দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ট্রাজেডি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ট্রাজেডি
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৭:০২:০০
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ট্রাজেডি
হাবিবুর রহমান স্বপন
প্রিন্ট অ-অ+
সব যুদ্ধ ও সংঘর্ষের মূলে রয়েছে বিবাদমান জাতি বা রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও অধিকার লাভের উন্মত্ত আকাংখা। মানব ইতিহাসে যুদ্ধ চিরকালই অভিশাপ হিসেবে চিহ্নিত। আমরা যে সভ্যতার গর্ব করি এ সভ্যতাই এ অভিশাপের জন্মদাতা। মানব সভ্যতা যতই উন্নততর স্তরে পৌঁছেছে যুদ্ধবিগ্রহ ততই বর্বর ও অমানুষিক স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে। আদিম অসভ্য মানুষেরাও যুদ্ধ করতো। তাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল নিজ নিজ দলগত সুখ সুবিধা লাভ করা। তারপর সভ্যতার প্রাথমিক যুগ থেকে মধ্য যুগ পর্যন্ত যেসব বড় বড় যুদ্ধ বিগ্রহ হয়েছে মোটামুটিভাবে সেগুলোর লক্ষ্য ছিল পররাজ্য ও পররাজ্যের স্বাধীনতা হরণ করা। তারপর আসে ধনতান্ত্রিক যুগ। এই ধনতান্ত্রিক যুগের সমাজপতি ধনবাদীরা তাদের নিজ নিজ দেশের হর্তা-কর্তা বিধাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ধন ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করা। এই উদ্দেশ্য নিয়েই প্রথমে তারা দলবদ্ধ দলে পরিণত হয় এবং দেশের ধন-সম্পত্তি  ওলোকবলকে নিজেদের করায়ত্ত করে। তারপর দেশের শাসনভার হস্তগত করে। অর্থ ও ক্ষমতার লোভে নিজেদের দেশেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। দুর্দান্ত লোভের বশবর্তী  হয়ে তারা পর দেশের স্বাধীনতা  ও ধন-দৌলত কেড়ে নেয়। এভাবে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের মহাযুদ্ধের আগে বিভিন্ন দেশের শক্তিশালী ধনতান্ত্রিকগণ দুনিয়ার সকল সম্পদ ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেয়। ধনতান্ত্রিক জার্মানীর মুখপাত্র হিসেবে সেদিন কাইজার তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর উপর চড়াও হয়ে নিষ্ঠুর হত্যাকা- ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু জার্মান জাতির জন্য তার ফল ভাল হয়নি। প্রথম মহাযুদ্ধকে প্রজাতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্রের বিরোধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। কিন্তু সে বিরোধ ছিল ধনতন্ত্রের উচ্চতর বিকাশ সা¤্রাজ্যবাদের মধ্যকার লড়াই। 
 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (ইংরেজি : ডড়ৎষফ ডধৎ ওও, ঝবপড়হফ ডড়ৎষফ ডধৎ, ডডওও, ডড২) মানবসভ্যতার ইতিহাসে এযাবৎকাল পর্যন্ত সংঘটিত সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল, এই ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়সীমা ধরা হলেও ১৯৩৯ সালের আগে এশিয়ায় সংগঠিত কয়েকটি সংঘর্ষকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। তৎকালীন বিশ্বে সকল পরাশক্তি এবং বেশিরভাগ রাষ্ট্রই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং দুইটি বিপরীত সামরিক জোটের সৃষ্টি হয়; মিত্রশক্তি আর অক্ষশক্তি। এই মহাসমরকে ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্তৃত যুদ্ধ বলে ধরা হয়, যাতে ৩০টি দেশের সব মিলিয়ে ১০ কোটিরও বেশি সামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ খুব দ্রুত একটি সামগ্রিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং সামরিক ও বেসামরিক সম্পদের মধ্যে কোনরকম পার্থক্য না করে তাদের পূর্ণ অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রয়োগ করা শুরু করে। এছাড়া বেসামরিক জনগণের উপর চালানো নির্বিচার গণহত্যা, হলোকস্ট (হিটলার কর্তৃক ইহুদীদের উপর চালানো গণহত্যা), পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগ প্রভৃতি ঘটনায় কুখ্যাত এই যুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি থেকে সাড়ে ৮ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এসব পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করে যে এটাই পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম যুদ্ধ।
 
পূর্ব এশিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে জাপান ইতিমধ্যেই ১৯৩৭ সালে প্রজাতন্ত্রী চীনে আক্রমণ করে। পরবর্তীতে ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং তার ফলশ্রুুতিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। দ্বিতীয় ঘটনাটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা বলে গণ্য করা হয়। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত একনাগাড়ে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা আর চুক্তি সম্পাদনার মাধ্যমে জার্মানি ইতালির সাথে একটি মিত্রজোট গঠন করে এবং ইউরোপ মহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল নিজের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয়। মলোটভ- রিবেনট্রপ চুক্তি অনুসারে জার্মানি আর সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের দখলিকৃত পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। এই সময় শুধু যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য ব্রিটিশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহ অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছিল (যেমন ‘উত্তর আফ্রিকার যুদ্ধসমূহ’ আর বহুদিন ধরে চলা ‘আটলান্টিকের যুদ্ধ’)। ১৯৪১ সালের জুন মাসে ইউরোপীয় অক্ষশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে যার ফলশ্রুতিতে সমর ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ রণাঙ্গনের অবতারণা ঘটে। এই আক্রমণ অক্ষশক্তির সামরিক বাহিনীর একটা বড় অংশকে মূল যুদ্ধ থেকে আলাদা করে রাখে। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে জাপান অক্ষশক্তিতে যোগদান করে এবং প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় উপনিবেশগুলো আক্রমণ করে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের অধিকাংশ অঞ্চল জয় করতে সক্ষম হয়।
 
১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র (আমেরিকা) মিত্রশক্তির সাথে যোগ দেয়। মূলত জার্মানি এবং জাপান দুই অক্ষশক্তিই যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ করার মাধ্যমে একে যুদ্ধে ডেকে আনে। অপরদিকে চীনের সাথে জাপানের ছিল পুরাতন শত্রুতা; ১৯৩০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ চলছিল। এর ফলে চীনও মিত্রপক্ষে যোগদান করে। ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
 
এই যুদ্ধে নব্য আবিষ্কৃত অনেক প্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রয়োগ ছিল পারমাণবিক অস্ত্রের। মহাযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই এই মারণাস্ত্র উদ্ভাবিত হয় এবং এর ধ্বংসলীলার মধ্য দিয়েই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। সকল পুণর্গঠন কাজ বাদ দিলে কেবল ১৯৪৫ সালেই মোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই যুদ্ধের পরপরই সমগ্র ইউরোপ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়; এক অংশ হয় পশ্চিম ইউরোপ আর অন্য অংশে অন্তর্ভুক্ত হয় সোভিয়েত রাশিয়া। পরবর্তীতে এই রাশিয়ান ইউনিয়নই ভেঙে অনেকগুলো ছোট ছোট রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহের সমন্বয়ে গঠিত হয় ন্যাটো আর সমগ্র ইউরোপের দেশসমূহের সীমান্তরেখা নির্ধারিত হতে শুরু করে। ওয়ারস প্যাক্টের মাঝে অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহ নিয়ে দানা বেঁধে উঠে স্নায়ুযুদ্ধ। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বমঞ্চে অভিনব এক নাটকের অবতারণা করে।
 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। কিন্তু তবে এ নিয়ে একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে যা অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য। এই কারণটি যুদ্ধোত্তর সমযয়ে মিত্রশক্তির দেশসমূহের মধ্যে তোষণ নীতির মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায় যা নির্দেশক শক্তির ভূমিকা পালন করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি এবং জাপানের আধিপত্য ও সা¤্রাজ্যবাদকে দায়ী করে এই কারণটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে যার বিস্তারিত এখানে উল্লেখিত হচ্ছে। 
 
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি তার সম্পদ, সম্মান এবং ক্ষমতার প্রয় সবটুকুই হারিয়ে বসে। এর সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাধারার মূল কারণ ছিল জার্মানির হৃত অর্থনৈতিক, সামরিক এবং ভূমিকেন্দ্রিক সম্পদ পুণরুদ্ধার করা এবং পুণরায় একটি বিশ্বশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা। এর পাশাপাশি পোল্যান্ড এবং ইউক্রেনের সম্পদসমৃদ্ধ ভূমি নিয়ন্ত্রণে আনাও একটি উদ্দেশ্য হিসেবে কাজ করেছে। জার্মানির একটি জাতীয় আকাক্সক্ষা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপর সম্পাদিত ভার্সাই চুক্তি হতে বেরিয়ে আসার। এরই পেক্ষাপটে হিটলার এবং তার নাজি বাহিনীর ধারণা ছিল যে একটি জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে সংগঠিত করা সম্ভব হবে।
 
৪৪ দিনে ফ্রান্স দখল : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারে জার্মান বাহিনী মাত্র ৪৪ দিনে ফ্রান্স দখল করে নিয়েছিল। ফ্রান্স তা পূর্ব সীমান্তে  ম্যাজিনো লাইন নির্মান করে নিশ্চিত ছিল এটি তাদের দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা লাইন। ফরাসীরা মনে করতো জার্মানরা কখনো শ্রাজিনো লাইন অতিক্রম করতে পারবে না। কিন্তু জার্মানীর দুর্ধর্ষ পাঞ্জার ডিভিশন ম্যাজিনো লাইন পাশ কাটিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস দখল করে নেয়। ফ্রান্সের পতনের জন্য জার্মানের সামরিক কৃতিত্ব যতটুকু তার চেয়ে বেশি অবদান ছিল ফরাসী সরকারের ভেতরে লুকিয়ে থাকা বিশ্বাসঘাতকরা। ফ্রান্সের পতনের আরও একটি কারন হলো ফরাসী, বৃটিশ,বেলজিয়াম এবং ওলন্দাজ মিত্রবাহিনীর সমন্বয় হীনতা। ভিন্ন ভিন্ন কমা-ের আওতায় থাকায় এই সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সামরিক অপারেশন ও কৌশল প্রণয়নেও ছিল তাদের তাদের বিস্তর মতবিরোধ। যুদ্ধ শুরুর আগে বৃটিশ বাহিনীর দেয়া প্রতিশ্রুতি ছিল ফ্রান্স আক্রান্ত হলে তাদের বোমারু বিমানগুলো ফ্রান্স বাহিনীকে সহয়তা এবং জার্মানীদের  আক্রমণ প্রতিহত করতে এগিয়ে আসবে। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বৃটেন এগিয়ে আসেনি।  
 
ম্যাজিনো লাইন নির্মাণ করা হয়েছিল প্রথম মহাযুদ্ধের পর। এটি ইতালী এবং জার্মান সীমান্ত বরাবর। পশ্চিমের সিডান থেকে পূর্বদিকে ওয়াইসেমবার্গ পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় দেড় মাইল বিস্তৃত এ প্রতিরক্ষা লাইনটি কংক্রিটের শক্ত বাঙ্কার, ট্যাংক বিধ্বংসী ফাঁদ, কামান, মেশিনগান চৌকি এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা বুহ্যের সমন্বয়ে গঠিত। 
ড্রেসডেনে মিত্রবাহিনীর ১৩’শ বোমাবর্ষণ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে ক’টি ট্রজেডির সৃষ্টি হয় জর্মানের ড্রেসডন শহরে ব্রিটিশ ও আমেরিকান বোমাবর্ষণ ছিল তার একটি। সামরিক  দিক থেকে গুরুত্বহীন এ শহরে বোমাবর্ষণ করার কোন যুক্তি ছিল না। যুদ্ধও তখন প্রায় শেষ। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ফেব্রুয়ারি ৭৭৩ টি বৃটিশ আ্যভরো ল্যাঙ্কাসটার্স বোমারু বিমান ড্রেসডেনে বোমাবর্ষণ করে। সাড়ে ৬ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত শহরটিতে আরও প্রায় সমসংখ্যক শরণার্থী ছিল। মার্কিন বিমান বাহিনীরও ৫শ ২৭টি ভারি বোমারু বিমান মাট তিন দফা বোমা বর্ষণ করে। এসব বিমান থেকে ৩ হাজার ৩শ টন বোমা ফেলা হয়। এসব বোমার অধিকাংশ ছিল আগুণে বোমা। একের পর এক বোমা নিক্ষেপের ফলে বিশাল অগ্নিপি- সৃষ্টি হয়। শহরের তাপমাত্রা ১৮’শ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছে। এতে নিহত হয় প্রায় ৪২ হাজার মানুষ।
 
কোবরিনের যুদ্ধ (১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯) : মানচিত্রে জার্মান দ্বিতীয় মোটোরাইজড ডিভিশনের অগ্রযাত্রা এবং পোলিশ বাহিনীর পিছু হটা : নাৎসি বাহিনীর পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিষ্ক্রিয় রাখার জন্য জার্মানী অনাক্রমণ চুক্তি করে। অন্যদিকে ব্রিটেন ও ফ্রান্স পোল্যান্ডের সাথে সহায়তা চুক্তি করে। ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড অভিযান শুরু হল। ৩রা সেপ্টেম্বর মিত্রবাহিনী জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল এবং শুরু হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
 
প্রথম দিনই জার্মান ঝটিকা বাহিনী পোল্যান্ডকে ছিন্নবিছিন্ন করে দিল। ফরাসি ও ব্রিটিশ বাহিনী সাহায্য করবার সুযোগ পেল না। এটি পশ্চিমের বিশ্বাসভঙ্গতা হিসেবে পরিচিত। ১৭ই সেপ্টেম্বর গোপন সমঝোতা অনুসারে সোভিয়েত বাহিনীও আক্রমণে যোগ দিল। পরদিনই পোলিশ কর্তাব্যক্তিরা দেশ ছাড়লেন। ওয়ারস পতন হলো ২৭শে সেপ্টেম্বর। শেষ সেনাদল কক্ দূর্গে যুদ্ধ করে ৬ই অক্টোবর পর্যন্ত।
 
জার্মানী বনাম মিত্রপক্ষীয় যুদ্ধ চলাকালীন সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিনল্যান্ড আক্রমণ করে শীতকালীন যুদ্ধের সূচনা করল। এর আগেই লিথুনিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়ায় সোভিয়েত সৈন্য প্রবেশ করে ক্ষতিপূরণসহ একটি অনুরূপ প্রস্তাবে ফিনল্যান্ড রাজী না হওয়ায় ৩০শে নভেম্বর ১৯৩৯ সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিনল্যান্ড আক্রমণ করল। ফিন লোকবল খুবই কম হলেও তাদের দেশরক্ষার ইচ্ছা ছিল অনেক বেশী। স্তালিন একটি নিজস্ব ঝটিকা যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্ত প্রতিটি ফ্রন্টে তার বাহিনী প্রতিহত হয়। ১৪ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে বহিষ্কার করা হলো।
 
নতুন বছরের ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে সোভিযয়েত বিমান, ট্যাঙ্ক ও স্লেজবাহিত সেনাবাহিনী একযোগে ফিনদের প্রতিরক্ষা রেখায় আক্রমণ চালানো শুরু করে। ১৫ দিন পর অবশেষে তারা একটি ফাঁক তৈরি করতে পারল। ফলে যুদ্ধের ভাগ্য পরিষ্কার হয়ে গেল। ৬ই মার্চ ১৯৪০ ফিনল্যান্ড শান্তির জন্য আবেদন করল। সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের আগের দাবী অনুযায়ী লেলিনগ্রাদের কাছাকাছি বেশকিছু এলাকার মালিকানা ছেড়ে দিতে হয় ফিনল্যান্ডকে। এ যুদ্ধে ২ লাখ ফিন সৈন্যের মধ্যে ৭০ হাজার  সৈন্য নিহত হয়। যুদ্ধ থেকে স্তালিনের সেনাদল গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শিক্ষা লাভ করলো। অন্যদিকে সোভিয়েত শক্তি সম্পর্কে হিটলারের ভ্রান্ত নিম্ন-ধারণা তৈরি হয়-যা পরবর্তীতে জার্মানীর রাশিয়া আক্রমণে প্রভাব ফেলে।
 
নরওয়ে ও ডেনমার্ক : নরওয়ে বিশ্বযুদ্ধে জডড়িয়ে পড়ে তার ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য। সুইডেনের কিরুণা খনি থেকে গরমকালে বাল্টিক সাগর দিয়ে এবং শীতকালে নরওয়ের বরফমুক্ত নারভিক বন্দর ও নরওয়ের রেলপথ দিয়ে লোহা চালান যেত জার্মানীতে। প্রথমে হিটলার নরওয়েকে নিরপেক্ষ থাকতে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওদিকে মিত্রপক্ষ নারভিকের ঠিক বাইরের সমুদ্রে মাইন পেতে রাখার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনাটি ফাঁস হয়ে গেলে হিটলার ফ্রান্স আক্রমণের ইচ্ছা স্থগিত রেখে নরওয়ে অভিযানের নির্দেশ দিল। ১৯৪০ সালের ৯ই এপ্রিল একই সাথে নরওয়ে ও ডেনমার্কে আগ্রাসন শুরু হল সুইডেনের সাথে যোগাযোগের সুবিধার্থে ।
 
একদিকে নারভিকসহ গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলি দখল করে নিল জার্মান বাহিনী। অন্যদিকে বিমানবন্দরগুলিতে অবতরণ করলো প্যারাশ্যুট বাহিনী। এরপর বিমানবন্দর দখল করে সেখান থেকে অতর্কিতে শহরে প্রবেশ করলো জার্মান সেনা। ডেনমার্ক বিনাবাধায় আত্মসমর্পণ করলেও নরওয়ে লড়াই করতে লাগলো। ১৪ই এপ্রিল মিত্রবাহিনী নামলো নরওয়েতে। কিন্ত মে মাসেই পিছু হটলো তারা। নারভিকে জার্মানরা পাঁচগুণ বেশী শত্রুর সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল ২৭শে মে পর্যন্ত। কিন্ত ততদিনে ফ্রান্সের পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় মিত্রসৈন্যদের ফিরিয়ে নিতে হল নরওয়ে থেকে। নরওয়ে বাহিনী আত্মসমর্পণ করলো এবং রাজা সপ্তম হাকোন ব্রিটেনে আশ্রয় নিলেন। জার্মানীর জন্য নরওয়ে আর্কটিক সাগর এবং ব্রিটেনের নিকটবর্তী একটি দরকারী নৌ ও বিমান ঘাঁটি হিসেবে কাজে দিল।
 
ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ : ১০ই মে ১৯৪০ একসাথে চারটি দেশ আক্রমণ করে জার্মানী। ফরাসিরা ভেবেছিল আক্রমণ আসবে ফ্রান্স জার্মানী সীমান্তের রণরেখা ম্যাগিনোট লাইনের ওপর। অথবা বেলজিয়ামের ভিতর দিয়ে আরদেন হয়ে। তারা ভেবেছিল জার্মানীর প্যানজার বাহিনী আরদেনের জঙ্গল ভেদ করে আসতে পারবে না। ১৪ই মে নেদারল্যান্ডের পতন ঘটলো। ১৪ই মে আরদেন থেকে জার্মান বাহিনী বেরিয়ে এসে দিশেহারা মিত্র সেনাদের ছিন্নবিছিন্ন করে প্রবল বেগে এগোতে থাকল। ডানকার্ক বন্দর দিয়ে তড়িঘড়ি ফরাসি ও ব্রিটিশ অভিযান বাহিনীর সেনা পশ্চাদপসরণ শুরু হলো। ২৬শে মে থেকে ৪ঠা জুন ইতিহাসের বৃহত্তম সেনা অপসারণের কাজ শেষ হলো। তবে ফেলে আসতে হলো বেশীরভাগ যন্ত্রাদি। এরমাঝে ২৭শে মে বেলজিয়ামের পতন হলো।
 
১০ই জুন ইতালিও যুদ্ধ ঘোষণা করল। তবে তারা আক্রমণ শুরু করে ২০শে জুন থেকে। ফরাসি সরকার প্রথমে তুর ও পরে বোর্দোতে সরে গেল। ১৪ই জুন প্যারিসের পতন ঘটল। ১৬ই জুন প্রধানমন্ত্রী রেনো পদত্যাগ করলেন ও তার বদলে এলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নায়ক পেত্যাঁ। ২২শে জুন জার্মান-ফরাসি এবং ২৪শে জুন জার্মান-ইতালীয় শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফ্রান্সের বেশিরভাগ এলাকা জার্মানী নিয়ে নেয়। অল্প কিছু জায়গা জুড়ে পেত্যাঁ একটি নিরপেক্ষ কিন্তু জার্মানীর প্রভাবাধীন সরকার গঠন করেন। এটি ভিশি ফ্রান্স নামে পরিচিত হয়।
 
বাল্টিক অঞ্চল : পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের জন্য রুমানিয়ার প্লোইস্তি তেলের খনি হিটলারের প্রয়োজন ছিল। ১৯৪০ সালে জার্মানী-রুমানিয়া তেল-অস্ত্র চুক্তি হল। হাঙ্গেরি ও রুমানিয়ার মতবিরোধ ঘটায় জার্মানী মধ্যস্থতা করে। রুমানিয়ার জনগণ এতে আন্দোলন শুরু করায় রাজা ২য় ক্যারল ছেলে মাইকেলের কাছে মুকুট হস্তান্তর করলেন ও সেনাপ্রধান আন্তনেস্কু জার্মান সেনা আহ্বান করলেন। ১২ই অক্টোবর ১৯৪০ বুখারেস্টে জার্মান সৈন্য অবতরণ করে। এতে কুটনৈতিক ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিরক্ত মুসোলিনি ২৮শে অক্টোবর, ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে আলবেনিয়া থেকে গ্রীস আক্রমণ করলেন। কিন্তু গ্রীকরা যে শুধু প্রতিহত করল তাই না, উল্টো ডিসেম্বরের মধ্যে আলবেনিয়ার এক-তৃতীয়াংশ দখল করে ফেলল। উপরন্তু ক্রীটে ব্রিটিশ সৈন্য নামল। তুরস্কও সৈন্যসমাবেশ করে রাখল। আপাত-নিরপেক্ষ বুলগেরিয়া এবং যুগোস্লাভিয়াও বেঁকে বসল।
 
হিটলার দ্রুত হাঙ্গেরি, রুমানিয়া ও স্লোভাকিয়াকে অক্ষচুক্তিতে টেনে নিল। বুলগেরিয়ায় জার্মান সৈন্য নামল ২রা মার্চ। যুগোস্লাভিয়ার যুবরাজ পল অক্ষে যোগ দিলেন ২৭শে মার্চ। দু'দিন পর জেনারেল সিমোভিচের নেতৃত্বে রাষ্ট্রবিপ্লব ঘটে এবং সিংহাসনে আরোহন করেন ১৭ বছর বয়সী রাজা ২য় পিটার। রাষ্ট্রীয় নীতিরও পরিবর্তন ঘটে। ৬ই এপ্রিল একই দিনে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ এবং বুলগেরিয়া ও অস্ট্রিয়া দিয়ে সৈন্য পাঠিয়ে জার্মানী গ্রিস ও যুগোস্লাভিয়া আক্রমণ করল। ১৭ই এপ্রিল যুগোস্লাভিয়া ও ২২শে এপ্রিল গ্রিস আত্মসমর্পণ করে। এরপর ক্রীট দখল করা হয়। যুগোস্লাভিয়াকে খন্ড-বিখন্ড করে অক্ষশক্তিরা ভাগ করে নেয়। তবে পুরো যুদ্ধ জুড়ে দ্রজা হিমাজলোচির নেতৃত্বে সেন্টিক দল এবং জোসেফ টিটো'র নেতৃত্বে কমিউনিস্ট দল গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে যায়।
 
সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে এ সময়ে অগণিতসংখ্যক লোক শরণার্থী হয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে একমাত্র ইউরোপেই ৪০ মিলিয়নেরও অধিক লোক শরণার্থী ছিল। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তি জাতিসংঘ ত্রাণ ও পুণর্বাসন প্রশাসন (ইউএনআরআরএ) গঠন করে। যার প্রধান কাজ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন দেশসহ ইউরোপ ও চীন থেকে আগত শরণার্থীদেরকে সহায়তা করা। তাদের নিয়ন্ত্রণে ও প্রত্যক্ষ সহায়তায় ৭ মিলিয়ন লোক নিজ বাসভূমিতে ফিরে যায়। কিন্তু উদ্বাস্তু এক মিলিয়ন লোক মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়।
 
বিশ্বযুদ্ধের শেষ মাসে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন জার্মান বেসামরিক নাগরিক পূর্ব প্রুশিয়া, পোমারানিয়া এবং সিলেসিয়া রাজ্য থেকে রেড আর্মির প্রচন্ড আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ম্যাকলেনবার্গ, ব্রান্ডেনবার্গ এবং স্যাক্সনিতে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নেয়।
 
পটসড্যাম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মিত্রশক্তি অনুমোদন না করায় যুগোস্লাভিয়া এবং রোমানিয়ায় অবস্থানরত হাজার হাজার জাতিগত জার্মানদেরকে সোভিয়েত ইউনিয়নে দাস শ্রমের জন্য ফেরত পাঠানো হয়। বিশ্বের ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বেশী শরণার্থী স্থানান্তর প্রক্রিয়া। ১৫ মিলিয়ন জার্মানদের সবাই এতে অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। এছাড়াও, দুই মিলিয়নেরও অধিক জার্মান বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে বিতাড়িত হয়ে প্রাণ হারান।
 
১৯৪০ এর জুন মাসে ফ্রান্সের পতন হলে সমগ্র ফ্রান্স দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়; একদিকে ভিশি সরকার (যেটা কাগজপত্রে নিজেদের একটি নিরপেক্ষ সরকার হিসেবে ঘোষণা করে) ও অন্যদিকে ‘মুক্ত ফ্রান্স’ (যা অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যায়)। মিত্রশক্তি মুক্ত ফ্রান্স সরকারকে আইনগত স্বীকৃতি দেয় এবং স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করে।
 
পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা বা হত্যাকা- ঘটে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে। ১৯৪৫-এর ৬ আগস্ট হিরোশিমায় এবং ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে আণবিক বোমা নিক্ষেপ করে আমেরিকা। তাৎক্ষণিক নিহত হয় ১ লাখ ২০ হাজার লোক এবং পরে প্রাণ হারায় তারও দ্বিগুণ।  ৬ আগস্ট সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে হিরোশিমায় পৃথিবীর প্রথম  আণবিক বোমা নিক্ষিপ্ত হয়। মহাপ্রলয় থেকে একটি ঘড়ি রক্ষা পায়। ঘড়িটির কাটা ৮টা ১৫ মিনিটে থেমে যায়। আনবিক বোমা বিস্ফেরণের পর ১৫ আগস্ট জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে।
 
ব্যাটল অব বার্লিন : জার্মানীর রাজধানী বার্লিনের পতনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয়। এখানকার লড়াই ছিল মূলতঃ নৎসীবাদী ও কমিউনিজমের মধ্যকার মর্যাদার লড়াই। ১৯৪৫-এর প্রথমার্ধে দুটি ফ্রন্ট থেকে জার্মান সৈন্যরা ক্রমাগত পিছু  হটছিল। পিছাতে পিছাতে এক সময় তারা নিজেদের ভূখন্ডে এসে ঠেকে। একদিকে, সোভিয়েত লাল ফৌজ এবং অন্যদিকে, পশ্চিমা মিত্র জোট উভয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করছিল। তবে এক্ষেত্রে লাল ফৌজ ছিল অগ্রগামী। পশ্চিমা জোট বার্লিনে ছত্রী সেনা অবতরণের একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। কিন্তু পরে সে পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়। মার্কিন  প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট  হিসেব করে দেখেছিলেন যে, পশ্চিমা মিত্রবাহিনীর ছত্রী সেনারা বর্লিন অবতরণ করলে কমিউনিস্ট পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের সংঘাত অনিবার্য। এ পরিস্থিতিতে জার্মানীর পতন ঘটার  পরিবর্তে পতন ঘটবে পশ্চিমা মিত্র জোটের। তাই তিনি বৃথা রক্তক্ষয়ের ঝুঁকি নেন নি। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের মূল হোতা হিটলারের আত্মহত্যা এবং রাজধানী বার্লিনের পতনের পর জার্মানীরা আত্মসমর্পন করে । 
 
জার্মানী পরাজিত হলে দেশটিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে পৃথক পৃথক মতাদর্শের দুটি দেশ করা হয়। পূর্ব জার্মানীতে সোভিয়েত মতাদর্শ বা কমিউনিজম এবং পশ্চিম জার্মানীতে পশ্চিমা ধাঁচের বুর্জোয়া গণতন্ত্র কয়েম করা হয়। ঐতিহাসিক বার্লিন নগরীর পশ্চিমাংশ অখ্যাত বন-কে করা হয় পশ্চিম জার্মানীর রাজধানী এবং সোভিয়েত অধিকৃত বার্লিন হয় পূর্ব জার্মানীর রাজধানী। সোভিয়েত সৈন্যরা জার্মানীর রাজধানী বার্লিনকে পদানত  করে মহানগরীর মাঝ বরাবর একটি দুর্ভেদ্য দেয়াল নির্মান করে (১৯৮৯-এর ৯ অক্টোবর বার্লিন দেয়ালের পতন হয় এবং দুই জার্মান একত্রিত হয়)।
 
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৪৫ খ্রিস্টব্দের ১ সেপ্টেম্বর এবং শেষ হয় ১৯৪৫-এর ২ সেপ্টেম্বর। যুদ্ধ চলে ৬ বছর ১ দিন। 
 
মিত্রশক্তিতে ছিল : সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র), ইংল্যান্ড (যুক্তরাজ্য), চীন, ফ্রান্স, পোলান্ড, নেদারল্যান্ড (হল্যান্ড), বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, যুগোশ্লাভিয়া, নিউজিল্যান্ড, চেকোশ্লাভিয়া, নরওয়ে, ইথিওপিয়া, ব্রাজিল, ডেনমার্ক,  লুক্সেমবার্গ, মেক্সিকো। অক্ষশক্তির দেশ সমূহ : জার্মানি, ইতালী, জাপান, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, ফিনল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ইরাক।
 
হাবিবুর রহমান স্বপন                                                 
(সাংবাদিক, কলামিস্ট)
মোবা : ০১৭১০৮৬৪৭৩৩
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com