সাগর পথে বিদেশ থেকে আনা জ্বালানি তেল পরিবহন হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। কারণ বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল পরিবহনের নিয়ম কানুন পাল্টে যাচ্ছে। পাল্টে যাচ্ছে তেল পরিবহনে নিয়োজিত জাহাজের ডিজাইনও। এক্ষেত্রে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার প্রস্তুতি নেই বাংলাদেশের।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) বহরে থাকা দুটি জাহাজই জ্বালানি তেল পরিবহনের অযোগ্য ঘোষিত হতে পারে। এতে করে নতুন করে জাহাজ কেনা না হলে বাংলাদেশের জ্বালানি তেল পরিবহন পুরোপুরিভাবে বিদেশি জাহাজের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
দেশের জ্বালানি খাতের প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্রের তলানি থেকে উৎপাদিত কিছু তেল বর্তমানে বাজারে সরবরাহ হলেও সিংহভাগ তেল আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বর্তমানে বছরে পঞ্চাশ লাখ টনেরও বেশি জ্বালানি তেল আমদানি করে।
সূত্র মতে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত জ্বালানি তেল বড় বড় মাদার ভ্যাসেলে বোঝাই করে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আনা হয়। ওখান থেকে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ যোগে জ্বালানি তেল গুপ্তাখালস্থ ডিপোতে নিয়ে আসা হয়। তেল পরিবহন বাবদ সরকার শত শত কোটি টাকা বিদেশী শিপিং কোম্পানিকে প্রদান করে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন যদি নিজেরাই এই তেল পরিবহনের ক্ষমতা সম্পন্ন একটি জাহাজ কিনে তাহলে পুরো টাকাটাই বিএসসি আয় করতে পারতো। বাইরে কোথাও ভাড়ায় না গিয়েও কেবলমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরে চলাচল করেও মাদার ট্যাংকারটি লাভজনক একটি জাহাজ হয়ে ওঠতো। কিন্তু বিএসসির বহরে মধ্যপ্রাচ্যে চলাচল করার মতো কোন জাহাজ নেই।
দীর্ঘদিনের পুরনো ‘এমটি বাংলার সৌরভ’ এবং ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ অয়েল ট্যাংকার দুইটি দিয়ে বহির্নোঙর থেকে গুপ্তাখাল পর্যন্ত এলাকায় জ্বালানি তেল লাইটারিং করা হয়। দেশের আমদানিকৃত জ্বলানি তেলের পুরোটাই এই দুটি জাহাজ লাইটারিং করে। কিন্তু এই খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। পাল্টে যাচ্ছে জ্বালানি তেল পরিবহনের নিয়ম কানুন। সমুদ্রের পরিবেশ এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে বর্তমান বিশ্ব অনেক বেশি সোচ্চার।
জানা গেছে, সিঙ্গেল হাল অয়েল ট্যাংকারে জ্বালানি তেল পরিবহন নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। অয়েল ট্যাংকারে বাইরের স্টিলের খোলসের আবরণ (হাল) দুটি দিতে হবে। যাতে একটি আবরণ কোন কারণে নষ্ট হলেও তেল যেন সাগরে না পড়ে। বাইরের খোলসটি তেল আটকে রাখার জন্য দেয়া হবে। এতে অয়েল ট্যাংকারের নির্মাণ খরচও বর্তমানের তুলনায় অনেক বেড়ে যাবে।
সূত্র মতে, নয়া ডিজাইনের অয়েল ট্যাংকার চালু করে বর্তমানের ট্যাংকারগুলোর চলাচলের উপর বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের এই দুইটি জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দিতে হবে। পৃথিবীব্যাপী সিঙ্গেল হাল অয়েল ট্যাংকার নির্মাণও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চলাচলও কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। এখন যত অয়েল ট্যাংকার নির্মিত হচ্ছে তার সবগুলোই ডাবল হালের। এই অবস্থায় বিএসসির বহরে থাকা দীর্ঘদিনের পুরানো জাহাজ দুটির চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে কেবল বিএসসিই নয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনও জ্বালানি তেল পরিবহনে সংকটে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জাহাজ নিয়ে বেশ সংকটে রয়েছি। দুটি অয়েল ট্যাংকার ছাড়া আমাদের আর তেমন কোন জাহাজ নেই। এই দুটি জাহাজও কখন বন্ধ করে দিতে হয় তা অনিশ্চিত। আমরা ছয়টি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। তবে আপাতত অয়েল ট্যাংকার কেনার কোন প্রকল্প নেই।’
একই ইস্যুতে বিএসসির অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এই ব্যাপারে আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করবো। বিএসসির যদি জাহাজ না থাকে সেক্ষেত্রে আমাদেরকে বাইরের অয়েল ট্যাংকার ভাড়া করতে হবে।’ ‘জ্বালানি তেল পরিবহনতো আর বন্ধ করে রাখা যাবে না’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিবার্তা/জিয়া