আজ ২৯ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’। বিশ্বের ১৯৪টি দেশের সাথে বাংলাদেশও দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করছে। বর্তমান বিশ্বে হৃদরোগকে ১ নম্বর ঘাতকব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১ কোটি ৭৩ লাখ মানুষ। এ বছর এ দিনটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘Power your life’ অর্থাৎ ‘আপনার জীবনী শক্তি বাড়ান’।
দিবসসি উপলক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়েছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ৫৩ ভাগ মৃত্যুর অন্যতম হচ্ছে করোনারি হৃদরোগ। এটি শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ মৃত্যুর কারণ। আর দেশে যত শিশুর মৃত্যু হয়, তার মধ্যে শতকরা ১০ ভাগের মৃত্যু হয়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। অথচ হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।
হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের অস্ত্রোপচার বেশ জটিল হওয়ায় সরকারি বেশিরভাগ হাসপাতালগুলোয় এই অস্ত্রোপচার করা হয় না। সরকারি জেলা হাসপাতালগুলোতে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকাতে জন্মগত হৃদরোগে মারা যাচ্ছে অসংখ্য শিশু।
বড় এবং ছোটদের হৃদরোগের ক্ষেত্রে অনেক সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকে, যা সঠিক যন্ত্রপাতি ও অদক্ষদের দিয়ে নিরূপণ করা সম্ভব হয় না। চিকিৎসক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের বেশিরভাগই মারা যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, অপুষ্টিজনিত সমস্যা এবং রক্তশূন্যতা থাকে, সেসব মায়ের সন্তানের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সেই সাথে রয়েছে, অশিক্ষা, দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য নিয়ে অসচেতনতা, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়া, গর্ভকালীন সঠিকভাবে নিজের যত্ন না নেয়া, খাদ্যাভাস, রুবেলা টিকা গ্রহণ না করা।
হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে জানা যায়, এখানে ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৯৭ হাজার ৯৮৭ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। সেই সাথে প্রতিবছর হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে ৭ হাজার ৫৩৮ জন শিশু।
অপরদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, এই হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগে গত ৭ সাত বছরে প্রায় ৪ হাজার শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা করিয়েছে। ভর্তি হয়েছে নয়শ’র বেশি শিশুরোগী। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২টি শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা নিচ্ছে।
এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে গোটা জীবনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। হার্ট সুস্থ রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ঢাকার বাইরে বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ চালু করতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের শিশু-কার্ডিয়াকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণের হার অনেক কমে আসবে।
বিবার্তা/জাকিয়া/যুথি