আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন আরও ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে যাচ্ছে। সরকারের ভিশন অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট স্থাপিত ক্ষমতা ১২ হাজার ৭৮০ মেগাওয়াট এবং দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৬ শতাংশ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। এখনও প্রায় ২৪ শতাংশ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ভিশন অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে সব জনগণকে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা ও পুঁজিঘন এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ ও সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধি অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
পিডিবি চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি খাতে প্রায় ৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৬টি এবং বেসরকারি খাতে প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। নির্মাণাধীন বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে গ্যাস/ডুয়েল-ফুয়েল ভিত্তিক মোট প্রায় ৪০০০ মেগাওয়াট এবং কয়লাভিত্তিক প্রায় ৫৯০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন। এ সমস্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০১৬ হতে ২০২১ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে।
প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, বিউবো (পিডিবি) সবসময়ই কম মূল্যে বিদ্যুৎ বিক্রি করে। বর্তমানে বিউবোর প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ পাঁচ টাকা পঞ্চাশ পয়সা এবং বিক্রয় মূল্য চার টাকা নব্বই পয়সা। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান জানান, চলতি অর্থবছরে বিউবোর প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোকসান হতে পারে।
তিনি বলেন, বিউবোকে একটি দক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ট্যারিফ নির্ধারণ করা অত্যাবশ্যক। বিদ্যুতের মূল্যহার সব সময়েই সরবরাহ ব্যয় এর তুলনায় কম হওয়ায় বিউবো কখনোই আর্থিকভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত হতে পারেনি। এ ঘাটতি মোকাবিলার জন্য সরকার প্রতি বছর বিউবোকে বাজেটারি সাপোর্ট (ভর্তুকি) দিতে হয়।
পিডিবি চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে বিদ্যুৎখাতে মোট সঞ্চালন ও বিতরণ সিস্টেম লস প্রায় ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ এবং বিউবোর বিতরণ সিস্টেম লস ১১ দশমিক ০১ শতাংশ। তিনি বলেন, বিতরণ খাতে সিস্টেম লস সিঙ্গেল ডিজিটে আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনাসমূহ ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নের ফলে সিস্টেম লস হ্রাস পাচ্ছে।
চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে বিউবোর গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার। প্রতি বৎসর এ গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে গ্রাহক সংখা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৪৫ লাখ হবে। তিনি জানান, বিউবোর সব বিতরণ জোনসমূহে পুরাতন মিটার পরিবর্তন করে নতুন ডিজিটাল মিটার প্রতিস্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। প্রায় ৫৬ হাজার প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। শীঘ্রই আরও সাড়ে ১০ লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হবে যার মধ্যে সাড়ে ৬ লাখ মিটার স্থাপনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পিডিবি চেয়ারম্যান বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সফল হওয়ার পরও বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বাড়বে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আরও প্রায় ৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া বড় প্রকল্পের মধ্যে মহেশখালীতে প্রতিটি ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিকল্পনাধীন রয়েছে যা ২০২২ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে চালু হবে।
বিবার্তা/জিয়া