বাংলাদেশে ২০০৮ সালে আইসিটির (তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি) বাজারের মোট পরিমাণ ছিল ২৬ মিলিয়ন ডলার, কিন্তু বিগত সাত বছরে এই শিল্পের বাজার বৃদ্ধি হয়ে বর্তমানে ৬০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বৈশ্বিক পর্যায়ে একটি অভাবনীয় চিত্র।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগ গ্রহণ করতে এবং এই খাতে আজ সরকারের অভাবনীয় উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় নিরলসভাবে ক্রমাগত পরামর্শ প্রদান করে আসছেন।
পলক বলেন, এছাড়াও আইসিটি বিভাগ এবং ডিজিটাল-এর ক্ষেত্রে তার (জয়) গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের ফলে গত সাত বছরে এতে একটি নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। গৃহিত পদ্ধতির কারণে তা এখন এই সেবা পৌছে গেছে সাধারণ মানুষের দরজায়।
বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা ও প্রবর্তিত রূপকল্প-২০২১-এর ধারণা নিয়ে দেশ এখন বিশ্বের ডিজিটাল সড়কে পৌঁছে গেছে। সুদৃঢ় তদারকি ও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি, বিচক্ষণ নীতি বাস্তবায়ন ও পরিশ্রমী প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ এখন উজ্জ্বল দ্যুতি ছড়াচ্ছে।
এই খাতে সাত বছর আগে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ হয়েছিল ২০০ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে গিয়ে তা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকায়।
২০০৮ সালে দেশের গ্রাহকরা স্বল্প পরিমাণের ধীরগতির ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সেবা পেতে যেখানে ২৭ হাজার টাকা ব্যয় করতেন, সেখানে বর্তমানে তারা নামমাত্র মূল্য মাত্র ৪০০ টাকায় আরো দ্রুতগতির ও ব্যপক পরিমাণের সেবা গ্রহণ করছেন।
আইসিটি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ’র ভিশন একটি উত্থানের গল্প, যা মাইলফলক হয়ে জ্বলজ্বল করছে।
বিটিআরসির তথ্য মতে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটেছে। ২০০৮ সালে দেশে ইন্টারনেট সাবস্ক্রিপশন সংখ্যা ছিলো ৪০ লাখ, বর্তমানে তা ছয় কোটির মাইলফলক অতিক্রম করে প্রায় ছয় কোটি ৩৯ লাখে পৌঁছে গেছে।
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন কর্মসূচির আওতায় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও ওয়ার্ডে মোট পাঁচ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এখন গ্রামে বসে যে কোনো লোক মাত্র পায়ে হাটা দুরত্বের মধ্যে এই সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। পাশাপাশি আট হাজার ডাকঘরেও ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
একসেস টু ইনফরমেশন কর্মসূচির ডাটার মাধ্যমে ডিজিটাল সেন্টারগুলো থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ভূমি নিবন্ধন, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, সরকারি ফরম ডাউনলোড, জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন, অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরির তথ্য এবং মোবাইল ব্যাংকিং সহ সরকারি ও বেসরকারি ২০০ ধরনের সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
এখন সারাদেশে ১২টি হাইটেক পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং বাস্তবায়নের জন্য পুরোদমে কার্যক্রম চলছে। এতে লাখ-লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
গত বছর সরকার ৬০ হাজার বর্গফুটের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক চালু করেছে। এতে ১৬টি কোম্পানি কাজ করছে, আরো ৩৪টি আসার পরিকল্পনা করছে।
চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের প্রথম আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার চালু করেছে, এতে আগামী বছর নাগাদ এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পলক জানান, আইসিটি মন্ত্রণালয় সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার ট্যাব বিতরণ করেছে। এখন এর হার ৩৫ শতাংশ, যা ২০০৮ সালে ছিল ০.৩ শতাংশ।
তিনি বলেন, সকলের জন্য শিক্ষার সুযোগ করে দিতে দেশের এক লাখ ৭০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ও ডিজিটাল শ্রেণীকক্ষ এবং কম্পিউটার ল্যাব তৈরীর কাজ চলছে।
সরকারি হিসাব মতে, প্রায় ২৩হাজার ৫০০টি বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করা হয়েছে, পাশাপাশি বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পাঁচ হাজার ৩০০টি ল্যাব করা হয়েছে। উপরন্তু, ২৪ হাজার ১২২ জন শিক্ষক সরঞ্জামের উপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, ৩১ হাজার ৩৪০টি প্রতিষ্ঠানে শিগগিরই ইন্টারনেট সংযো সহ ল্যাপটপ দেয়া হবে।
বিবার্তা/জিয়া