণ পাওয়া গেছে ৫৭ কেজি পর্যন্ত। অথচ লবণ ছাড়া চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা যায় না।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, ট্যানারি মালিকরা বর্গফুট হিসেবে চামড়ার দর ঠিক করে দিলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনেছেন চোখের আন্দাজে। এখন আড়তে নিয়ে এসে বর্গফুট হিসেবে বেচতে গিয়ে দেখলেন ব্যবসায় নেমে ঠকে গেছেন প্রায় সবাই।
মিজান মালিক নামে এক মৌসুমী ব্যবায়ী জানান, একেকটি চামড়া তারা এক হাজার থেকে ১৬০০ টাকা দরে কিনেছেন। কিন্তু আড়তে আটশ টাকার বেশি বলা হচ্ছে না।
বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান শাহীন বলেছেন, ‘মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তেমন ধারণা না নিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে চড়া দামে চামড়া কিনেছেন। কিন্তু তাদের ভুলের দায় আড়তদাররা কেন নেবেন?’
দেশজুড়ে এই অবস্থায় পাচার ঠেকাতে জেলার সীমান্তবর্তী চারটি উপজেলার ৪০টিরও বেশি এলাকায় সতর্ক পাহারায় হয়েছে বিজিবি। ফেনীতে ৪ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক কাজী ওবায়েদুর রেজা বলেন, ‘বিজিবির দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে সীমান্ত পাহারা দেয়া। যেহেতু এখন চামড়ার মৌসুম, সেহেতু এখন এই পাচার ঠেকাতে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।’
বিবার্তা/জিয়া