বাংলাদেশে তৈরি সফটওয়্যার ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে এবং এর প্রসার দিন দিন বাড়ছে। অথচ বাংলাদেশেই এই সফটওয়্যারের কদর দিনদিনই কমছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিসেস বা বেসিসের উদ্ধৃতি দিয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আনন্দবাজার বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
আবেগঘন ও তথ্যবহুল এই প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়, ‘ঘরের জিনিস হেলাফেলা, বিদেশি পণ্যে মনগলা। ভালমন্দ যেমনই হোক বেশি দামে ঘরে তোলা। বিচিত্র মানসিকতা। ঢাকা-কলকাতার বাঙালি এরকমই। কেনাকাটায় ফরেন গুডস হলেই হল। আর কথা নেই। চমৎকার দেশি জিনিস পাশে থাকলেও নেড়েচেড়ে দেখবে না। বাঙালির অদ্ভুত স্বভাবটাই বিদেশি সংস্থার মূলধন। দাপিয়ে বাণিজ্য করে বাংলাদেশ-ভারতে। এত বড় বাজার পাবে কোথায়। আবার দেশি জিনিস যখন বিদেশে কদর পায় তখন দেশের লোক চমকায়। অবাক হয়ে ভাবে, আমাদের জিনিস আমরা নিচ্ছি না, ওরা নেয় কী করে। একশোর বেশি দেশ বাংলাদেশের সফটওয়্যারের জন্য পাগল। নিচ্ছে চোখ বুজে। গুণের তুলনা নেই। দামে কম। রফতানি বাড়তে বাড়তে ১০০ কোটি ডলারের মুখে। সফটওয়্যারের সবচেয়ে বড় সংগঠন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিসেস বা বেসিস-এর সদস্য ১৮৫টি কোম্পানি বিশ্ববাজারে চুটিয়ে ব্যবসা করছে। পাশাপাশি ফ্রিলান্সাররাও রফতানি বাড়াচ্ছে। তার সবটাই বৈধ চ্যানেলে নয় বলে আয়টা অস্পষ্ট। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসেবেও ঠিকঠাক ধরা পড়ছে না। আয় লুকানোর কোনও কারণ নেই। সরকার ট্যাক্স-ভ্যাট কিছুই নেয় না। দরকার শুধু রফতানির বৈধ কাগজপত্র পেশ। তাতেই আলস্য। এ যেন ফ্রি পাস পাওয়ার সুযোগ থাকতেও, না নিয়ে বিনা টিকিটে সফর।’
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সফটওয়্যার চলছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায়। আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় লুফে নিচ্ছে। ভুটানের ই-জিপি, নেপালের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের সফটওয়্যারে। চমৎকার কাজ। দাম অর্ধেক। অন্য দেশে যেটা ১০ কোটি, বাংলাদেশেরটা মাত্র ৫ কোটি।
প্রতিবেদনে ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার পরই বাংলাদেশে সফটওয়্যারে উন্নতি। দশ বছর আগেও ভরসা করতে হত বিদেশের উপর। এখন তার দরকার হয় না। উল্টে দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে বিদেশে পাঠায়। ডলার আয়ের নতুন রাস্তা প্রশস্ত। দরকার দেশের বাজার বাড়ান। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় আইন আছে, সব দেশি কোম্পানিকেই অন্তত ৫০ শতাংশ দেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। এ নিয়মটা আরও অনেক দেশে চালু। বাংলাদেশ একই রাস্তায় হাঁটলে ক্ষতি কী। দেশের বাজারে দেশি সফটওয়্যারের ব্যবহার যেভাবে কমছে সেটা উদ্বেগের। বিক্রি ৮ কোটি ডলার থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলারে। দেশের ব্যাঙ্কিংয়ে দেশি সফটওয়্যার মাত্র ৩৬ ভাগ। বাকিটা বিদেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে সতর্ক। দু’বছরে পরিস্থিতি পাল্টানোর পরিকল্পনা। সফটওয়্যার পার্ক তৈরিতে জোর। ১২টি পার্ক তৈরির কাজ প্রায় শেষ। ঢাকায় কাওরান বাজারে জনতা সফটওয়্যার পার্কে ১৭টি কোম্পানির কাজ শুরু। গাজীপুরের কালিয়াকেরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে বারো মাসেই চালু হয়ে যাবে তথ্য প্রযুক্তির কাজ। যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে আগ্রহীদের জায়গা দেওয়ার কাজ শেষ। মহাখালী আইটি ভিলেজ, বরেন্দ্র সিলিকন সিটি রাজশাহী, ইলেকট্রনিক সিটি সিলেট, চন্দ্রদ্বীপ ক্রাউডচরে নির্মাণ অব্যাহত। এক লাখ ছেলেমেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আইটি সেক্টরে কাজের উপযুক্ত করে তোলা হচ্ছে। এসবই বিদেশি সংস্থার মাথাব্যথার কারণ।
বিবার্তা/জিয়া