আমাদের দেশীয় ফলের মধ্যে জাম্বুরা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। অনেক এলাকায় এটি বাতাবি লেবু নামে সুপরিচিত।
দেশের প্রায় সব এলাকায়ই এ ফলের চাষ হয়। জাম্বুরা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। এতে ভিটামিন সি রয়েছে ১০৫ মি.গ্রাম, যেখানে লেবুতে রয়েছে ৬৩ মি.গ্রা., কমলাতে ৬৪ মি.গ্রা., কামরাঙ্গায় ৬১ মি.গ্রা., আমড়ায় ৯২ মি.গ্রাম। আমলকী এবং পেয়ারা বাদে অন্য সব ফলের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি রয়েছে বাতাবি লেবুতে।
ভিটামিন সি দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এর রাসায়নিক নাম এসকরবিক এসিড। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম (খাদ্যোপযোগী) বাতাবি লেবুতে ভিটামিন সি বাদে যে সমস্ত পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা হল- শ্বেতসার-৮.৫ গ্রাম, আমিষ-০.৫ গ্রাম, স্নেহ-০.৩ গ্রাম, ভিটামিন বি ১- ০.০৬ মি-গ্রাম, ভিটামিন বি ২-০.০৪ মি-গ্রা, ক্যালসিয়াম-৩৭ মি.গ্রাম, আয়রন- ০.২ মি.গ্রা, ক্যারোটিন-১২০ মাইক্রো গ্রাম, খাদ্যশক্তি-৩৮ কিলোক্যালরি।
বাতাবি লেবুতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় এটি রোগ প্রতিরোধ এবং রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে। এই ভিটামিন বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ইনফেকশন, সর্দি-কাশি ও ঠাণ্ডার হাত থেকে রক্ষা করে এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ভিটামিন সি দেহের ক্ষতস্থান দ্রুত নিরাময়ে সহায়তা করে, দেহের ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখে।
এর অভাবে ত্বক খসখসে ও শক্ত হয়ে পড়ে। ভিটামিন সি-এর অভাবে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়, দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত ও পুঁজ নির্গত হয়- এ সমস্যাকে বলা হয় স্কার্ভি। স্কার্ভি হলে অকালে দাঁত পড়ে যায়। গর্ভবতী মা এবং গর্ভস্থ শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন সি অত্যন্ত দরকারী। বাতাবি লেবুতে ভিটামিন সি, কেরোটিন থাকায় এটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে দেহের বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ভিটামিন সি-এর অভাবে রক্তস্বল্পতা ও দুর্বলতা দেখা দেয়, রক্তপাত হলে সহজেই বন্ধ হয়না, শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ভিটামিন সি মুখগহ্বর, পাকস্থলী, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয় এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। বাতাবি লেবুতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেকটিন থাকায় স্কোয়াশ ও জেলি প্রস্তুতে এটি ব্যবহৃত হয়। বাতাবি লেবুর রস ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত উপকারী।
সুতরাং ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণে আমাদের দেশেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল বাতাবি লেবু, পেয়ারা, আমলকী, আমড়া, লেবু, কামরাঙ্গা, পাকা পেঁপে, কুল, জলপাই ইত্যাদি রয়েছে ফলে বিদেশ থেকে বেশি দামে কলমা লেবু আমদানি করার প্রয়োজন নেই। আমাদের ব্যাপকভাবে দেশী ফল চাষ করার দিকে সচেতন এবং যত্নবান হতে হবে।
বিবার্তা/ইফতি