পানগাঁও বন্দরের জন্য আলাদা শুল্ক নির্ধারণ নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পানগাঁও বন্দরের ব্যবহার বাড়াতে নৌপরবহন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তা নাকচ করে দেন। তবে বন্দর ব্যবহার বাড়াতে বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হবে।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে নৌপরবহন মন্ত্রী বৈঠক করেছেন। একেক বন্দরে আলাদা আলাদা শুল্কহার প্রবর্তন করা সম্ভব নয়। এতে বিশৃংখলার সৃষ্টি হবে। সব বন্দরের জন্য একই নিয়ম বহাল থাকবে। পানগাঁও বন্দরের জন্য আলাদা কোনো নিয়ম করা যাবে না। বন্দরটির ব্যবহার বাড়াতে অন্য কিছু করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা হবে।’
তিনি বলেন, ‘একই অবস্থা মংলা বন্দরের ছিল। দীর্ঘদিন বন্দরটি প্রায় অবহেলায় পড়ে ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে মংলা বন্দরের ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি বিভিন্ন পণ্য যেমন চাল, গম আমদানির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ মংলা বন্দর দিয়ে আমদানির বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে। এ ধরনের কোন ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের উপর থেকে চাপ কমাতে মংলা বন্দর উন্নয়নের পাশাপাশি সরকার পানগাঁও বন্দর নির্মাণ করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ায় পানগাঁও বন্দর দিয়ে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বন্দরটি দিয়ে আমদানি করা পণ্য পরিবহন বাড়াতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পানগাঁও বন্দরের জন্য আলাদা শুল্ক নির্ধারণের অনুরোধ করলে অর্থমন্ত্রী তা নাকচ করে দেন।
অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও অবকাঠামোগত সুবিধা থাকার পরও পানগাঁও বন্দর ব্যবহারে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে ওই বন্দরে হতাশাজনক অবস্থায় রয়েছে কনটেইনার হ্যান্ডলিং। সেক্ষেত্রে ওই বন্দরে পণ্য আনা-নেয়া ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বাড়তি ভাড়ার বিষয়টিকে করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। এই পরিস্থিতিতে পানগাঁও বন্দরকে গতিশীল করতে এবং কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়াতে ভাড়া কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সেজন্য তিন বছরের জন্য বন্দরের ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালের বিভিন্ন সেবার মূল্য ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।
সূত্র জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে পানগাঁও টার্মিনাল দিয়ে পণ্য পরিবহন ব্যয় কমলাপুর আইসিডির চেয়ে বেশি। তাছাড়া চট্টগ্রাম থেকে পানগাঁওয়ে পণ্য পরিবহনে সময় লাগে প্রায় ২৯ ঘণ্টা। অথচ সড়কপথে সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টার মধ্যেই পণ্য পরিবহন করা যায়। ওই হিসাবে ব্যবসায়ীদের পক্ষে সড়কপথেই কনটেইনার পরিবহন লাভজনক সময় এবং ভাড়ার দিকটি বিবেচনায়। ফলে পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীরা পানগাঁও বন্দর ব্যবহার করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তাছাড়া শিপিং এজেন্ট ও জাহাজ মালিকরা পানগাঁও থেকে কনটেইনার পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন। ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পানগাঁও পর্যন্ত ভাড়া ১৫০ ডলার (১২ হাজার টাকা) নির্ধারণ করা হলেও বিভিন্ন শিপিং এজেন্ট ইচ্ছামতো চার্জ আদায় করছে। তাছাড়া বন্দরের বিভিন্ন সেবার মূল্যও অপেক্ষাকৃত বেশি। যে কারণে পাঁনগাও বন্দর আশানুরূপ সচল হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, এর আগে ২০১৩ সালের শেষের দিকে পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু হয়। সড়ক ও রেলপথে পণ্য পরিবহনের চাপ কমাতেই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম বন্দরের যৌথ উদ্যোগে ঢাকার অদূরে কেরানিগঞ্জে এই বন্দরটি নির্মাণ করা হয়।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার কেরানিগঞ্জের পানগাঁও নৌপথের দূরত্ব ১৫৭ নটিক্যাল মাইল (২৯০ কিলোমিটার)। নানা জটিলতার মধ্যেও চট্টগ্রাম থেকে অল্প পরিসরে কনটেইনার পরিবহন চালু হলেও পানগাঁও বন্দরকে এখনো পুরোপুরিভাবে সক্রিয় করা যায়নি। তবে এবার বন্দরকে পুরোপুরি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেজন্যই বন্দর ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে টার্মিনালের বিভিন্ন সেবার ফি কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন শুল্ক কমানোর অনুরোধ জানানো হলে অর্থমন্ত্রী তা নাকচ করে দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থার আশ্বাস দেন।
বিবার্তা/জিয়া