সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) পাকিস্তানি ভূখণ্ডে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (সুনির্দিষ্ট টার্গেটে হামলা) চালিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। এতে দুই পাকিস্তানি সৈন্য ও ৩৮ ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।
বুধবার রাতভর এ হামলা চালানো হয়। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। মিলিটারি অপারশনের মহাপরিচালক (ডিজিএমও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রনবীর সিং সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন।
সন্ত্রাসীরা ভারতের মধ্যে ঢুকে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমন সুনির্দিষ্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানো হয়। এতে ‘গুরুত্বপূর্ণ হতাহতের’ ঘটনা ঘটেছে। অভিযান রাতেই শেষ হয়।
ভারতীয় এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের মাটি যেন সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য অনেক আহ্বান জানিয়ে আসছিলাম আমরা, কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমরা সন্ত্রাসীদের দমনে অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছি। অভিযানে কোনো ভারতীয় হতাহত হননি।
অভিযানের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি, ভাইস প্রেসিডেন্ট হামিদ আনসারি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, জম্মু- কাশ্মীরের গভর্নর ও মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক নিতিন গোখালে তার এক টুইটার বার্তায় বলেন, হামলায় শত্রুদের ৫টি ক্যাম্প ধ্বংস হয়ে গেছে। বেশ কিছু হতাহতও হয়েছে।
এদিকে, এ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা নিশ্চিতে প্রস্তুত’।
তবে নওয়াজের নিন্দা জানানোর পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা নাকচ করে বলেছে, সীমান্তে দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ে দুই সৈন্য মারা গেছেন। কিন্তু পাকিস্তানি ভূ-খণ্ডে কেউ ঢুকতে পারেনি।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম জানায়, বুধবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে অভিযান চালায় সামরিক বাহিনী। এতে স্পেশাল ফোর্সের প্যারাট্রুপার্স ও কমান্ডোরা অংশ নেন। তাদের অভিযানস্থলে নামানো হয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে। অভিযান চলে পাকিস্তানি ভূখণ্ডের ভিম্বার, হটস্প্রিং, কেল ও লিপা সেক্টরে। অভিযানে সন্ত্রাসীদের লঞ্চ প্যাড ধ্বংস হয়ে যায়। এ অভিযান শেষ হয় ভোর সাড়ে ৪টায়।
এর আগে বুধবার রাতে সংবাদমাধ্যম জানায়, ওইদিন সন্ধ্যায় কাশ্মীরের পুঞ্চ এলাকার সাউজিয়ান সেক্টরে প্রায় ৮ মিনিট ধরে দুই বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলে। দু’পক্ষই মর্টারের গোলা ও গুলিবিনিময় করে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর কাশ্মীরের উরি সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলা ১৮ ভারতীয় সৈন্য নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ সম্পর্কে উত্তেজনা এখন চরমে। দু’পক্ষই সীমান্তে সেনা মোতায়েন ও তৎপরতা বাড়িয়েছে। দফায় দফায় যুদ্ধবিমানের মহড়া চালাচ্ছে পাকিস্তান। আর ভারতও প্রস্তুত করছে তাদের যুদ্ধবিমানকে।
দু’পক্ষের মধ্যে বাকযুদ্ধের মধ্যে মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বিবার্তা/ইফতি