‘এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানিলন্ডারিংয়ের(এপিজি) মূল্যায়নে বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত বিশ্বের সমতুল্য। এসব অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের যে ঘাটতি ছিল তার বেশিরভাগই পূরণ হয়েছে। আমরা এখন ঝুঁকিমুক্ত।’
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডেপুটি গভর্নর ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। এপিজি ১৯তম বার্ষিক সম্মেলনের মূল্যায়ন প্রতিবেদনের বিষয়ে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিএফআইইউসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
তবে এপিজির এ বিষয়ে এফএটিএফের ৪০টি সুপারিশের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো হলেও আরজেএসসির নিবন্ধন প্রক্রিয়া, বীমা ও পুঁজিবাজারের তদারকি ব্যবস্থাসহ কিছু বিষয়ে তাদের প্রশ্ন রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।'
এপিজির এবারের বার্ষিক সম্মেলনটি বাংলাদেশে হওয়ার কথা ছিল। তবে গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে তা যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করা হয়।
সম্প্রতি গুলশান, শোলাকিয়াসহ বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার পরও এ ধরনের ভালো রেটিং কীভাবে সম্ভব হলো— এমন প্রশ্নের জবাবে রাজী হাসান বলেন, তৃতীয় পর্বের এ মূল্যায়ন হয়েছে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে। এবারের মূল্যায়নে এসব বিষয়ের কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে এপিজির বার্ষিক সভায় সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা ও হামলা পরবর্তী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্থ পাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন এজেন্সির দায়-দায়িত্ব ভাগ করা আছে। এ বিষয়ে বিএফআইইউর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দুর্নীতি দমন কমিশন কাজ করছে। আর সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত সব টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে বিষয়টি তেমন না। দেশের বাইরে বৈধভাবে বাস করেন এমন অনেক বাংলাদেশির টাকা সেখানে রয়েছে।
রাজী হাসান আরও জানান, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণকারী আন্তঃদেশীয় সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ) ৪০টি সুপারিশ দেয়। এর মধ্যে ছয়টিতে বাংলাদেশ সঙ্গতিশীল, ২০টি মোটামুটি সঙ্গতিশীল এবং ১৪টি আংশিকভাবে সঙ্গতিশীল রেটিং পেয়েছে। ১১টি ইমিডিয়েট আউটকামের মধ্যে একটিতে সংহত, ছয়টিতে মধ্যপন্থী এবং চারটিতে নিম্নমানের রেটিং দেওয়া হয়েছে।
রাজী হাসান বলেন, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এপিজি ও এর সদস্য ৪১টি রাষ্ট্র বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকমানের স্বীকৃতি দিয়েছে। এতে করে এলসি খোলা, বিদেশি বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুবিধা পাবে। এপিজির এ প্রতিবেদন দেখে সবাই এখানে বিনিয়োগকে ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে দেখবেন।
তিনি বলেন, আগের রেটিং অনুযায়ী বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন রিভিউ গ্রুপভুক্ত (আইসিআরজি) হওয়ার যে আশঙ্কা ছিল, তা আর নেই। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রেটিং নরওয়ে, শ্রীলংকার চেয়ে ভালো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক উন্নত দেশের চেয়েও ভালো।
কিছু ক্ষেত্রে নিম্নমানের রেটিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যৌথ মূলধনী কোম্পানির নিবন্ধকের কার্যালয়ের (আরজেএসসি) নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে এপিজির কিছু প্রশ্ন রয়েছে। আর ব্যাংক খাতের তদারকি ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও আর্থিক খাতের সার্বিক তদারকি, বিশেষ করে বীমা ও পুঁজিবাজারের তদারকি ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া ঝুঁকি ব্যবস্থা নিয়েও আপত্তি রয়েছে তাদের। এপিজির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। সেখানে কিছু সুপারিশ রয়েছে। সেসব সুপারিশের আলোকে বাংলাদেশ কাজ করবে।
বিবার্তা/মৌসুমী