‘হোসনে আরার জীবন যুদ্ধের গল্প’ বিবার্তা২৪.নেট অনলাইন নিউজ পোর্টালের ‘আপন আলোয় উদ্ভাসিত’ পাতায় এই শিরোনামে একটি সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয় গত ২ নভেম্বর ২০১৫। সাক্ষাতকারটি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক রবি খন্দকারের নজরে আসে। এটি তিনি ‘আমাদের মিঠাপুকুর’ নামে ফেসবুক পেজে শেয়ার করেন। সেখান থেকে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন সাক্ষাতকারটি দেখেন। তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন, হোসনে আরা যেন জয়িতা পুরস্কার পান। তার অনুপ্রেরণায় হোসনে আরা এগিয়ে যান। এরপর গত ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ মিঠাপুকুর উপজেলা থেকে শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে হোসনে আরা ওই পুরস্কারটি পান। আমাদের সমাজ থেকে এমন হাজারো হোসনে আরা আজ এগিয়ে আসছেন সামাজিক প্রতিকূলতার মাঝেও। আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে হোসনে আরার সাক্ষাতকারটি বিবার্তার পাঠকদের জন্য পুনরায় প্রকাশ করা হলো।
একটি মফস্বল শহর। একজন মেয়ে। একা একটা ফ্ল্যাটে থাকা। এটা যেন একটা মহা অন্যায় কাজ। এই সামাজিকতা থেকে আজো আমরা বেরিয়ে আসতে পারিনি। সেই গ্যাড়াকলে আমিও পড়েছিলাম। সেভ দ্যা চিলড্রেনে প্রথম চাকরিটা হয় ডেপুটি ম্যানেজার পদে। কর্মস্থল ঠিক হলো মেহেরপুর। কাউকে সাথে নিয়ে যাওয়ার মতো ছিল না। একাই সেখানে যেতে হয়। কাজও করেছিলাম প্রায় আড়াই বছর। কিন্তু এক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার।
এতক্ষণ যার বক্তব্য শুনছিলেন তিনি হলেন হোসনে আরা। জন্ম রংপুরের এক অজপাড়া গাঁয়ে। যে গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। হেরিকেনই যাদের ভরসা। সেই গ্রামের নাম শিকারপুর। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার এই শিকারপুর গ্রামের হোসনে আরা, একদিন ব্রিটিশ কাউন্সিলের এত বড় পদে চাকরি করবেন কোনো দিন ভেবেও দেখেননি।
হোসনে আরার জীবনযুদ্ধের গল্প বাবা-মা এর অনুপ্রেরণা আর নানা-নানীর উদারতার কারণেই আজ তার এই অবস্থান। কলেজে ভর্তি হওয়ার ডোনেশনের টাকা যোগাড় করতে বাবার ৩ বিঘা জমি বন্ধক রাখতে হয়েছিল কৃষি ব্যাংকে। গতকাল শনিবার তিনি এসেছিলেন বিবার্তার অফিসে। গল্প করেন চিফ রিপোর্টার মহসিন হোসেনের সঙ্গে। আসুন আজ হোসনে আরার সেই গল্প শুনি।
প্রাইমারী শিক্ষা শুরু হয়েছিল শিকারপুর গ্রামের বাতাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বেশিদিন পড়া হয়নি সেখানে। ৩য় শ্রেণিতে উঠেই স্কুল পরিবর্তন। ভর্তি হলেন রংপুর কারমাইকেল কলেজিয়েট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ৫ম শ্রেণি পাস করেন। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন রংপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে। দুস্টুমিটা তখন একটু বেড়ে যায়। লেখাপড়ায় মোটেই মন বসাতে পারতেন না।
হোসনে আরা বললেন, হাইস্কুল জীবনে এতই দুষ্ট্রমি করতাম যে, কোনোদিন আধা ঘন্টার বেশি লেখাপড়া করেছি বলে মনে পড়ে না। এতে মা-বাবা মনক্ষুণ্ণ হলেন। বললেন লেখাপড়া আর করাবেন না। বিয়ে দিয়ে দেবেন। এসএসসি পরীক্ষার আগেও দুস্টুমি কমেনি। কিন্তু আমার মা একজন গৃহিনী হয়েও আমার দিকে নজর রাখতেন। রাতে পড়ার টেবিলের পাশে বসে থাকতেন। ঘুমিয়ে পড়লে বড় মগে চা বানিয়ে এনে সামনে দিতেন। চা খেয়ে নাও ঘুম চলে যাবে। বেশি ঘুম আসলে মা জোর করে বাইরে নিয়ে যেতেন। মা বলতেন চলো হেঁটে আসি। ঘুম চলে যাবে। রাত ২টা ৩টা পর্যন্ত পড়তে বাধ্য হতাম। শুধুই মায়ের কারণে।
বাবার আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। এ অবস্থায় ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে এসএসসি পাস করলাম। ভর্তি হবো রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে। সেটা ১৯৯৮ সালের কথা। কলেজটিতে ভর্তি হতে হলে ১০ হাজার টাকা ডোনেশন দিতে হবে। কিন্তু আমার বাবার এমন কোনো সামর্থ্য ছিল না, যে আমাকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি করাবেন। সঙ্গে মাসে ৪৫০ টাকা টিউশন ফি। এটা আকাশকুসুম কল্পনা। বাবা বললেন প্রয়োজন নেই। কিন্তু বড় ভাই তখন বাবাকে বললেন, বাবা তোমার যে জমি আছে ওটা বন্ধক রাখো। এই হোসনে আরা একদিন তোমার ওই জমি ছাড়িয়ে আনবে।
হ্যাঁ হোসনে আরা জমি ঠিকই ছাড়িয়ে এনেছেন। কিন্তু সেটা বাবা দেখে যেতে পারেননি। এটাই হোসনে আরার বড় দুঃখ।
শুরু করলেন আবার, বড় ভাইয়ার কথা মতো বাবা জমি কৃষি ব্যাংকে বন্ধক রাখলেন। আমি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে ভর্তি হলাম। এবার লেখা পড়ায় মনযোগী হলাম। ভাল রেজাল্ট করতে হবে। বাবার জমি বন্ধকের টাকাতো আর জলে ফেলা যায় না। এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ পেলাম।
এরই মধ্যে বড় ভাই একটা পাগলামি করলেন। তিনি বুয়েটে পড়াকালে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ। প্রায় দেড় বছর। বাবা বিভিন্নভাবে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পেলেন না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবা বললেন তোমাকে আর ঢাকায় পাঠাবো না। রংপুর কারমাইকেল কলেজে সবাই পড়ে। তুমিও এখানে পড়।
মেয়ে হোসনে আরাতো ঢাকায় পড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। কিন্তু কিভাবে। হ্যাঁ হঠাৎ করে তার বুয়েট পড়ুয়া বড় ভাইয়ের সন্ধান মিলল। যোগাযোগ শুরু করলেন বাড়ির সঙ্গে। বাবাকে বললেন, হোসনে আরাকে ঢাকায় পাঠাতে হবে। এতদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ঢাবিতে ভর্তি সেতো চাট্টিখানি কথা না। কিন্তু প্রস্তুতি কোথায়। হ্যাঁ প্রস্তুতি ছাড়াই ঢাকায় আগমন। বিনা প্রস্তুতিতেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ। আইইআর এ ভর্তির সুযোগ পেলেন।
২০০১ সালে ভর্তি হলেন ঢাবিতে। এ সময়টাতে পরিবারের আর্থিক অবস্থা আরো খারাপ হলো। বাবার ব্যবসায় ধসই এর মূল কারণ। কিন্তু হাল ছাড়েননি হোসনে আরা।
তখন ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা ছিল না। এমনও সময় গেছে রংপুর থেকে ভর্তির কাজে রাতের গাড়িতে এসে সকালে ঢাকায় নেমেছেন। সারাদিন কাজ করে আবার রাতের গাড়িতে রংপুর গেছেন। এতটা কষ্টের মধ্যেই ঢাবিতে ভর্তি হন। তৃতীয় বর্ষ থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করেন। কোনো জব না করলেও টিউশনি করে আয় রোজগারের পথ ধরেন।
নিজের লেখাপড়ার খরচসহ বাড়িতেও সহায়তা শুরু সেখান থেকেই। ছোট দুই ভাইবোনের লেখাপড়া থেকে শুরু করে বাবা-মায়ের দেখাশোনা করা সেই থেকেই শুরু। চলছে এখনো।
বাবা স্ট্রোক করে প্রায় ১২ বছর বিছানায় ছিলেন। বাবা মায়ের সংসার চালানো। এর মধ্যে নিজের স্বপ্ন বলতে কিছু ছিল না। মাথায় চিন্তা একটাই ছিল কিছু একটা করতে হবে। পরিবারের হাল ধরতে হবে।
সেই স্বপ্ন নিয়েই ঢাবিতে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে লাগলেন। ২০০৫ সালে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফিফথ হন। আর মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস পান।
তৃতীয় বর্ষ থেকেই আয় রোজগার শুরু করলেও চাকরির শুরু মাস্টার্স এর পরেই। কারণ একদিনও বসে থাকার সুযোগ ছিল না। কারো বাসায় একদিন থাকবো তেমন কেউ ঢাকায় ছিল না। তখন একটা জব আমার জন্য সোনার হরিণ। পেয়ে গেলাম। মাস্টার্স এর থিসিস পেপার জমা দিতে দিতেই ব্র্যাকের শিক্ষা কার্যক্রমে প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি হয়ে যায়।
মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর প্রথম বছর সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করেছিলাম। ২৭ তম বিসিএসেও অংশ নিয়েছিলাম। সফল হইনি। ব্র্যাকে চাকরি করতে করতে চিন্তা করলাম এর চেয়ে ভাল কি করা যায়। বহুজাতিক কোম্পানিতে চেষ্টা করতে থাকলাম।
অবশেষে সেভ দ্যা চিলড্রেনে ডেপুটি ম্যানেজার পদে চাকরি পেলাম। সেটা ২০১০ সালের কথা। প্রথম পোস্টিং হলো মেহেরপুরে। সে এক তিক্ত অভিজ্ঞতা।
হ্যাঁ সেটাই বলুন।
এবার শুরু করলেন, হোসনে আরার মফস্বল শহরে একা থাকার গল্প।
বলতে থাকলেন। আমি শুধু শুনে গেলাম। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতাই তার জীবনের বড় অভিজ্ঞতা। মেহেরপুর সেভ দ্যা চিলড্রেন অফিসে গেলাম। আগে থেকে একই পদে (ডেপুটি ম্যানেজার) একজন মুরুব্বী সেখানে রয়েছেন। যদিও তার কাজ আর আমার কাজ এক নয়। তবুও তিনি ওই পদটি পেয়েছেন দীর্ঘ সতের বছর কাজ করার পর। আর আমি কি না রাতারাতি ডেপুটি ম্যানেজার হয়ে তার সামনে উপস্থিত।
এতে অনেকটা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। আমাকে যিনি তার সামনে হাজির করেছিলেন, তাকে আমার সামনেই বলে বসলেন, কোথা থেকে কাকে ধরে এনেছেন। এমনিতেই নতুন চাকরি, নতুন জায়গা। তার ওপর কলিগের এমন মন্তব্যে আমিতো দিশেহারা। মনে মনে ভাবলাম, এ আমি কোথায় এলাম। কার সামনে এলাম।
হাল ছাড়লাম না। ঢাকায় বসের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তিনি আমাকে অভয় দিয়ে বললেন, চালিয়ে যাও কোনো সমস্যা হবে না।
এবার সামাজিক সমস্যার পালা। আমি একা একজন মেয়ে। একটি ফ্ল্যাটে থাকবো। এ যেন মহা অন্যায় কাজ। রাস্তাঘাটে নামলেই বিভিন্ন মন্তব্য ছুঁড়ে দিতো পাড়ার লোকেরা। নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারতাম না। এত নোংরাও মানুষ হয়, তাও দেখতে হলো।
বাসায়তো কখনো কোনো পুরুষ মানুষ প্রবেশ করানো যাবেই না। এরই মধ্যে একবার আমার ভীষণ জ্বর হলো। স্যালাইন লাগিয়ে বিছানায় পড়ে আছি। দেশের বাড়ি থেকে ছোট বোনকে নিয়ে বড় ভাইয়া এলো। ছোট বোনকে রেখে সকালেই ভাইয়া ঢাকার গাড়িতে উঠলেন। সকাল বেলা ভাইয়াকে গাড়িতে উঠতে দেখে আশেপাশের লোকজন কানাঘুষা শুরু করলো। ওই বাসায় একটা মেয়ে থাকে। সেখানে রাতে একজন পুরুষ ছিল। তবে এই বিষয়টায় বাড়িওয়ালা আন্টির সহায়তা পেয়েছিলাম। তিনিই আমাকে আগলে রাখতেন।
এমন সব অভিজ্ঞতার মধ্যেই প্রায় আড়াই বছর সেখানে কাটালাম। অবশেষে প্রোমোশন পেয়ে ঢাকা অফিসে পোস্টিং হলো। চলে এলাম ঢাকায়। শুরু হলো নতুন জীবন। ম্যানেজার পদটি বেশ সম্মানের ছিল। এখানেও প্রায় ২ বছর কাজ করলাম। এর মধ্যে সেভ দ্যা চিলড্রেন ইউএসএ থেকে আমার গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল।এটির নাম প্রোগ্রাম এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড। যা কিনা সারা বিশ্বের মধ্যে আমরাই পেয়েছিলাম।
এখন কোথায় আছেন? হ্যাঁ গত মাসেই জয়েন করেছি ব্রিটিশ কাউন্সিলে। এবার যে পদটা পেয়েছি, এটার নাম ‘হেড অব স্কুলস’।বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল নিয়েই এই কর্মসূচি। এখানে ডিএফআইডি ফান্ডিং করে। বলা যায় আগের চেয়ে এটা অনেক বড় একটা জব। তবে আমি এখানেও বেশি দিন থাকতে চাই না। আমার ইচ্ছা পিএইচডি করবো। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কাজ করতে চাই। অর্থাৎ রিজিওনাল পর্যায়ে কাজ করার একটা ইচ্ছা আছে।
অনেকতো করলেন, বিয়েশাদি করার বিষয়ে কি ভাবছেন? হ্যাঁ বিয়ে করতে চাই। তবে মুক্ত মনের মানুষ না পেলে করবো না। মুক্তমনের মানুষ বলতে কি বোঝাতে চাইছেন? এমন একজন মানুষ চাই যে কি না আমার স্বাধীনতায় কখনোই হস্তক্ষেপ করবে না। আমার আয় আমার ব্যয় এটা একান্ত আমরা নিজস্ব বিষয়। এগুলোতে নাক গলানোর মতো কোনো মানুষ আমি বেছে নিতে চাই না।
আপনি একটি অজপাড়া গায়ের মেয়ে হয়ে এত ওপরে এসেছেন। তো বাংলাদেশের মেয়েদের উদ্দেশে কিছু বলবেন কী?
হ্যাঁ বলবো না কেন। অবশ্যই বলবো। আমিও যেহেতু মেয়ে, তাই আমি মেয়েদের উদ্দেশে বলতে চাই সবাই যেন নিজেকে স্বাবলম্বী করে নেয়। পড়াশুনার ক্ষেত্রে আমার মতো যেন ফাঁকি না দেয়। নিজেকে নিজের মতো করে গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই শিক্ষাটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে পারলেই সমাজে মান সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা যায়। আমি চাই সব মেয়ে এমন হোক। তাকে যেন অন্যের ওপর ভর করে চলতে না হয়।
আপনার এই সফলতার পেছনে অবশ্যই আপনার পিতা-মাতার অবদান রয়েছে। তার পরে কার অবদান বেশি। আমার নানু ভাই ও নানীর কথা না বললেই নয়। আমাদের ৪ ভাই বোনকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য নানু ভাই সিকান্দার মিয়া তার সব জমি বিক্রি করেছেন।
আব্বু জমি বন্ধক রেখে আমাকে ঠিকই কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু নানু ভাই এক এক করে জমি বিক্রি করে আমাদের পেছনে ব্যয় করেছেন। এক নাগাড়ে নানু-নানী ১৯ বছর আলাদা থেকেছেন। শুধুই আমাদের জন্য।
তখন গ্রামের বাড়িতে নানু ভাই থাকতেন। বাড়ি দেখাশুনা করার জন্য তাকে সেখানে থাকতে হতো। অন্যদিকে নানী আমাদের নিয়ে রংপুর শহরে থাকতেন। এ ধরনের স্যাকরিফাইস কোনো নানা-নানী তার নাতি-নাতনিদের জন্য করেননি বলে আমার ধারণা।
আপনার বাবাতো এখন আর নেই।পরিবারের অন্যরা কে কোথায় থাকেন?
আমার মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন, নানীর কাছে। আমার বড় ভাইয়া মাহমুদুর রহমান ঢাকায় সাইফুরস এর টিচার। এখনো বিয়ে করেননি। ছোট বোন জান্নাত আরা সুরভি হোম ইকোনোমিক্স কলেজে অনার্স পড়ছে। ছোট ভাই আরিফুর রহমান তানভীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করছে। আমরা চার ভাই বোন একই বাসায় থাকি।
আমার ক্যারিয়ারের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমার এই ভাই বোন দুটির অবদান আমি কখনোই ভুলবো না। ওদের জন্য আমাকে বাসা নিয়ে কখনো চিন্তা করতে হয় না। আমার সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা বড় পাওয়া। ভাই বোনদের এই বন্ধন চিরদিন অটুট থাকুন এটা আমার চাওয়া।
গল্পতো অনেক হলো। এবার যাবার পালা। আমাদের অফিসে আসার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনার সঙ্গে গল্প করতে এসে অনেক পুরোনো কথা মনে পড়লো। মাঝে মাঝে এমন গল্প করাটা আসলেই মজার। ভাল থাকুন। ভাল থাকুক বিবার্তা পরিবার। ধন্যবাদ বিবার্তার পাঠকদের।
বিবার্তা/মহসিন