মানুষের শরীরের জন্য মধু অত্যন্ত উপকারী- এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রাচীনকাল থেকেই মধু ‘ঔষধ’ হিসেবে ব্যবহৃত হত। মধু প্রাকৃতিক মিষ্টি হিসেবে, চিকিৎসা ও সৌন্দর্য চর্চাসহ নানাভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
শরীরের সুস্থতায় উচ্চ ঔষধি গুণসম্পন্ন মধুর উপকারিতা অনেক। মধু চিনির চেয়ে মিষ্টি। চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। তাই তরল মধু নষ্ট হয় না। মধু পাস্তুরাইজড করলে মধুর প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী হ্রাস পায়। মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। এতে চর্বি এবং প্রোটিন নেই। একশ গ্রাম মধুতে ২৮৮ পরিমাণ ক্যালরি থাকে। গুণে ভরা মধুতে রয়েছে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ যা শরীরে শক্তি যোগায়। মধুর অন্যান্য উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মধুর কিছু উপকারিতা সম্বন্ধে জানা যাক:
শরীরে তাপ ও শক্তি জোগায় মধু। শীতকালে শরীর গরম রাখতে অনেকেই মধু খান। শরীর গরম রাখতে সকালে ও রাতে এক কাপ গরম পানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে খান। কাশি বা ঠাণ্ডা লাগলে নিয়মিত কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করুন, শরীর ঝরঝরে লাগবে। মধুতে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, খনিজ পদার্থ, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়ামসহ অন্যান্য নানা প্রয়োজনীয় উপাদান আছে। অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য মধু বেশ উপকারী। মধুতে শর্করা থাকায় তা হজমের জন্য বিশেষ উপকারী। এছাড়াও মধুতে যথেষ্ট পরিমাণে কপার, আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
হৃদপিণ্ড শক্তিশালী করতে চান? তবে দৈনিক সকালে এক চামচ করে খাঁটি মধু খান। মধু আয়ুও বাড়ায়। যাঁরা সুস্থ, তাঁরা সকলেই নিয়মিত চিনির বদলে মধু খান। এক্ষেত্রে বলা যায় ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম’৷ মানে মধুর নানা গুণ অসুখ-বিসুখকে দূরে রাখবে। মাড়ির ব্যথায় ভুগছেন? মধুমিশ্রিত পানি দিয়ে কুলকুচি করুন, মাড়ির ব্যথা কমবে।
গবেষক পেটার মোলানের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, মধু বেশ কিছু রোগের জীবাণু ধ্বংসে বেশ কার্যকর। পোড়া বা ক্ষতে খাঁটি মধু লাগালে উপকার হয়। ত্বকে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা হলে অলিভ অয়েলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে লাগান, সমস্যা দূর হবে৷ তবে এক্ষেত্রে খাঁটি মধু হতে হবে। সৌন্দর্যচর্চাতেও মধুর বড় ভূমিকা রয়েছে। বাজার চলতি প্রসাধনীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে ত্বকের সুরক্ষায় নানা উপায়ে মধু ব্যবহার করা হয়। মধু ত্বককে উজ্জ্বল, কোমল ও মসৃণ করে। তৈলাক্ত ত্বক নয় শুষ্ক ও স্বাভাবিক ত্বকে মধু বেশি কাজে দেয়।
আগেই জেনেছি মধুতে চর্বি নেই। কাজেই ওজন বাড়ে না। এটি শরীরের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। এ কারণে অনেকে গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পান করেন। রাতে ভালো ঘুমের জন্য গরম দুধে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
গাজরের রস ও মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। মধুর সাথে দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে রক্তনালীর সমস্যা দূর হয় এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। তারুণ্য ধরে রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। মধু শরীরের সামগ্রিক শক্তি বাড়ায় ও তারুণ্য বাড়ায়।
খাঁটি মধুর বৈশিষ্ট্য হল এটিতে কখনো কটু গন্ধ হয় না। খাঁটি মধু চেনার উপায় হল, একটি কাচের গ্লাসে পানি নিয়ে তাতে সামান্য মধু ঢালুন, যদি মধু সহজে পানির সঙ্গে না মিশে গ্লাসের তলানি হিসেবে বসে থাকে এবং দুই-তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয় তবে বুঝবেন এটি খাঁটি মধু।
বিবার্তা/জিয়া