ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’কে সতর্ক করেছে মার্কিন ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, ব্রেক্সিট বাণিজ্য বিষয়ক সমঝোতা সম্পর্কে যদি তাদেরকে বিস্তারিত জানানো না হয় তাহলে তারা ব্রিটেন ত্যাগ করবেন। ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেন কেমন হবে তা তাদেরকে অবশ্যই দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিষ্কার করে জানাতে হবে। তা নাহলে ব্রিটেন থেকে মার্কিনভিত্তিক যেসব করপোরেশন পরিচালিত হয় তারা প্রস্থান করবে।
এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এতে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে এমন সতর্কতা দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেছেন, তাদেরকে ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য সমঝোতা নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা যদি না দেয়া হয় তাহলে তাদের লোকবল সরিয়ে নেয়া হবে ইউরোপের অন্য কোনো দেশে।
সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে বহুজাতিক কতগুলো ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা তেরেসা মের সঙ্গে বৈঠক করে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে দ্য টেলিগ্রাফে। এতে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন গোল্ডম্যান স্যাশ, মরগান স্ট্যানলে ও ব্লাক রক-এর মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বড়মাপের কর্মকর্তারা।
কিন্তু তাদের সঙ্গে বৈঠকে ব্রেক্সিট পরবর্তী ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের সমঝোতা বা বোঝাপড়া কেমন হবে তা প্রকাশ করেননি তেরেসা মে। পক্ষান্তরে তিনি বলেছেন, তিনি জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে একটি চুক্তি করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের কথা জানিয়েছেন ওই বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র।
তিনি বলেছেন, ওই বৈঠকে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের কাছ থেকে একটি বার্তা খুব পরিষ্কারভাবে পাওয়া গেছে। তা হলো, যদি তেরেসা মে আগেভাগে সমঝোতা প্রক্রিয়া নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে না পারেন তাহলে অপেক্ষা করার জন্য কোন সময় বাকি থাকবে না।
ওদিকে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলজ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তেরেসা মে যেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
গত সপ্তাহে তিনি ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে সাক্ষাত করেন তেরেসা মের সঙ্গে। এ সময় মার্টিন শুলজ বলেছেন, ২০১৯ সাল শুরু হওয়ার মধ্যেই যাতে ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়ার কাজ শেষ করে এমনটাই চায় ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট। তিনি আরও বলেন, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে যদি অংশ নিতে চায় ব্রিটিশ ভোটাররা তাহলে তা হবে তাদের একটি ভুল সিদ্ধান্ত।
আগামী ২০১৯ সালের জুনে এ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এ সময়ে সমঝোতা প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে লিসবন চুক্তির ৫০ নম্বর অনুচ্ছেদ সক্রিয় করলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসতে তিনি দুই বছর সময় পাবেন। এর মধ্যেই সারতে হবে সব সমঝোতা।
এ বছরে ওই অনুচ্ছেদ সক্রিয় করবেন না বলে মন্তব্য করেছেন তেরেসা মে, যদিও ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড টাস্ক দাবি করেছেন, তেরেসা মে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে ওই অনুচ্ছেদ সক্রিয় করতে পারেন। জুনে ব্রেক্সিট ভোটের পর একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছে। তা হলো ব্রিটেনে আমেরিকার বিনিয়োগকারী ব্যাংক মরগান স্ট্যানলি লন্ডন থেকে তাদের ২০০০ কর্মকর্তা, কর্মচারীকে ডাবলিন ও ফ্রাঙ্কফুর্টে স্থানান্তর করছে।
অবশ্য পরে এ খবর প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, সরকারি হিসাব মতে, ২০১৪ সালে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে আর্থিক খাত যোগান দিয়েছে ১২৬৯০ কোটি পাউন্ড। ওই বছরের মোট এডেড ভ্যালুর শতকরা প্রায় ৮ ভাগ এ অংক।
বিবার্তা/জিয়া