জর্ডানের রাজনৈতিক কর্মী ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো জর্ডান-ইসরাইল গ্যাস চুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জরদানিয়ান ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন অ্যাগেইস্ট গ্যাস অ্যাগ্রিমেন্ট উইথ দ্য জায়নিস্ট এনটিটি নামে একটি সংগঠন ঘোষণা দিয়েছে যে চুক্তিটি বাতিলের দাবিতে শুক্রবার বাদ জুমা তারা আম্মানের উপকণ্ঠে বিক্ষোভ করবে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার জর্ডানের সরকারি সংস্থা নেপকো ও ইসরাইলের মধ্যে গ্যাস চুক্তি সম্পাদিত হয়। ওই দিন নেপকো বলে, এই চুক্তির ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বছরে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে এবং ভবিষ্যতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।
তবে সমালোচকরা বিষয়টিকে দেখছেন ভিন্ন চোখে। এ রকম একটি সংগঠন বিডিএস মুভমেন্ট। তারা এখনই চুক্তিটি বাতিল চায়। সংগঠনের সদস্যা শিরিন ইতানি বলেন, জর্ডানের জনগণ এই চুক্তি মানে না। এই চুক্তির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক দিক রয়েছে, যার পরিণামে দেশের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতি ইহুদিবাদের করুণার পাত্রে পরিণত হলো।
নিজ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এই চুক্তির অর্থ হলো ইসরাইলে এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে জর্ডান। এর মানে, আমরা আমাদের কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ ইসরাইলের হাতে ছেড়ে দিচ্ছি। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস চাহিদার ৪০% তাদের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য খুব বিপজ্জনক।
শিরিন আরও বলেন, এ চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইলের জ্বালানি খাতের উন্নয়নে আমরা বিনিয়োগ করছি। আমাদের বিদ্যুৎ বিলের একটা মোটা অংশ তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে। গাজায় আরেকটি যুদ্ধের জন্য আমরা কি ওদের তহবিল যোগান দিচ্ছি?
জর্ডানের জনগণ কখনই এ চুক্তি মেনে নেবে না জানিয়ে শিরিন বলেন, দু’বছর আগে যখন এ চুক্তির ব্যাপারে আলাপ শুরু হয়, তখনই সারা দেশে বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের মনোভাব জানিয়ে দিয়েছে।
মালেক সাবে নামে অপর এক কর্মী বলেন, বিশ্ববাজারে যখন গ্যাসের দাম কমছে তখন অনেক চড়া দামে ইসরাইলের কাছ থেকে গ্যাস কেনার চুক্তি করা হলো। এর পরিণাম ভালো হবে না। আমরা আমাদের শহীদদের সঙ্গে বেঈমানী করলাম।
বাসেল বুরগান নামে অপর এক কর্মী বলেন, জর্ডানই একমাত্র আরব দেশ, যারা ইসরাইলের সঙ্গে গ্যাস চুক্তি করলো।
এদিকে প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশন কমপ্লেক্সও আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলেছে, জনগণ যে এ চুক্তি মানে না, সেটা সরকারকে স্বীকার করতেই হবে। জানি, খুব দীর্ঘ পথ, কিন্তু আমাদের আন্দোলন চলবেই।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সালেম সারাইরাহ বলেন, ফিলিস্তিনে প্রতিদিন যখন ফিলিস্তিনি ও জর্ডানিরা প্রাণ দিচ্ছে তখন এ চুক্তি করাটা সরকারের উচিত হয়নি।
ডেমক্রেটিক পপুলার ইউনিটি পার্টি বলেছে, জনগণ এ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে।
জর্ডান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন চুক্তিটির নিন্দা করে বলেছে, জেরুসালেমে ১০ দিন আগে জর্ডানি নাগরিক সায়ীদ আমরকে হত্যা করেছে ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনী। তার রক্তের দাগ শুকানোর আগেই আমরা ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি করলাম।
সংগঠনটির মতে, চুক্তিতে গ্যাস সরবরাহ অবকাঠামোর ওপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার দখলদার দেশটিকে দেয়া হয়েছে। এটা ভবিষ্যতে আমাদের দেশের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে। সূত্র : জর্ডান টাইমস
বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী