জল চিকিৎসা নামে একটি পদ্ধতি চিকিৎসা জাপানি মেডিকেল সোটাইটি খুঁজে বের করেছে যা ১০০% সুস্থতা প্রদানে সক্ষম বলে তারা দাবি করেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে চার গ্লাস পানি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
কিন্তু এই পানি পান করা কি আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? ভালো হলে কেন ভালো? কীভাবে উপকার পাওয়া যায় সকালে পানি পান করলে? আর কতটুকুই বা পানি পান করতে হবে?
চিকিৎসকদের মতে, সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ভারতে প্রাচীন যোগগুরু বা ঋষিরা তাদের সাধনায় খালি পেটে পানি পানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে স্থান দিয়ে এসেছেন। জাপানেও চিকিৎসা পদ্ধতি খালি পেটে পানি পান। একটু নিয়ম মেনে করলে শরীরের জন্য আরও ভালো হবে।
প্রথম দিকে এটা অনেক বেশি মনে হলেও কিছু দিন এভাবে পানি খেলে বিষয়টি সহজেই আয়ত্ত হয়ে যায় এবং উপকারিতাও টের পাওয়া যায়। পানি খাওয়ার অল্প কিছুণ অন্য কিছু মুখে না দেয়াই ভালো। এ উপায়ের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং এটি পরিপাক ক্রিয়ার জন্য ভীষণ উপকারী। গবেষকেরা বলেছেন, সকালে খালি পেটে পানি কেবল পাকস্থলী পরিষ্কারই নয় শরীরের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
প্রথমত, এ অভ্যাস মলাশয়কে ঠিকঠাক ও সচল রাখতে সাহায্য করে। পরিপাক ক্রিয়া থেকে সঠিকভাবে নানা পুষ্টি উপাদান গ্রহণে শরীরকে সাহায্য করে। ভালো হজমশক্তি আপনা থেকেই অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে উপকারে আসে।
দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত পানি ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর রাখে। রক্ত থেকে টক্সিন ও বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সাহায্য করে পানি। শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এটি। এ ছাড়াও পানি নতুন রক্তকোষ এবং মাসল সেল জন্মানোর প্রক্রিয়াতেও সাহায্য করে। ওজন কমিয়ে রাখতেও উপকারী পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান।
জল চিকিৎসা পদ্ধতি
১. ঘুম থেকে উঠেই ১৬০ মিলি লিটারের গ্লাসের ৪ গ্লাস পানি পান করবেন।
২. পানি পানের ৪৫ মিনিটের মধ্যে কোন খাবার খাবেন না।
৩. ৪৫ মিনিট পর নাস্তা করবেন এবং পানি পান করবেন।
৪. নাস্তা করার ১৫ মিনিট পর, দুপুরের এবং রাতের খাবারের ২ ঘণ্টার ভেতরে কোন খাবার বা পানি পান করবেন না।
৫. যারা বয়স্ক বা অসুস্থ এবং ৪ গ্লাস পানি পান করতে অক্ষম প্রথম দিকে অল্প অল্প করে পানি পানের অভ্যাস করে ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াতে চেষ্টা করবেন।
৬. উপরের চিকিৎসা পদ্ধতিটি উল্লেখিত রোগ বা অসুখ সমূহের নিরাময় করবে এবং যাদের তা নেই তারও সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবে।
কতদিন এই চিকিৎসা চলবে তা রোগ বা অসুখ ভেদে উল্লেখ করা হলো:
১. উচ্চ রক্তচাপ (৩০ দিন)
২. বুক জ্বালাপোড়া (১০ দিন)
৩. ডায়াবেটিস (৩০ দিন)
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য (১০ দিন)
৫. ক্যান্সার (১৮০ দিন)
৬. যক্ষা (৯০ দিন)
৭. বাত ব্যথার রোগিরা উপরে চিকিৎসাটি প্রথম সপ্তাহে ৩ দিন, এবং দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন চালিয়ে যাবেন।
এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই, তবে প্রস্রাবের পরিমাণ পূর্বের তুলনায় বেড়ে যেতে পারে। এটি দৈনন্দিন জীবনের সাথে যোগ করলে অন্যান্য রোগ থেকেও সুস্থ থাকা যাবে। পানি পান করুন এবং সুস্থ ও কর্মঠ থাকুন।
পানি পানকে প্রাত্যহিক জীবনযাপনের অংশ করে নিন, আগের থেকে নিজের শরীরকে লাগবে অনেক ফুরফুরে। চীনারা খাবারের সঙ্গে কিন্তু ঠাণ্ডা পানির বদলে গরম চা পান করে। খাওয়ার পরপরই ঠাণ্ডা পানি তৈলাক্ত খাদ্যকে কঠিন করে তোলে। পরিপাক ক্রিয়াকেও করে তোলে ধীর। খাওয়ার পর তাই স্যুপ বা হালকা গরম পানি পানই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিতভাবে খালি পেটে পানি পানের চর্চাটা চালিয়ে যেতে থাকুন। ফলাফল নিজেই অনুভব করতে পারবেন।
বিবার্তা/ইডি/ইফতি