চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে কর্ণফুলীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে আগামী ১৪ অক্টোবর। এ টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চট্টগ্রাম আসছেন চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। এ বিষয়ে চীনের সাথে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
টানেলের জন্য প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকার মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ইতিমধ্যে নয় হাজার কোটি টাকার প্রাথমিক অর্থায়নে সম্মত হয়েছে। এ টাকা দিয়ে কাজ শুরু করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় অর্থ চীনই যোগান দেবে। আগামী ২০১৯ সালে এ টানেল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কেবল টানেলই নয়, একইসাথে চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও নগরীর অন্যান্য ফ্লাইওভার পুরোদমে চালু হলেই কেবল বন্দরনগরীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। টানেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের স্বপ্নের দুয়ার খুলে যাবে উল্লেখ করে তারা বলেন, আগামী ৫/৭ বছরের মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামে এক লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ ঘটবে। এ বিনিয়োগ এবং ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় নিশ্চিত করতে হলে চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। চট্টগ্রামের যে কোন উন্নয়ন কাজই বন্দরকে মাথায় রেখে করার কথাও উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
চীনের সাংহাইর মতো চট্টগ্রামেও এক নগরে দুটি শহর গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটির মাধ্যমে বিদ্যমান চট্টগ্রাম মহানগরীর চেয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটি বড় শহর গড়ে তোলা সম্ভব হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিস্তৃত এলাকা যুক্ত হবে মূল শহরের সাথে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ টানেল দেশের জিডিপিতে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সমীক্ষায় তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। উন্নত বিশ্বের কোথাও নদীর এক পাড়ে শহর নেই। এমনকি থাইল্যান্ডের মতো দেশেও নদীর উভয় পাড়ে শহর রয়েছে।
বছর কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এ প্রকল্প বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেন। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম টানেল নির্মাণের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন।
এ লক্ষ্যে চীনের ‘চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে’ (সিসিসিসি) প্রকল্পটির পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের ১৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাছাই করা হয়। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সমীক্ষা করে সিসিসিসি রিপোর্ট প্রদান করে।
ওই রিপোর্টে টানেলের ব্যাপারে বিস্তারিত সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, নদীর তলদেশে টানেল হবে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এছাড়া পূর্ব প্রান্তের ৪ দশমিক ৯৫২ কিলোমিটার ও পশ্চিম প্রান্তে ৭৪০ মিটার সংযোগ সড়কসহ টানেলের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৯ দশমিক শূন্য ৯২ কিলোমিটার।
এছাড়া টোল বুথ ও টোল প্লাজা নির্মাণ করতে হবে ৭২০০ বর্গমিটার। চার লেনের টানেলে উভয় পাশে দুই লেন করে থাকবে। দুটি টিউব নির্মিত হবে। প্রতিটি টিউবের ব্যাস হবে ১০দশমিক ৮ মিটার। টানেলটি কর্ণফুলীর কমপক্ষে ৪২.৮ মিটার গভীর দিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বিবার্তা/জিয়া