স্বপ্ন দেখেছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার। হয়েছেনও। বাকী শুধু যোগদান। ৩৪তম বিসিএসএ প্রশাসন ক্যাডারে দেশের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হবেন। নাম তার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু। চাকরিজীবী পিতা-মাতার বড় সন্তান তিনি। বর্তমানে কাজ করছেন পূবালী ব্যাংকের অফিসার পদে। দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় হতে চান একজন সৎ কর্মকর্তা। মনের কথা খুলে বললেন বিবার্তার সঙ্গে। রবিবার সন্ধ্যায় অনেক ব্যস্ততার মধ্যেই এসেছিলেন বিবার্তার অফিসে। চিফ রিপোর্টার মহসিন হোসেনের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্যেই জানালেন স্বপ্ন ও সফলতার কথা। বিবার্তার পাঠকদের জন্য তার সফল হওয়ার গল্প তুলে ধরা হলো।
বিবার্তা২৪.নেট : আপনার শৈশব-কৈশর বেড়ে ওঠা নিয়ে প্রথমেই কিছু বলুন।
সেতু : আমার জন্ম চুয়াডাঙ্গায়। শৈশব-কৈশর সেখানেই কেটেছে। কোর্টচাঁদপুর মডেল প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু। যতদূর জানি ওই অঞ্চলে আমাদের স্কুলটি বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। রেজাল্টের দিক থেকে প্রতিবছর স্কুলটি ভাল করতো। ওই স্কুলে ইংরেজি শিক্ষক আশা স্যার আমাকে খুব ভালবাসতেন। ওখান থেকে ৫ম শ্রেণিতে আমি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাই। এরপর কোর্টচাঁদপুর গার্লস হাই স্কুলে ভর্তি হই। ৮ম শ্রেণিতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাই। ওই স্কুলের ইংরেজি স্যার ও ম্যাডাম আমাকে খুব সহযোগিতা করেছেন। আমি যখন এসএসসি পরীক্ষা দেব তখন যারা ভাল শিক্ষার্থী ছিল তাদের মধ্যে অধিকাংশই বিজ্ঞান বিভাগ নিয়েছিল। কিন্তু আমি আর আব্বুর ইচ্ছা ছিল আমি ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা করি। সেই ইচ্ছা থেকেই মানবিক বিভাগ বেছে নিলাম। এসএসসিতে ২০০৩ সালে ৪.২৫ পেলাম। এতে মনটা একটু খারাপ হয়েছিল। অবশ্য ওই বছর সারা বাংলাদেশে মানবিক বিভাগ থেকে মাত্র দুজন এ প্লাস পেয়েছিল। তাদের পুরো নাম মনে নেই। যতটুকু মনে আসে ছেলেটির নাম ছিল হাসান আর একটি মেয়ে পেয়েছিল তার নাম মারুফা।
বিবার্তা২৪.নেট : এতো গেলো প্রাইমারী ও মাধ্যমিক। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা বলুন।
সেতু : হ্যাঁ এসএসসি পাশের পর যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হলাম। সেখান থেকে এইচএসসিতে এ প্লাস পেলাম। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেলাম। থাকতাম রোকেয়া হলে। ২০০৬ থেকে ২০১২ এই সময়টা রোকেয়া হলেই কেটেছে।
বিবার্তা২৪.নেট : কর্মজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।
সেতু : মাস্টার্স শেষ করার এক সপ্তাহের মধ্যে পিপলস ইউনিভার্সিটির উত্তরা ক্যাম্পাসে প্রভাষক পদে জয়েন করি। এর কিছুদিন পরই পূবালী ব্যাংকে অফিসার পদে চাকরি পাই। দুটো চাকরি পেলেও আমি হাল ছেড়ে দেইনি। আমার ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ম্যাজিস্ট্রেট হব। আমার আব্বুরও একই স্বপ্ন ছিল। সেজন্য পড়াশুনা চালিয়ে গেলাম। ৩৪তম বিসিএসে লিখিত ও মৌখিক-এ পাশ করেছি। এখন শুধু গেজেট হওয়া বাকী। আশা করছি শিগগিরই যোগদান করতে পারবো।
বিবার্তা২৪.নেট : আপনার এই আশা পূরণের ক্ষেত্রে কার কার বেশি অবদান বলে আপনি মনে করেন।
সেতু : এ প্রশ্নের জবাবে সবাই একই কথা বলে থাকেন। আমার জবাবেও তার ব্যতিক্রম হবে না। নিশ্চয়ই আমার সফলতার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান আমার পিতা-মাতার। আমি তাদের বড় সন্তান। তারাই আমাকে উৎসাহ দিয়ে এ পর্যায়ে আসতে সহায়তা করেছেন। তাদের অবদান কোনোদিনই ভোলার নয়।আর পড়াশুনার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অবদানও ভুলবো না।
বিবার্তা২৪.নেট : শিগগিরই আপনি একজন সরকারি কর্মকর্তা হতে যাচ্ছেন। তো ওই পদে যোগ দিয়ে দেশ ও জাতির জন্য আপনার কী করণীয় থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন।
সেতু : কথাটি বললে হয়তো ভাল শোনাবে না। তবুও বলতে চাই, আমাদের দেশে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আমি এই বিষয়টাকে মাথায় রেখে একজন সৎ কর্মকর্তা হতে চাই। ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে সততাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।
বিবার্তা২৪.নেট : আপনার পিতা-মাতা ভাই বোনদের সম্পর্কে কিছু বলুন।
সেতু : আমার আব্বু একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি সর্বশেষ উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ছিলেন। বর্তমানে অবসর নিয়েছেন। তার নাম মো. সিদ্দিক উল্লাহ। মাতা-সাজেদা হকও একজন চাকরিজীবী। তিনিও বিআরডিবিতে চাকরি করেন। আমার ছোট ভাই এইচএসসি পাস করে সেনাবাহিনীতে কমিশন পেয়েছে। তার নাম সাদেকুজ্জামান তরু। বর্তমানে ক্যাপ্টেন পদে সেনা প্রধানের এডিসি হিসেবে কর্মরত। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট বোন সাদিয়া সিদ্দিকা জিতু। সে এইচএসসি পাশ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিবার্তা/এমহোসেন