রাজশাহীতে দেশের একমাত্র কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। কর্মজীবনের শুরুতে এখান থেকেই প্রশিক্ষণ নেন সারাদেশের কারারক্ষীরা। প্রতিষ্ঠার পর এখানে ৩৭টি ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খুব একটা এগোয়নি। আবাসিক ও অবকাঠামোসহ নানা সমস্যায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে এই একাডেমি।
অবশেষে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির স্থায়ী ভবন নির্মাণসহ সবকিছুই আধুনিকায়ন করতে গত বছরের জুনে একনেকে ৭৩ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটির এরই মধ্যে এক বছর পার হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কোনো কাজই শুরু হয়নি। ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় ব্যয় বাড়ছে প্রকল্পে।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) বজলুর রশীদ বলেন, কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির কাজ শুরু করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নীলাম কান্তিকে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রায় ৬ মাস তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো কাজ শুরু করতে পারেননি। এরপর গত ২৫ জুলাই তিনি অবসরে চলে গেছেন। এখন নতুন পিডি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। আর পিডি না থাকলে ঠিকাদারও নিয়োগ করা যাচ্ছে না।
তিনি জানান, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের পশ্চিম পাশে প্রায় ১৮ একর জমিতেই নির্মাণ হবে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির বিভিন্ন ভবন। এ জন্য সবকিছুই ঠিকঠাক। একাডেমিক ভবন ছাড়াও প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য থাকবে ব্যারাক ও কর্মকর্তাদের বাসভবন। প্রধান ফটক থেকেই চোখে পড়বে কারা একাডেমির মনোগ্রামের নান্দনিক ভাস্কর্য। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান বলেন, কারারক্ষীদের অস্ত্র পরিচালনার জ্ঞান খুবই সীমিত। তথ্যপ্রযুক্তি ও পেশাগত দক্ষতা অর্জনেও তারা অনেকটা পিছিয়ে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল আইনকানুন ও বিধিবিধান সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান দান এবং হালকা শারীরিক ও অস্ত্র সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়াটা জরুরি।
তিনি বলেন, উন্নত প্রশিক্ষণ পেলে কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষীরা কারাগারের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান, সুশৃঙ্খল আচরণ, বন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ ও সৌজন্যবোধের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। আর এ কারণেই দেশের একমাত্র এই কারা প্রশিক্ষণ একাডেমিকে আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ একাডেমিতে রূপ দিতে একনেকে নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদনের ১৪ মাস পরও কাজ শুরু না হওয়াটা হতাশাজনক।
বিবার্তা/রিমন/নাজিম/জিয়া