লাইটারেজ সংকটে পণ্য খালাসে অচলাবস্থা

লাইটারেজ সংকটে পণ্য খালাসে অচলাবস্থা
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৯:০৮:০৭
লাইটারেজ সংকটে পণ্য খালাসে অচলাবস্থা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+
লাইটারেজ জাহাজের ঘাটতি থাকায় পণ্য খালাস করতে পারছে না চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করা মাদার ভ্যাসেলগুলো। অথচ এই মুহূর্তে বহির্নোঙরে পঞ্চাশটির মত মাদার ভ্যাসেল আমদানিকৃত লাখ লাখ টন পণ্য নিয়ে অপেক্ষা করছে। প্রতিটি জাহাজেরই রয়েছে পণ্য খালাসের তাড়া। অথচ কিছু আমদানিকারক ছয় শতাধিক লাইটারেজ জাহাজকে বিভিন্ন ঘাটে ভাসমান গুদাম বানিয়ে রেখেছেন।
 
কিন্তু মঙ্গলবার বরাদ্দ দেয়ার মতো লাইটারেজ জাহাজ ছিল মাত্র ১৩টি। এতে করে কোন কোন জাহাজকে সেগুলো বরাদ্দ দেয়া হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় বার্থিং মিটিংই বাতিল করে দেয়া হয়েছে। কোন মাদার ভ্যাসেলকেই লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। গত রবিবারও একই অবস্থা হয়েছিল। 
 
এভাবে প্রায় প্রতিদিনই প্রয়োজনীয় লাইটারেজ জাহাজের অভাবে বার্থিং মিটিং বাতিল করতে হচ্ছে। অথচ অন্যদিকে শত শত লাইটারেজ জাহাজ ভাসমান গুদাম হয়ে দেশের বিভিন্ন ঘাটে অলস বসে আছে। গুদাম ভাড়ার চেয়ে লাইটারেজ জাহাজের ভাড়া কম হওয়ায় বহু আমদানিকারক জাহাজকেই গুদামের মতো ব্যবহার করছেন বলে জানা গেছে।
 
লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর এবং বন্দরের ওভারসাইড থেকে পণ্য পরিবহন করে এমন এক হাজারের মতো লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে দেশে। চাহিদা অনুযায়ী লাইটারেজ জাহাজ থাকলেও গত কিছুদিন ধরে নানাভাবে এই খাতে সংকট তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে লাইটারেজ জাহাজের অভাবে যখন তখন পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। আর এতে করে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজের জট তৈরি হচ্ছে। 
 
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ৯২ শতাংশ পরিবাহিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। মাদার ভ্যাসেলের মাধ্যমে এসব পণ্য নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। কিন্তু বন্দরে আসা প্রতিটি জাহাজ জেটিতে বার্থিং নিয়ে পণ্য খালাস করার সুযোগ পায় না। চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার লম্বা এবং ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজগুলো জেটিতে ভিড়ে পণ্য খালাস করে। এর থেকে বড় আকৃতি এবং বেশি ড্রাফটের জাহাজ বহির্নোঙরে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাস করা হয়।
 
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাসের জন্য অপেক্ষা করছিল ৫০টি মাদার ভ্যাসেল। এসব জাহাজে ক্লিংকার, জিপসাম, কয়লা, চিনি, লবণ, সারসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে। এই ৫০টি মাদার ভ্যাসেলের প্রতিটিতে দুটি করে লাইটারেজ জাহাজ দিতে হলেও জাহাজ লাগে একশটি। কিন্তু মঙ্গলবার লাইটারেজ জাহাজ ছিল মাত্র ১৩টি। 
 
জানা গেছে, আজকালের মধ্যে আরো মাদার ভ্যাসেল আসছে। এই অবস্থায় লাইটারেজ জাহাজের সংকট আরো প্রকট হয়ে উঠবে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।
 
লাইটারেজ জাহাজের সংকটের জন্য আমদানিকারক এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের দায়ী করেছেন লাইটারেজ জাহাজ মালিকেরা। তারা বলেছেন, দেশে সর্বমোট লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে এক হাজারের মতো। এরমধ্যে ছয়শ’ লাইটারেজ জাহাজকে ভাসমান গুদাম বানিয়ে বিভিন্ন ঘাটে আটকা রাখা হয়েছে। এক দেড়মাস আগে পণ্য বোঝাই করেছে এমন জাহাজও ঘাটে ভাসছে। 
 
আমদানিকারকেরা পণ্য খালাস না করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ডব্লিউটিসি থেকে বলা হয়েছে দেশের বিভিন্ন ঘাটে যেই ছয় শতাধিক জাহাজ ভাসছে সেগুলোতে আট লাখ টনেরও বেশি পণ্য বোঝাই করে রাখা হয়েছে।
 
চট্টগ্রাম বন্দরে আসা বিদেশি মাদার ভ্যাসেলগুলো ৫দিনের মধ্যে চলে যাওয়ার টার্গেট করে আসলেও এখন পনের দিনেও বন্দর ছাড়তে পারছে না। বিষয়টি চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তির জন্যও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একটি মাদার ভ্যাসেল একদিন অলস বসে থাকলে গড়ে দশ হাজার ডলার ফ্রিক্সড অপারেটিং কস্ট বা এফওসি বাবদ গচ্ছা দিতে হয়। 
 
একটি জাহাজকে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দশ দিন বেশি অপেক্ষা করতে হওয়ায় অন্তত এক লাখ ডলার বা আশি লাখ টাকার ক্ষতির কবলে পড়তে হচ্ছে। এই টাকার যোগান দেশের আমদানিকারক বা পরোক্ষভাবে ভোক্তাদেরই দিতে হচ্ছে।
 
চট্টগ্রামে লাইটারেজ সংকট প্রসঙ্গে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের নেতা এবং বন্দর লাইটারেজ ঠিকাদার সমিতির সভাপতি হাজি সফিক আহমেদ বলেন, সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। প্রয়োজনীয় জাহাজের অভাবে বহির্নোঙরের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বেশির ভাগ লাইটারেজ জাহাজই অঘোষিতভাবে গুদামে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে বলেও তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com