ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তের দু’পাশে অঘোষিত রণপ্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দু' দেশের সীমান্তে ৭৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতের পক্ষ থেকে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন অগ্রবর্তী সেনাশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভারী গোলাবর্ষণের সরঞ্জাম এবং জ্বালানি তেলের বিপুল ভাণ্ডার।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের আকাশে চক্কর দিচ্ছে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক হামিদ মীর টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, 'রাত ১০টা ২০ মিনিট থেকে ইসলামাবাদের আকাশে এফ-১৬ উড়তে শুরু করেছে।'
আকাশে যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে থাকায় সেখানকার মানুষজন আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। গভীর রাতে হামিদ মীর অবশ্য আবার টুইটার বার্তায় বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দেশকে রক্ষা করতে পাক বাহিনী যেসব সময় প্রস্তুত, সে কথাই বুঝিয়ে দিচ্ছে বিমান বাহিনী। পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তারাও বলেছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটা মহড়ামাত্র।
পাকিস্তানি গণমাধ্যমের একাংশের পক্ষ থেকেও একে রুটিন মহড়া বলে মন্তব্য করা হয়েছে। শুক্রবার পাকিস্তানের অপর এক সাংবাদিক মেহর তারার ওই ঘটনাকে বিমান বাহিনীর বড় অনুশীলন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, পাঁচ বছর পরপর এ ধরণের অনুশীলন একবার করে হয়ে থাকে এবং আকাশে ওড়া সব বিমান এফ-১৬ নয়।
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমের একাংশ বলেছে, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ব্যাপক সামরিক তৎপরতা শুরু করলেও এখনই আজাদ কাশ্মিরে বাহিনী ঢুকিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ভারতের নেই। তবে নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে সন্ত্রাসী শিবির লক্ষ্য করে ভারী গোলাবর্ষণ শুরু হতে পারে। সন্ত্রাসী ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চালানো হতে পারে বলে জল্পনা ছড়িয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরই মধ্যে কমপক্ষে দু দফায় সামরিক অভিযান সংক্রান্ত ‘ওয়ার রুমে’ দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। তার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, সেনাবাহিনীর প্রধান দলবীর সিং, বিমানবাহিনীর প্রধান অরূপ রাহা, নৌবাহিনীর প্রধান সুনীল লাম্বা এবং গোয়েন্দা সংস্থা আইবি এবং ‘র’-এর কর্মকর্তারা।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্যাটেলাইট ছবির মাধ্যমে আজাদ কাশ্মিরের বিভিন্ন অবস্থান সম্পর্কে অবগত করানো হয়। সম্ভাব্য রণকৌশল নিয়েও আলোচনা হয়।
উল্লেখ্য, গত রবিবার কাশ্মিরের উরি সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড সদর দফতরে গেরিলা হামলায় ১৮ জন সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাগযুদ্ধ শুরু হওয়ার পাশাপাশি চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারতের পক্ষ থেকে ওই হামলার নেপথ্যে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে দাবি করে এর যথাযথ জবাব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এ ধরনের দাবিকে নাকচ করে দিয়ে ভারত বিনা তদন্তে মিথ্যা অভিযোগ করছে বলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পাল্টা দাবি করা হয়েছে।
এসবের মধ্যেই ভারতীয় সীমান্তে সমরসজ্জা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একাধিকবার ওয়ার রুমে যাওয়া এবং সর্বশেষ পাকিস্তানের আকাশে যুদ্ধবিমান চক্কর দেয়ায় নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সূত্র : পার্স টুডে
বিবার্তা/হুমায়ুন