আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
আগামী ২২ অক্টোবর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে ঢাকায় বড় ধরণের শোডাউন করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি সম্মেলনের আগে ও পরে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য সারা দেশে সভা-সমাবেশ অব্যাহত রাখবে দলটি। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস ইস্যুতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সারাদেশে জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ অব্যাহত রাখবে।
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক ভিত আরো মজবুত করার উদ্যোগ নিয়েছে। অচিরেই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন টিমে ভাগ হয়ে সারা দেশ সফর করবেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় জনসভায় ভাষন দেবেন। এর পাশাপাশি জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন জোরদার করতে চায় দলটি।
এদিকে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সারা দেশে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করে ঢাকায় বড় ধরণের মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বসে নেই দেশের বামপন্থি রাজনীতির প্রধান শক্তি হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও (সিপিবি)। আগামী ২৮ অক্টোবর জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে ঢাকায় লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিপিবি।
জানা গেছে, আপাতত সরকারবিরোধী আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা নেই বিএনপির। সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামলে নেতাকর্মীদের নামে মামলা-হামলা আরো বেড়ে যেতে পারে এই আশংকায় আপাতত সরকারবিরোধী কর্মসূচি থেকে দূরে থাকার কৌশল নিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তাছাড়া দেশি-বিদেশী বিভিন্ন মাধ্যমের পক্ষ থেকে বিএনপিকে সরকারবিরোধী কর্মসূচি না দিয়ে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে সংগঠনের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা থাকবে, জনগণের সম্পৃক্ততাও বাড়ানো যাবে বলে মনে করেন বিএনপির নীতি নির্ধারকরা।
এই ব্যাপারে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বিবার্তাকে জানান, বিএনপি সারা দেশেই অনেক শক্তিশালী দল। তৃণমূল পযার্য়ে একে আরো সুসংগঠিত করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা-উপজেলা সফর করবেন। পাশাপাশি আমরা ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন জোরদার করবো। বিশেষ করে রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণের প্রতিবাদে আমরা কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি। এই ইস্যুতে বিএনপি সভা-সমাবেশ ও রামপাল অভিমুখে লংমার্চ করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা হচ্ছে । ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মূল লক্ষ্য এখন জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে। স্মরণকালের সব চেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন আয়োজন করতে চান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সাংগঠনিক সফর করবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। মেয়াদউত্তীর্ণ জেলার সম্মেলন শেষ করারও কথা রয়েছে এই সময়ের মধ্যে। সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেবেন। এজন্য উদ্বোধনী পর্বে ব্যাপক শোডাউন করারও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
এর পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে আরো সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করছেন দলের নেতারা। ইতিমধ্যে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক সভা করে দলের এমপি, মন্ত্রী ও নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া জনসম্পৃত্ততা বাড়ানো যায় এমন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার জন্য নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। এ ধারাবাহিকতায় সারা দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সভা-সমাবেশ করছে ১৪ দল।
অপর দিকে আগামী তিন মাসব্যাপী সারা দেশে সাংগঠনিক সফরে বের হচ্ছেন জাপা নেতারা। জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঈদের এক সপ্তাহ পর সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে তিন মাসব্যাপী এই সফর শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
বিবার্তাকে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা পার্টিকে তৃণমূলে আরো সুসংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য পার্টির চেয়ারম্যানসহ সকল কেন্দ্রীয় নেতা দেশের সকল জেলা-উপজেলায় সভা-সমাবেশ করবেন। এর পাশাপাশি যে ১৫টি জেলায় আমাদের সম্মেলন বাকি রয়েছে আগামী তিন মাসের মধ্যে সেসব জেলায় সম্মেলনও আমরা সমাপ্ত করবো। সম্মেলনগুলোতে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিভাগীয় সমাবেশ সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের শেষ দিকে ঢাকায় বড় ধরণের সমাবেশ করবো। ওই সমাবেশ থেকে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে অংশ নেয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন পার্টির চেয়ারম্যান।
এদিকে পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় ধরণের লাল পতাকার সামবেশ করবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বের সমাবেশে সারা দেশ থেকে লক্ষাধিক নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন সিপিবির নেতারা। এছাড়া বিভিন্ন দেশের বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতারাও এবারের সম্মেলনে যোগ দেবেন। সম্মেলন ঘিরে বর্তমানে সিপিবির জেলা ও উপজেলা সম্মেলন চলছে। পাশাপাশি রামপাল আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সিপিবি সামনের কাতারে থেকে সাধ্যমতো লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
বিবার্তা/বিপ্লব/হুমায়ুন