প্রকৃত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন নানজীবার

প্রকৃত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন নানজীবার
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০১৬, ১৭:০৮:১৮
প্রকৃত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন নানজীবার
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+
হাতে কলম ধরার আগেই তুলি দিয়ে জীবনের প্রথম প্রতিযোগিতায়ই অর্জন করেছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কার। বয়স ১৫ বছরের গণ্ডি পেরোনোর আগেই শিশু সাংবাদিক হিসেবে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, তথ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্য ও যোগাযোগ, তথ্য ও টেলিযোগাযোগ, খাদ্য, ভূমিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ৭২ জনের মতো সাক্ষাতকার নেয়া শেষতার।
 
এতক্ষণ যার কাজের বর্ণনা করছিলাম তিনি শিশুসাংবাদিক, ফিল্ম ডিরেক্টর, উপস্থাপক ও বিতার্কিক  নানজীবা খান। বর্তমানে তিনি বিডিনিউজ২৪ডটকমের রিপোর্টার, বিডিমিডিয়া ও বিডিনিউজটাইমসডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি, বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপস্থাপিকা, ক্যামব্রিয়ান ডিবেটিং সোসাইটির কার্যকরী সদস্য, গল্পকার, স্ক্রিপ্টরাইটার ও ইউনিআইসিইএফের শিশু চলচ্চিত্র পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্বল্প সময়েই করেছেন এতো সব অর্জন। নানজীবা থেমে থাকতে চান না এইটুকুতেই, তার স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। আর তাই তো পড়াশুনার ফাঁকে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিভা প্রকাশের সংগ্রাম।
প্রকৃত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন নানজীবার
বহুগুণে গুণান্বিতা এ তরুণ সম্ভাবনাময় শিল্পী সম্প্রতি বিবার্তার মুখোমুখি হন। জানান নিজের জীবনের বর্ণাঢ্য গল্প। সেই গল্প জানাচ্ছেন বিবার্তা২৪ডটনেটের নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল এ গমেজ।
 
নানজীবার জন্ম পুরান ঢাকায়। শৈশবের উচ্ছ্বল দিনগুলো কাটে সেখানেই। প্রাইমারি পড়াশুনা করেন পুরানো ঢাকার বাংলাদেশ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। হাইস্কুল ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এসএসসি কৃতিত্বের সাথে পাস করে ২০১৬ সালে এখানেই এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষে পড়াশুনা করছেন তিনি।
 
নানজীবার ‘নানজীবা’হয়ে ওঠার গল্পটা জানতে চাইলে মিষ্টি হেসে বলেন, আসলে আমি তেমন কেউ নই যে, আমার ‘আমি’হয়ে ওঠার গল্প জনমানুষকে জানাতে হবে। আমি বাঙালি ঘরের দু’পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো অতি সাধারণ একজন মেয়ে, যে বেড়ে উঠেছে মানবসেবার প্রত্যয় নিয়ে। পুঁজি বলতে কিছুই ছিলো না আমার, ছিলো শুধু একবুক সাহস, আর হার না মানার তীব্র জেদ। এসবই আমাকে আজকের নানজীবা বানিয়েছে।
 
সাংবাদিকতা শুরুর গল্পটা জানতে চাইলে নানজীবা জানালেন, ২০১৩ সালে ক্লাস এইটে পড়ার সময় বিডিনিউজ২৪ডটনেটে শিশু সাংবাদিক নেয়ার সার্কুলার দেখে আবেদন করেন। তিন হাজারের বেশি প্রার্থীর মধ্যে থেকে ২৫ জনকে ডাকা হয় ইন্টারভিউ বোর্ডে। তিনি তাদের একজন। ওটাই জীবনের প্রথম কোন চাকুরির ইন্টারভিউ। সেখান থেকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয় ১৫ জন শিশুসাংবাদিককে। সেই ১৫ জনের মধ্যে মাত্র পাঁচজনকে প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয় রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে। ওইদিনই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের সাক্ষাতকার নেন তিনি। শুরু হয় তার সাংবাদিকতার ভুবনে বিরামহীন পথ চলা।
প্রকৃত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন নানজীবার
বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের সাক্ষাৎকার নেয়ার মাধ্যমে আপনার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। শিশু সাংবাদিক হিসেবে ওইদিনের অনুভূতিটা কেমনছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাকিব ভাইয়ার ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে খুব নার্ভাস লাগছিলো। কিন্তু ভালভাবেই শেষ করেছিলাম। উনি খুব ভালো মানুষ। উনাকে আমার দারুণ পছন্দ।
 
ওই ইন্টারভিউয়ের ধারবাহিকতায় পরে আমি শিশু সাংবাদিক হিসেবে সাক্ষাৎকার নিয়েছি স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, তথ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্য ও যোগাযোগ, তথ্য ও টেলিযোগাযোগ, খাদ্য, ভূমিমন্ত্রীর। বাদ পড়েননি বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, ইমদাদুল হক মিলন, যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজাসাগর, বিশিষ্ট ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার, র‌্যাবের প্রধান বেনজির আহমেদ, বাংলাদেশের প্রথম নারী ফটোগ্রাফার সাঈদা খানম, বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার, প্রথম মহিলা তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম, জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা কবরী, আরিফা জামান মৌসুমীসহ এদেশের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের।
প্রকৃত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন নানজীবার
বিটিভিতে লম্বা সময়জুড়ে কাজ করছেন শিশু সাংবাদিক নানজীবা খান। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমাদের কথা ও আমরা রঙিন প্রজাপ্রতি অনুষ্ঠান দুটির উপস্থাপক। বিটিভিতে উপস্থাপনা করেও কুড়িয়েছেন সবার প্রশংসা।
 
জীবনের প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ প্রামাণ্যচিত্র পরিচালনা করে অর্জন করেছেন ২০১৫ সালের ইউনিসেফের ‘মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’। পথশিশুদের প্রতি গভীর ভালবাসায় সেই পুরস্কারের টাকা তুলে দিয়েছেন পথশিশুদের হাতে।
নানজিবা বলেন, ওদের জন্য মন কাঁদে। কারণ ওরা অবহেলিত, অধিকারবঞ্চিত। রাজনীতিকসহ সকলেই কেবল ওদের ভাগ্যোন্নয়নের কথা বলেন, কিন্তু কেউ ওদের পাশে দাঁড়ান না। শুধু ওপর ওপরই ভালোবাসা দেখান। আমি ওই ওপর ওপরের বৃত্তটা ভাঙতে চেয়েছি। তাই নিজের পুরস্কারের অর্থ ওদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছি।
 
নানজিবার পরিচয় শুধু একজন মানবদরদী হিসেবেই নয়, তার পরিচিতি রয়েছে মডেলিং, অভিনয়, পরিচালনা, উপস্থাপনা ও বিতার্কিক হিসেবেও।
নানজীবা খান অভিনীত স্বল্পদৈর্ঘের ছবি ‘সেলফমেইড ম্যান’ পেয়েছেন প্রথম পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক, শিশুতোষ জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান কিশলয় কচিকাঁচা মেলায় আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় লাভ করেছেন প্রথম স্থান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত বিএনসিসি প্রশিক্ষণেও পরপর তিনটি ক্যাম্পিংয়ে উপস্থিত বক্তৃতায় অর্জন করেছেন প্রথম স্থান। বর্তমানে উপস্থাপনা, রেডিওর আরজে ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছে তিনি। সব মিলিয়ে দূরন্ত গতিতেই ছুটছেন নানজীবা।
 
এ প্রসঙ্গে নানজীবা বলেন, কাজগুলো বেশ উপভোগ করছি। এসব করে কি পেয়েছি সেটি আমার কাছে মুখ্য নয়, ভবিষ্যতে মানুষের জন্য কি করা যেতে পারে সেটিরই প্রস্তুতি নিচ্ছি। অর্জনের ভান্ডার এখনই খুললে জীবনের চলার পথ এখানেই থেমে যেতেও পারে। তাই এখন শুধু বর্তমান নিয়ে ভাবছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি আজকের কাজগুলোই কাল আমার অর্জন হবে।
 
ভবিষ্যৎ স্বপ্ন বিষয়ে নানজীবা বলেন, আমি ভবিষ্যতে নিজেকে কোনো ‘তথাকথিত’মানুষ নয়, ‘প্রকৃত’মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। আর আমৃত্যু কলমযুদ্ধটা অব্যাহত রাখতেচাই। চিত্রশিল্পী, লেখক, উপস্থাপক, মডেল, অভিনেত্রী এসব পরিচয়ের চেয়ে নিজেকে সাংবাদিক ও শিশুচলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে দেখতে ভাল লাগে। শিশুদের নিয়ে কিছু ডকুমেন্টারী তৈরি করেছি। ভবিষ্যতে দেশেই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিশু চলচ্চিত্র তৈরি করার ইচ্ছে আছে।
 
বিবার্তা/উজ্জ্বল/মৌসুমী
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com