প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো যে কারণে ভালো

প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো যে কারণে ভালো
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১০:৩১:০৭
প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো যে কারণে ভালো
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+
বাতাসে বাইরে প্রকৃতির সংস্পর্শে কিছুটা সময় কাটানো আপনার জন্যই ভালো। এটা কাব্যিক কথা নয়, বিজ্ঞানের কথা! প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানোর রয়েছে অনেকগুলো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উপকারিতা। চলুন সেগুলো দেখে আসি-
 
শর্ট-টার্ম মেমোরির উন্নতি করে: ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের ছাত্রদের ওপরে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, একটি বাগানের মাঝে হাঁটাহাঁটি করেন যারা, তারা শহরের মাঝে হেঁটে আসা ছাত্রদের তুলনায় স্মৃতির পরীক্ষায় ২০ শতাংশ ভালো ফল করেন। বিষণ্ণতায় আক্রান্ত মানুষের ওপর একই ধরনের একটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশে হেঁটে আসলে তাদের স্মৃতির উন্নতি হয়।
 
মানসিক উদ্যম বাড়ায়: অনেকগুলো কাজ করার পর আপনার মস্তিষ্ককে ক্লান্ত মনে হয়? ছোটখাটো চিন্তাগুলোও করতে কস্থয় তখন? এটাকে বলা হয় মেন্টাল ফ্যাটিগ। আপনার ক্লান্ত মনকে আবার চাঙ্গা করে তুলতে উপকারী পরিবেশ হলো বাইরের প্রকৃতি। এমনকি একটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রকৃতির ছবি দেখলেও মন অনেকটাই চাঙ্গা হয়। প্রকৃতির মাঝে গেলে যে ভালোলাগার অনুভূতি তৈরি হয় সেটাই ক্লান্তি অনেক কমিয়ে আনতে পারে।
 
স্ট্রেস দূর করে: কোনো কিছু নিয়ে আপনি খুব স্ট্রেসে আছেন? গাছপালার আশেপাশে চলে যান। গবেষণায় দেখা যায়, বনে দুই দিনের জন্য ক্যাম্পিং করে আসা ছাত্রদের শরীরে কর্টিসলের মাত্রা কম থাকে, যা কিনা স্ট্রেসের হরমোন। আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় কর্টিসলের পাশাপাশি হার্ট রেটও কম হয় প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকলে। অফিসের জানালা দিয়ে বাইরে যদি গাছপালা দেখা যায়, সেটাও কর্মচারীদের মাঝে স্ট্রেস কমাতে সহায়ক।
 
প্রদাহ কমায়: শরীর যখন কোনো ঝুঁকিতে থাকে, যেমন ক্ষত বা জীবাণুর আক্রমণ, তখনই দেখা দেয় প্রদাহ। এটা যখন খুব বেড়ে যায় তখন দেখা দিতে পারে অটোইমিউন ডিজিজ, ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজ, ডিপ্রেশন এমনকি ক্যান্সার। এই প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে প্রকৃতির সাহচর্য। হাইপারটেনশন এবং স্ট্রেস কমানোর মাধ্যমে সম্ভবত প্রদাহ কমে এভাবে।
 
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি: পুরনো আমলের মানুষের কথা ‘সবুজের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ ভালো হয়’। এটা কি শুধুই কথার কথা নাকি এর কোনো ভিত্তি আছে? গবেষণায় দেখা যায়, শিশুরা বাইরে সময় কাটালে তাদের মায়োপিয়ার ঝুঁকি কমে।
 
মনোযোগ বাড়ায়: মানসিক উদ্যম বাড়ানোর পাশপাশি আপনার মনোযোগটাকেও শক্তিশালী করতে পারে প্রাকৃতিক পরিবেশ। এক গবেষণায় প্রথমে অংশগ্রহণকারীদের মনোযোগ কমিয়ে দেয়া হয়। এরপর তাদের একদল প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটতে যায়, একদল শহরের মাঝে হাঁটতে যায় আর আরেকদল বসে বিশ্রাম নেয়। দেখা যায়, ফিরে আসার পর প্রকৃতি যারা দেখতে গিয়েছিল তারা মনোযোগের পরীক্ষায় বেশি ভালো করে। এই কারণে যাদের ADHD জটিলতাটি আছে তাদেরও প্রকৃতিতে সময় কাটানো উপকারী হতে পারে।
 
ক্যান্সার-রোধের সম্ভাবনা: ক্যান্সার রোধ করতে পারে- এই চিন্তায় বিভিন্ন শাকসবজি, ফল, সুপারফুড খাই আমরা, জীবন থেকে বাদ দেই বিভিন্ন কেমিক্যালের ব্যবহার। কিছু প্রাথমিক গবেষণায় জানা যায়, বেশ গাছপালা, যেমন বুনো পরিবেশে সময় কাটালে শরীরে অ্যান্টি-ক্যান্সার প্রোটিন তৈরি হতে পারে। জাপানের কিছু গবেষণাতেও দেখা যায়, বনায়নের বৃদ্ধির ফলে কয়েক ধরণের ক্যান্সারে মৃত্যুহার কমতে পারে। এটা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতেও কার্যকরী।
 
এগুলো ছাড়াও সার্বিকভাবে মানসিক ও শারীরিক অনেক সমস্যার প্রশমনে আপনি বাইরে থেকে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসতেই পারেন। মেজাজের উন্নতি হয়, আর আয়ু বাড়াতেও তা কার্যকরী। কাজের ফাঁকে পার্ক থেকে হেঁটে আসা হোক, সকালে জগিং হোক, বাগানে কাজ করা হোক আর প্রাকৃতিক পরিবেশে ছুটি কাটানোই হোক, তা আপনার কাজে আসবে। ইট-পাথরের দেয়ালে ঘেরা জীবনে আর কিছু না হোক, একটু স্বস্তি মিলবে নিশ্চয়ই।
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com