বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিদ্যুতের পর এবার চালু হচ্ছে গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার পদ্ধতি। ৬০ হাজার চুলায় মিটার বসানোর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী জানুয়ারিতে। প্রাথমিকভাবে মিটার বসানোর জন্য কর্ণফুলী গ্যাস অফিসের চারদিকের প্রায় দুই বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে বেছে নেয়া হয়েছে। এখন চলছে জরিপের কাজ। মোবাইলের মতো আগে রিচার্জ করে ব্যবহার করতে হবে গ্যাস।
‘ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট’ নামের প্রকল্পটির আওতায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রি পেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম ২০১৪ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পেলেও বাস্তবে কাজ শুরু হয় গত বছরের মে মাসে। ঢাকায় দুই লাখ চুলায় ও চট্টগ্রামে ৬০ হাজার চুলায় এই মিটার স্থাপনের কথা থাকলেও এখনো চলছে জরিপের কাজ।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অধীনে চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ চুলার অনুমোদন থাকলেও এদের মধ্যে কোন ৬০ হাজার চুলাতে প্রি পেইড মিটার যুক্ত করা হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
৬০ হাজার চুলায় মিটার স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের ১৫৪ কোটি ১১ লাখ টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা), সরকারি দিচ্ছে ৮১ কোটি ৪৫ লাখ ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি দিচ্ছে ১০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে এই প্রকল্পের কাজ।
প্রকল্পটির পরিচালক প্রকৌশলী খায়েজ আহমেদ মজুদমদার বলেন, ‘এখন আমাদের সার্ভের কাজ চলছে। যে গতিতে কাজ চলছে তাতে আগামী জানুয়ারিতে হয়তো মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করতে পারি।’
প্রকৌশলী খায়েজ আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘ষোলশহরে অবস্থিত কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অফিসকে কেন্দ্র করে চারপাশের প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকার চুলাগুলোকে বাছাই করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে বহদ্দারহাট, জামালখান, খুলশি, ওআর নিজাম রোড, ষোলশহর হয়ে মুরাদপুর পর্যন্ত এলাকাটি নির্বাচিত হতে পারে। তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
তবে কর্ণফুলী গ্যাস অফিসে বসবে প্রি-পেইড মিটারের নিয়ন্ত্রণ কক্ষটি। চুলাতে মিটার লাগানোর পর কোথাও কোথাও অকেজো হয়ে গেলে কিংবা সেবা দেয়ার প্রয়োজন হলে যাতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে কর্মীরা গিয়ে দ্রুত মেরামতের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়েছে। মূলত গ্যাসের অপচয় রোধে এই পদ্ধতি নেয়া হয়েছে। এতে আর কেউ গ্যাস অপচয় করবে না।
বর্তমানে ভবনগুলোতে রাইজার থেকে একটি ভবনে একটি পাইপ দিয়ে গ্যাসের লাইন যায়। আর সেই পাইপের সাথে শাখা প্রশাখার মতো পাইপ যুক্ত করে বিভিন্ন ফ্লোরের গ্যাসের চুলায় লাইন দেয়া হয়। কিন্তু এই পদ্ধতিতে মিটার বসানো যাবে না। এখন একটি ভবনে যতটি চুলা (ডাবল বার্নার) থাকবে রাইজার থেকে ততোটি পাইপ বের হয়ে বিভিন্ন ফ্লোরে চলে যাবে। এতে একটি ভবনে ১২টি চুলা থাকলে রাইজার থেকে ১২টি জিআই পাইপের লাইন থাকবে। আর ১২টি পাইপের সাথে মিটার যুক্ত থাকবে। তবেই মিটার ভিত্তিক পৃথকীকরণ গ্যাস লাইন থাকবে।
চুলায় প্রি পেইড মিটার স্থাপনে এককালীন কোনো টাকা নেবে না কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তবে প্রতি মাসে একটি নির্ধারিত হারে টাকা কর্তন করা হতে পারে। কতো টাকা কতোদিন কাটবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অপরদিকে রাইজার থেকে চুলা পর্যন্ত পৃথক পাইপ লাইন নেয়ার জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হতে পারে। অর্থাৎ রাইজার থেকে গ্রাহকরা নিজ খরচে পাইপ টেনে গ্যাসের চুলায় লাইন নেবে। কারণ এই প্রকল্পে শুধু মিটারের টাকা ধরা হয়েছে।
বিবার্তা/জিয়া