ইউনিয়ন, থানা, পৌরসভা ও জেলা কমিটি গঠনের পাশপাশি আন্দোলনের নতুন ছক নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি। এ আন্দোলনের একেবারে সামনের সারিতে থাকছে ‘স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি। বিএনপি নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, এ ধরনের নির্বাচন কমিশন ছাড়া দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। আর শক্ত সাংগঠনিক কাঠামো না হলে আন্দোলনের মাঠে টিকে থাকা যাবে না। তাই এ দুটি বিষয়কে সামনে নিয়েই এগুতে চায় বিএনপি।
বিএনপি নেতারা বলেছেন, আগামী নভেম্বরের মধ্যেই সারাদেশে প্রতিটি পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন করার টার্গেট নিয়েই এগুচ্ছে বিএনপি। কারণ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখই শেষ হয়ে যাচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। মাঝখানে রয়েছে মাত্র পাঁচমাস। বিএনপি নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, স্বাধীন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের যে আন্দোলন তার যথার্থতা প্রমাণ হয়েছে গত জুন মাসে সম্পন্ন হওয়া ইউপি নির্বাচনে। বাংলাদেশে নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী প্রাণহানি (শতাধিক) ও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে এ নির্বাচনে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন এখন শুধু বিএনপির দাবি নয়। দেশের সব মানুষেরই দাবি। এটা দেশের সব রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিসহ সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পুনর্গঠন করতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের সহযোগী হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও ঢেলে সাজাতে হবে। এরপরই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। গণতন্ত্রহীনতা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বলেও মনে করেন বিএনপির এ নেতা।
এদিকে মাঠপর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের পাশাপাশি নভেম্বর থেকে বিএনপির গণসংযোগে নামার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ গণসংযোগে ‘সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের’ প্রতিবাদ এবং ‘গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের’ বিষয়টি নিয়ে জনমত গঠনে মাঠে নামার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান বিএনপির এ নেতা।
সূত্রগুলো জানায়, পবিত্র হজে যাওয়ার আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দায়িত্বশীল একাধিক নেতাকে দেশব্যাপী জনসংযোগ কর্মসূচির পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন খালেদা জিয়া। তিনি ঢাকার বাইরে একাধিক বিভাগীয় ও জেলা শহরে জনসভা করবেন।
তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন করতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের নবনিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে যৌথ সভা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত ২৯ আগস্ট ঢাকা ও দিনাজপুর জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের কাজও চলছে। কাজ চলছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটি গঠনের কাজও। এ ছাড়া সারাদেশে বিএনপি’র তিন অঙ্গসংগঠন মহিলা দল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটিও শিগগির ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সরকার ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। আগামী কয়েক মাসে তা আরও প্রকাশ পাবে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ আছে। এ ছাড়া ‘একতরফা’ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসায় সরকার ভেতর থেকেই নৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থায় আছে। এ জন্য সরকার আরেকটি নির্বাচনের জন্য সুবিধাজনক সময়-সুযোগ খুঁজছে। সরকারের মন্ত্রীরা বক্তৃতায় মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিচ্ছেন।
বিএনপির নেতাদের আশঙ্কা, চুপচাপ বসে থাকলে সরকার ৫ জানুয়ারির মতো আবারও একটি ‘সাজানো’ বা ‘পাতানো’ নির্বাচন করে ফেলবে। মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানের সাত বছরের সাজা ও দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার বিচার এ রকম কোনো পাঁয়তারার অংশ বলে সন্দেহ করছেন নেতারা। এই অবস্থায় মাঠে নামা ও দলকে গোছানোর বিষয়টি বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এদিকে বর্তমান নির্বাচন কমিশন এর ব্যাপারে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের কমিশন ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরে আরও একজন যুক্ত হন। সংবিধান অনুযায়ী কমিশনের মেয়াদ পাঁচ বছর। এ হিসাবে আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। রকিব কমিশনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে।
সংশ্লিষ্ট তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাসের শুরুতে সম্পন্ন হওয়া ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা হয়। এতে শতাধিক লোকের প্রাণ যায়। দেশে নির্বাচনের ইতিহাসে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা আর কখনো ঘটেনি।
বিবার্তা/জিয়া