দেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ততটা সুরক্ষিত নয়। কার্ডের পেমেন্ট সিস্টেমের নিরাপত্তা জোরদার করার সচেতনতা বাড়াতে দিনব্যাপী একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী সোমবার রাজধানীর মিরপুরস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে বিআইবিএম এবং ভিসার সহযোগিতায় ‘কিউর ইউর পেমেন্ট ইকোসিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি সেমিনার আয়োজন করছে সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ।
শনিবার দুপুরে এ উপলক্ষে রাজধানীর পান্থপথে সিটিও ফোরামের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিটিও ফোরামের কার্যক্রম ও সেমিনারের বিষয়বস্তু আলোকপাত করেন সিটিও ফোরামের সভাপতি তপন কান্তি সরকার। তিনি বলেন, ‘সিটিও ফোরাম শুরু থেকে এই পর্যন্ত অনেকগুলো প্রযুক্তিগত সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছে। যেখানে দেশী প্রযুক্তিবিদদের সাথে আর্ন্তজাতিক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের তথ্য ও জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বিআইবিএমের সাথে এর আগেও কয়েকটি সেমিনার করেছি। তবে এবার ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর ব্যাংকার্স ও একাডেমিসিয়ানদের জন্য অনুষ্ঠিত দুই দিনের আর্ন্তজাতিক সম্মেলনের অংশ হিসাবে ২৬ তারিখ এই সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে’।
সেমিনারের গুরুত্ব তুলে ধরে তপন কান্তি সরকার বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫৬টি ব্যাংক ও ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক আরটিজিএস, বিএফটিএন, ইএফটি, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচসহ অনেকগুলো প্রযুক্তিনির্ভর সেবা চালু করেছে, যার মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিকভাবে টাকা লেনদেন হচ্ছে। বর্তমানে ইএফটির মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ৮ লক্ষ লেনদেন হয়, যা টাকার অংকে প্রায় ৫৭৮০ কোটি টাকার ও বেশি। আমাদের দেশে আরটিজিএস (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) চালু হয়েছে ২৯ অক্টোবর ২০১৫ সনে, যার মাধ্যমে এক ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংকে সাথে সাথে ক্লিয়ার হয়ে যাচ্ছে যা আগে ২-৩ দিন সময় লাগত’।
সিটিও ফোরামের সভাপতি বলেন, ‘বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ৯০০০ শাখার মধ্যে প্রায় ৫৫০০ শাখার ও বেশি এই সিস্টেমের মধ্যে এসে গেছে। বর্তমানে প্রায় ৭২০০ এটিএম বুথ আছে যার মাধ্যমে দৈনিক প্রায় চার লক্ষবারেরও বেশি লেনদেন হয়, যা টাকার অংকে প্রায় ২৮০ কোটি টাকাও বেশি। বর্তমানে পিওএস মেশিন আছে প্রায় ৩২ হাজার, যার মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইসের সাথে যুক্ত। পিওএস এর মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ৩৬ হাজারেরও বেশিবার লেনদেন হয়, যা টাকার অংকে প্রায় ৩০ কোটি টাকারও বেশি’।
ব্যাংকের কার্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ৮০র দশকের শেষ দিক থেকে কার্ডের প্রচলন শুরু হয়েছে এবং ক্রেডিট কার্ডের প্রচলন শুরু হয়েছে ১৯৯৭ সাল থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা প্রায় ৮৫ লক্ষ এবং কার্ডের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বারেরও বেশি লেনদেন হচ্ছে যা টাকার অংকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। ই-কমার্সের প্রসারের ফলে অনলাইনেও টাকা লেনদেনের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক লেনদেনের প্রধান বাধা হচ্ছে এর নিরাপত্তা। আমাদেরকে অবশ্যই পিসিআই- ডিএসএস ও ইএমভির মত প্রযুক্তি ব্যাবহার বাধ্যতামুলক করতে হবে’।
সেমিনারের আয়োজনের উদ্দেশ্য বিষয়ে তপন কান্তি বলেন, ‘আমাদের দেশে ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ততটা সন্তোষজনক নয়। আমরা আর কোন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে গ্রাহকের টাকা ও তথ্য সুরক্ষিত রাখতে পারি, সেই বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য এই সেমিনারের আয়োজন। সেমিনারে বিভিন্ন ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি প্রধান ও কার্ড ডিভিশনের প্রধানসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন বলে আমরা আশা করছি’।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ২৬ তারিখে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ভিসা ইন্ডিয়া ও সাউৎ এশিয়ার চিফ রিস্ক অফিসার শিবকুমার শ্রীরামন। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বিআইবিএমের ডিরেক্টর জেনারেল ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী।
সেমিনারের দ্বিতীয় ভাগে সিটিও ফোরামের সভাপতি তপন কান্তি সরকারের সঞ্চালনায় একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে প্যানেল আলোচক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার দেবদুলাল রায়, স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ট ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি প্রধান মো. মুনিতুর রহমান, কর্মাশিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসির তথ্যপ্রযুক্তি প্রধান ড. ইজাজুল হক ও ডাটা এজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান নুর এ আলম।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিআইবিএমের ডিরেক্টর (রিসার্চ, ডেভেলপমেন্ট ও কনসালটেন্সি) প্রফেসর প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি, সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলম, সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ড. ইজাজুল হক, কোষাধক্ষ্য মো. মইনুল ইসলাম ও কার্যকরী কমিটির সদস্য মো. মহিউদ্দিন দেওয়ানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।
বিবার্তা/উজ্জ্বল