রবিনের রঙ তুলির সংসার

রবিনের রঙ তুলির সংসার
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৯:৩১:৪১
রবিনের রঙ তুলির সংসার
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
প্রিন্ট অ-অ+
সারাদিনে সাড়ে ১০ ঘণ্টা ডিউটি। এরপর বাসায় ফিরে রান্না, কাপড় ধোয়াসহ নিজের অন্যান্য কাজ। কাজ সেরে সবাই যখন ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দেয়, তখন রবিনের শুরু হয় আর এক সংসারের কাজ। সেই সংসারে স্ত্রী নেই, সন্তান নেই। নেই মা-বাবা বা অন্য কেউ। এটি তার রঙ তুলির সংসার।
 
যখন সারা পৃথিবী ঘুমায় তখন আরব আমিরাত প্রবাসী শিল্পী জাহেদুর রহমান রবিন পেতে বসেন তারা রঙ তুলির সংসার। তুলির আচড়ে সৃষ্টি করেন নানা চিত্রকর্ম। যার বেশিরভাগই মানুষের ছবি। সেখানে স্থান পায় গ্রাম-বাংলা, সবুজ বনানী কিংবা আধুনিক নগর আরো কতো কী! আপন ভোলা রবিন মনের মাধুরী মিশিয়ে আঁকেন ফুল, প্রজাপতি, নদী পাহাড়, অফিস কর্তা কিংবা ঘাটের মাঝি। তবে তার সবচেয়ে প্রিয় নারী চরিত্র।
রবিনের রঙ তুলির সংসার
ছবি পাগল এই শিল্পীর জন্ম ব্রাহ্মণ বাড়িয়ায়। তিন বোনের এক ভাই রবিন। ছোট বেলা থেকে তার মন পড়ে থাকত ছবি আঁকায়। যেখানে বসতেন, সেখানেই আঁকতেন ছবি। ঠিক যেন জয়নুলের মতো- তার ঘরের মেঝেতে ছবি, চৌকাঠে ছবি, স্কুলের খাতায় ছবি। ছবি পাগল এক ছেলে। জয়নুলের বাবার মতো রবিনের বাবাও ভাবতেন কী হবে এই ছবি পাগল ছেলে দিয়ে। কিন্তু জয়নুলের সঙ্গে রবিনের একটা জায়গায়  অমিল। তা হচ্ছে  জয়নুল এক সময় চিত্রকলায় পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু রবিনের সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। জীবিকার তাগিদে তাকে পাড়ি জমাতে হয়েছে বিদেশ বিভুঁইয়ে। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র নন রবিন। সেখানেই গড়ে তুলেছেন তার রঙ তুলির স্বর্গ।
 
এক সময় অভিনয় করতেন রবিন। ভালো আবৃত্তিও করতেন। বন্ধু মহলে ভীষণ প্রিয় ছিলেন আড্ডা পাগল রবিন। কিন্তু চিত্রকর্মের নেশায় তাকে অনেক কিছু ছাড়তে হয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে এখন আর তেমন যোগাযোগ হয় না। ছেড়েছেন আবৃত্তি, অভিনয়। সবকিছু ভুলে মগ্ন ছবি আঁকায়। একেছেন মানুষের নজর কাড়া অসংখ্য ছবি। শিল্পের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। আরব আমিরাতের পাঁচতারা হোটেলগুলোর দেয়ালে এখন বিশ্বের বড় বড় চিত্রকরদের পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে রবিনের আকা ছবিও।
রবিনের রঙ তুলির সংসার
সম্প্রতি এক প্রতিযোগিতা আরো ওপরে নিয়ে গেছে রবিনকে। আরব আমিরাতের মধ্যে নবম হয়েছেন বাংলাদেশের এই শিল্পী। তার রঙ তুলির আচড় চিনিয়েছে বাংলাশেকে।বিদেশে থাকলেও এই শিল্পীর মন পড়ে থাকে দেশে। যুক্ত থাকতে চান দেশের সঙ্গে, দেশের মানুষের সঙ্গে। শিল্পকলা আর শিল্পকর্মের সঙ্গে। এই বই মেলাতেও তাই প্রচ্ছদ করেছেন দেশের নবীন-প্রবীণ লেখকের বইয়ের।
 
চিত্রপটপ্রেমী জাহেদুর রহমান রবিনের প্রিয় চিত্রশিল্পীর কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, দেশে সবচেয়ে ভালো লাগে হাসেম খানকে। তার শিল্পকর্ম মুগ্ধ করে এই শিল্পীকে। হাসেম খানের ছবিতে প্রাণ খুঁজে পান তরুণ শিল্পী রবিন। দেশের বাইরে তার সবচেয়ে ভালো লাগে হামিদ বিন সায়েদকে। মিশরের এই জগৎবিখ্যাত শিল্পীর সঙ্গে কিছুদিন কাটানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে রবিনের। ওই কয়েকদিনে তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বাংলাদেশি এই শিল্পী। এ জীবনে এই গুণী শিল্পীর কথা ভুলবেন না তিনি।
 
এসএম সুলতানের ছবি সম্পর্কে জানতে চাইলে আরো বিনয়ী হন রবিন। জানান সুলতানের শিল্পকর্ম নিয়ে কথা বলার মতো সাহস তার নেই। তার শিল্পকর্ম পছন্দ করেন নবীন এ চিত্রকর। ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে এই তরুণ শিল্পীর সহজ উত্তর, শিল্পী কবিদের কোনো ভাবিষ্যত পরিকল্পনা থাকে না। জীবন তাদের যেদিকে নিয়ে যায় তারা সে দিকেই যান। তবে তার ইচ্ছে আছে সুযোগ পেলে দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। মানুষের জন্য কিছু করতে পারাকে জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া মনে করেন এই রঙতুলির কারিগর।
 
বিবার্তা/নাহিদ/মহসিন
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com