‘আইসিটি পণ্য তৈরিতে সহায়তা ও ব্র্যান্ডিং প্রয়োজন’

‘আইসিটি পণ্য তৈরিতে সহায়তা ও ব্র্যান্ডিং প্রয়োজন’
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০১৬, ১৫:০১:২০
‘আইসিটি পণ্য তৈরিতে সহায়তা ও ব্র্যান্ডিং প্রয়োজন’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+
প্রযুক্তি মার্কেটিংয়ে ১৬ বছরের অভিজ্ঞ রাসেল টি আহমেদ ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করতে গিয়ে স্বপ্ন দেখতেন এই খাতে উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি করে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করবেন। ‘প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের জীবনযাপন পরিবর্তনের’ প্রত্যয়ে বহহুজাতিক কোম্পনির চাকরি ছেড়ে শুরু করেন উদ্যোক্তা জীবন। দেশের নতুন প্রজন্ম যাতে প্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পরবর্তীতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে দেশ গড়তে পারেন সেই লক্ষ্যে তিনি উদ্ভাবন করে চলেছেন ই-লার্নিংয়ের নানা সমাধান। প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলেছেন নিজের প্রতিষ্ঠান টিম ক্রিয়েটিভ।
 
শিক্ষার্থীদের ‘চৌকস’ করতে তৈরি করেছেন ‘স্পেলিং বী’, ‘চ্যাম্পস২১’ ও ‘ক্লাস টিউন’সহ আরো অনেক কিছু। তিনি স্বপ্ন দেখেন এদেশ থেকেই বড় বড় সফল প্রোডাক্ট তৈরি হবে। তার জন্য একটি অনুকূল ইকোসিসস্টেম তৈরি নিয়ে ব্যক্তি ও সাংগঠনিকভাবে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। তিনি বলেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এখন প্রয়োজন বিশ্বমানের প্রোডাক্ট তৈরি ও তার ব্র্যান্ডিং। এজন্য দীর্ঘমেয়াদে সরকারের সহায়তা ও বিনিয়োগ প্রয়োজন।
 
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) দুই মেয়াদে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন রাসেল টি আহমেদ। বর্তমানে তিনি বেসিসের সিনিয়র সহ-সভাপতি। এর আগে কাজ করেছেন দেশের অন্যতম ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট সেবাদানকারী কোম্পানি কিউবির চীফ মার্কেটিং অফিসার হিসেবে। এছাড়া ফাইবার এট হোমের চীফ স্ট্রাটেজিক অফিসার ও আমরা নেটওয়ার্কের চীফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন।
 
সম্প্রতি স্থানীয় ও বিশ্ববাজারের জন্য তিনি উদ্ভাবন করেছেন ‘ক্লাস টিউন’ নামে একটি লার্নিংম্যানেজমেন্ট সফটওয়ার। দেশের তথ্য প্রযুক্তিখাতের উদ্যোক্তারা টিকে থাকার সংগ্রাম করছে উল্লেখ করে রাসেল টি আহমেদ বলেন, বেসিসের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যারা তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তক পণ্য ও সেবা তৈরিতে নিয়জিত, তাদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের কোম্পানি। আমরা অনেকেই বিদেশী অনেক কোম্পানির কাজ করে হাত পাকিয়ে ফেলেছি। আমাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বেড়েছে, ফলে আমরা এখন ভালো পণ্য বানাতে পারি। কিন্তু ভালো পণ্য বানানোই শেষ কথা নয়, তাকে যথেষ্ট পরিমাণে প্রচার  করতে হয়। আর্থিক সক্ষমতার অভাবে আমাদের এই ক্ষুদ্র কোম্পানিগুলো তা করতে পারে না। এ কারণে স্থানীয় বাজারেও দেশিয় ইন্টারনেটভিত্তিক পণ্য কনটেন্ট জনপ্রিয় করা যায় না। এতে যেটা হয়, ওই কনটেন্ট, কনটেন্টের জায়গায়ই থেকে যায়। মানুষ সেটি সম্পর্কে জানতে পরে না।
 
কলসেন্টারের দেশ হিসেবে ফিলিপাইন নাম কুড়িয়েছে। বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংয়ে ভারত সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির বড় বাজার হিসেবে আবির্ভূত হলেও এ খাতে নিজস্ব পরিচিতি ও ব্র্যান্ড নেই। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি কম্পানিগুলোর বেশিরভাগেরই মার্কেটিং করার মতো রসদ নেই। প্রথম রসদ, আমাদের কোনো মার্কেট রিসার্চ নেই। ফলে স্থানীয় বাজার সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা নেই। এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্থানীয় সম্ভাবনাময় অ্যাপ্লিকেশনগুলো লোকাল এবং গ্লোবাল মার্কেটিং করা। এক্ষেত্রে সরকারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। সরকার স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সাথে অংশীদার হিসেবেও এই বিনিয়োগ করতে পারে।
 
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রোডাক্ট হিসেবে নাম কুড়ানোর সম্ভাবনা আছে ১০০টি পণ্যকে টার্গেট করে সরকার যদি তার মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং করে তাহলে তার মধ্যে ২০টি কোম্পানিও যদি দাঁড়ায় তাহলে সরকার তা থেকে বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে।
 
তিনি বলেন, ৩০ জনের কোম্পানি হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ভাইবার বিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে আউটসোর্সিং কোম্পানিতে ভালো করতে হলে হাজার হাজার আইটি গ্র্যাজুয়েট দরকার, যার সরবরাহ আমাদের নেই। তাছাড়া গ্লোবাল মার্কেটে যাওয়ার জন্য আমাদের ইকো- সিস্টেম প্রস্তুত নয়। 
 
চীনের উদাহরণ টেনে রাসলে বলেন, চীন সরকার বিশ্ববাজারে দেশী পণ্য নিয়ে যে পরিমাণে সহায়তা করে আমাদের দেশে তা হয় না। বাংলাদেশের কোনো পণ্যের যদি দুনিয়া কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তকে সব রকম সহায়তা সরকারকে করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের একটি উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন স্বাধীন জুরি বোর্ড তৈরি করতে পারে সরকার। এই বোর্ড বাছাই করে কিছু কনটেন্টকে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক বাজারে বিপণন এবং কারিগরী সহায়তা দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করতে পারে। এছাড়া স্থানীয় ইন্টারনেটভিত্তিক পণ্যকে দেশব্যাপী পরিচিত করানোর জন্য একটি তহবিল গঠন করা একান্ত প্রয়োজন।
 
স্থানীয় ও আন্তর্জতিক বাজারে প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্টের জন্য আমাদের ক্ষুদ্র কোম্পানিগুলোকে সরকারকে সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়ে রাসেল টি আহমেদ বলেন, এটি করতে পারলে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বমানের পণ্য তৈরি হবে। পণ্যকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি আমাদের আইসিটি কোম্পনিগুলোরও ভালো পণ্য করার সাহস দেখাতে হবে। বাংলাদেশ থেকে একটি অ্যাপ যদি আমরা বৈশ্বিক বাজারে  জনপ্রিয়তার শীর্ষ তালিকায় নিতে পারি তাহলে সেই অ্যাপ দিয়েই সারা দুনিয়া বাংলাদেশকে চিনবে। তাই সরকার ইন্টারনেট ভিত্তিক পণ্য ও সেবার প্রসারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা করি।
 
বিবার্তা/উজ্জ্বল/প্লাবন
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com