চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা মীরসরাই থেকে সৈকতনগরী কক্সবাজার পর্যন্ত ২৩০ কিমি দীর্ঘ ফোরলেনের মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। এতে মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে চট্টগ্রামের বহুমুখী উন্নয়নের আরেক ধাপ অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আগামী ১৪ অক্টোবর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বাংলাদেশ সফরে এলে এ মেরিন ড্রাইভ নিয়ে আলোচনা হবে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায় মিরসরাই-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের উপকূল রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের প্রক্রিয়ার অগ্রগতি অনেকটাই এগিয়ে গেছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে সড়ক ও জনপদ বিভাগ থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় হয়ে চীনে গেছে।
বিশাল বাজেটের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরে এর বিশেষ সুফল পাবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়। এই বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) এর কনসালটেন্ট আব্দুল কাদের খান বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য আবেদিত দেশি বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে যাচাইবাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে ডেভেলপার গ্রুপকে। বর্তমানে এর প্রক্রিয়া চলমান।
আবার মিরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইখের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সবকিছুই ঠিকঠাক এগিয়ে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই আমরা কোন ভালো খবর জানাতে পারবো আশা করছি।
এই বিষয়ে চট্টগ্রামের সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল আলম জানান, মেরিন ড্রাইভ সড়কটির বিষয়ে অগ্রগতির বিভিন্ন বিষয়ে শুনলেও বিশেষ কোন তথ্য দিতে পারছি না। তবে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া বলেন, মিরসরাই থেকে চট্টগ্রামের নেভাল এলাকা পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার এক ধাপে, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ২০০ কিলোমিটার পরবর্তী ধাপে এবং কক্সবাজার থেকে টেকনাফ আরেক ধাপে করার প্রস্তাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ঈদুল আজহার দুদিন পর সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কক্সবাজার ভ্রমণকালে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন পর্যটনের অগ্রগতি ও সড়ক উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করতে চীনকে দেয়া প্রস্তাবনা অনেকদূর এগিয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্টের আসন্ন বাংলাদেশ সফরে এর বিশেষ প্রতিফলন পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায় ১৪ অক্টোবর ঢাকা আসছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। তার সফরে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সোনাদিয়া ও চট্টগ্রাম বন্দরে যাতায়াত, পর্যটনশিল্পের বিকাশ, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও মিরসরাই উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রকল্পাধীন নানান বিষয়ের দ্রুত অগ্রগতি হবে। একইসঙ্গে নিশ্চিত হবে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ও অবকাঠামোর নিরাপত্তা।
কক্সবাজার সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, এই মেরিন ড্রাইভ সড়ক চট্টগ্রামের মিরসরাই মুহুরী সমুদ্র উপকূল তথা মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রকল্প ফটক থেকে চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমি-প্রস্তাবিত নতুন টানেল-চাতরী-চৌমুহনী, বাঁশখালী-পেকুয়া-চৌফলদণ্ডী-খুরুশকূল সমুদ্র উপকূল হয়ে কক্সবাজার শহরের কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। ২৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনের এ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উচ্চতা হবে ১৫ ফুট। তার মধ্যে চট্টগ্রাম অংশে ৮০ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার অংশে পড়বে ১৫০ কিলোমিটার। আর এটি কক্সবাজার থেকে টেকনাফের সাবরাং পর্যন্ত নির্মিত ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। এর মধ্যে কুমিরা-ভাটিয়ারী এলাকায় প্রায় ৯ কিলোমিটার স্থানে বেড়িবাঁধ না থাকায় কিছুটা বেগ পেতে হবে। এখানে নতুন করে বেড়িবাঁধ নির্মাণসাপেক্ষে কাজ এগোবে। প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
ইতিমধ্যে মেরিন ড্রাইভের প্রাথমিক অংশ হিসেবে মিরসরাই উপজেলার অর্থনৈতিক জোন এলাকায় টু লেন সড়কের ৮ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজও এগিয়ে গেছে। আর এই সড়ক ফোর লেনে রূপান্তরিত হয়ে চট্টগ্রামের সাথে যোগ হয়ে কক্সবাজার পৌঁছুবে, যা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বিবার্তা/জিয়া