বাংলাদেশী দুই চিকিৎসাবিজ্ঞানীর সাফল্য

বাংলাদেশী দুই চিকিৎসাবিজ্ঞানীর সাফল্য
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৬:০৩:৫৪
বাংলাদেশী দুই চিকিৎসাবিজ্ঞানীর সাফল্য
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+
‘হেপাটাইটিস বি’ চিকিৎসায় বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছেন বাংলাদেশের দুই চিকিৎসাবিজ্ঞানী। এর ফলে ‘হেপাটাইটিস বি’র কারণে আর কাউকে মৃত্যুবরণ করতে হবে না বলে জানিয়েছেন ওই দুই চিকিৎসাবিজ্ঞানী জাপান প্রবাসী  লিভারবিশেষজ্ঞ ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেপাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)।
 
এ দুই চিকিৎসাবিজ্ঞানী ৭৫ জন রোগীকে ১০ বার তাদের গবেষণালব্ধ ফর্মুলা ‘ন্যাসভ্যাক’ প্রয়োগ করে প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতির চেয়ে ভালো ফল পান। তারা দেখেন, প্রচলিত চিকিৎসায় রোগীর শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও ‘ন্যাসভ্যাক’ প্রয়োগে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়নি, যা লিভার-সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় এক নতুন ডাইমেনশন। এরই মধ্যে কিউবা এ ফর্মুলা ব্যবহার করে ওষুধ তৈরি করে তা ‘হেপাটাইটিস বি’ চিকিৎসায় ব্যবহারও করছে।
 
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, গবেষণাটি বাংলাদেশে প্রথম কোনো অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের মলিকুলার ট্রায়েল। অর্থাৎ ওষুধ উদ্ভাবনের আগেই মৌলিক উপাদানগুলো রোগীর শরীরে ব্যবহার করে ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এটিই বাংলাদেশে ডেভেলপ করা প্রথম পদ্ধতি যা ক্রনিক ইনফেকশনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে অদূর ভবিষ্যতে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরি করা সম্ভব হবে।
 
 
ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর ২৫ বছর ধরে ‘হেপাটাইটিস বি’ চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য গবেষণা করছেন। তার গবেষণার বিষয় ‘হেপাটাইটিস বি’র বিরুদ্ধে মানুষের শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করা। এজন্য তিনি জাপানের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বস্বীকৃত একটি গবেষণা কেন্দ্রে সেল কালচার, মলিকুলার বায়োলজি ও ক্লোন টেকনোলজির সাহায্যে মডেল হিসেবে ইঁদুর (ট্রান্সজেনিক মাউস) তৈরি করেন।
 
পাশাপাশি  ডা. মামুন-আল-মাহতাব বাংলাদেশে এক হাজার ‘হেপাটাইটিস বি’ রোগীর ডাটাবেজ তৈরি করেন। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিচালিত গবেষণার ফল তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে তিনি দেখান, ডা. আকবরের উদ্ভাবিত চিকিৎসেপদ্ধতি বাংলাদেশের ‘হেপাটাইটিস বি’ রোগীদের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে।
 
এদিকে কিউবার সরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি ডা. আকবর ও ডা. স্বপ্নীলের গবেষণার ভিত্তিতে ‘হেপাটাইটিস বি’ রোগের চিকিৎসায় ‘হেবার-ন্যাসভ্যাক’ নামে একটি নতুন ওষুধ তৈরি করে। কিউবা ও জাপানে প্রাথমিক গবেষণায় এটি অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশে ক্রনিক ‘হেপাটাইসিস বি’ রোগীদের চিকিৎসায় ‘ন্যাসভ্যাক’ পদ্ধতি প্রয়োগের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সালে ১৮ জন রোগীর ওপর ‘ন্যাসভ্যাক’র ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (ফেজ-১ ও ফেজ-২) পরিচালিত হয়।
 
ট্রায়ালে  ‘ন্যাসভ্যাক’ পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং বর্তমানে ‘হেপাটাইটিস বি’র চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্য সব ওষুধের তুলনায় অধিকতর নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হয়। দেখা যায়, ‘ন্যাসভ্যাক’ ব্যবহারে শতকরা ৫০ শতাংশ ক্রনিক রোগীর রক্ত থেকে ‘হেপাটাইটিস বি’ ভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূল হয়েছে এবং শতকরা ১০০ ভাগ রোগীর লিভারের প্রদাহ পুরোপুরি ভালো হয়েছে।
 
ট্রায়ালের এ ফল পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় লিভারবিষয়ক জার্নাল ‘হেপাটোলজি ইন্টারন্যাশনাল’-এ প্রকাশিত হয়েছে। ট্রায়ালটি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ ও এফডিএ এবং বাংলাদেশের ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃক অনুমোদিত। এছাড়া লিভারের প্রদাহ নিরাময়েও ‘ন্যাসভ্যাক’ পেগাইলেটেড ইন্টারফেরনের চেয়ে অনেক ভালো ফল দিয়েছে। উল্লেখ্য লিভারের প্রদাহই লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের মূল কারণ। সূত্র :  যুগান্তর
 
বিবার্তা/হুমায়ুন
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com